সোমবার বেশি রাতের দিকে ইরান এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘড়িতে তখন রাত প্রায় সাড়ে ৩টে (ভারতীয় সময়)। ইরান বা ইজ়রায়েল নয়, ট্রাম্পই সর্বপ্রথম ঘোষণা করেন সংঘর্ষবিরতির কথা, ঠিক যেমনটা হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির ক্ষেত্রে। ঘটনাচক্রে, ট্রাম্পের সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার আগে সোমবার ছিল পশ্চিম এশিয়ার এক ঘটনাবহুল রাত। ট্রাম্পের সমাজমাধ্যম পোস্টের পাঁচ ঘণ্টা আগেই পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরান। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ওই হামলার নিন্দাও জানায়।
ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকা হামলা চালানোর পর থেকেই ওয়াশিংটনকে লাগাতার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল তেহরান। পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিগুলি যে নিরাপদ নয়, এমন আভাসও মিলেছিল ইরানের হুঙ্কারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন সরকারি আধিকারিক এবং তাঁদের পরিবারকে লেবানন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে আমেরিকা। পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম দেশ লেবানন। লেবাননের একটি অংশে ছড়িয়ে রয়েছে ইরানের ‘মদতপুষ্ট’ সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা। উত্তেজনার মাঝে তেহরান থেকে ইরানের সাধারণ নাগরিকদের সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দেয় ইজ়রায়েলি সেনাও। সোমবার রাতে হামলাও হয় তেহরানে। উত্তেজনা কমার কোনও লক্ষণই দেখা যায়নি সোমবার রাতে।
এরই মধ্যে সোমবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কাতারের আল উদেইদে আমেরিকার বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। কাতারের রাজধানী দোহা থেকে এই সামরিক ঘাঁটিটির দূরত্ব মাত্র ৩২ কিলোমিটার। কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পরে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। লেবানন, সৌদি আরবের মতো দেশগুলি এই হামলার নিন্দা জানায়। তাতেও দমেনি তেহরান। ইরানের সামরিকবাহিনী জানিয়ে দেয়, পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকার হামলার জবাব দিতেই কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে তারা। নতুন করে হামলা হলে তারও জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় ইরান।
যদিও ইরানের এই হামলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি ট্রাম্প। ইরানি হানার প্রায় ৩ ঘণ্টা পরে (ভারতীয় সময়ে রাত দেড়টার কিছু আগে) সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। ইরানের হামলাকে একেবারেই ‘দুর্বল’ বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি। ট্রাম্প জানান, ইরানের থেকে এমন দুর্বল কিছু পদক্ষেপই আশা করা হচ্ছিল। তিনি আরও জানান, মোট ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইরান। তার মধ্যে ১৩টিই ধ্বংস করা হয়েছে। একটি ফাঁকা জায়গায় পড়ছিল, তাই সেটি আটকানো হয়নি। ইরানের হামলায় কোনও মার্কিন বা কাতারের নাগরিক আহত হননি বলেই দাবি ট্রাম্পের।
আরও পড়ুন:
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই পোস্টে তিনি লেখেন, “আমি ইরানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের আগে থেকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য। ফলে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। হয়তো এ বার ইরান আঞ্চলিক শান্তি এবং সম্প্রীতির দিকে এগোতে পারে। ইজ়রায়েলকেও আমি একই কথা বলব।” যদিও এই পোস্টের কোনও ব্যাখ্যা পরে আর ট্রাম্প দেননি। ফলে ইরান তাদের ‘জানিয়ে দিয়েছিল’ বলতে ট্রাম্প কী বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।
ইরানকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে এই পোস্টটিরও দু’ঘণ্টা পরে ইরান এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তবে সেই সংঘর্ষবিরতি কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। আমেরিকার দাবি, এই সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করতে কাতারও সাহায্য করেছে। আমেরিকার তরফেই কাতারকে অনুরোধ করা হয়েছিল ইরানের সঙ্গে কথা বলার জন্য। কাতারকে জানানো হয়, আমেরিকা ইতিমধ্যে ইজ়রায়েলকে রাজি করিয়ে নিয়েছে। সেইমতো কাতার ইরানের সঙ্গে কথা বলে এবং তার পরেই এই সাফল্য আসে বলে দাবি ওয়াশিংটনের।
যদিও সংঘর্ষবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা উড়িয়ে দিয়ে ইরান মঙ্গলবার ভোরে (ভারতীয় সময় সকাল ৬টা নাগাদ) জানিয়ে দেয়, সংঘর্ষবিরতি নিয়ে কোনও সমঝোতা হয়নি। কখন চূড়ান্ত সংঘর্ষবিরতি হবে, তা নিয়ে ইরানের সামরিক বাহিনী পরে সিদ্ধান্ত নেবে। এর পরে মঙ্গলবার সকালেও ইরান এবং ইজ়রায়েল দু’পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হানায় ইজ়রায়েলে চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আবার ইরানেরও দাবি, তাদের ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রাম্প-ঘোষিত যুদ্ধবিরতিতে ইজ়রায়েল সম্মতি জানিয়েছে। তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত ইরানের অবস্থান স্পষ্ট হয়নি।