শেখ হাসিনাকে নিয়ে রায়ের আগের রাতে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বাংলাদেশে। রবিবার রাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার বাড়ির কাছে ককটেল (এক জাতীয় বোমা) বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণ হয়েছে ঢাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র কার্যালয়ের সামনেও।
কে বা কারা এই ককটেল হামলা চালিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সোমবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাসিনাকে নিয়ে রায়ঘোষণা করবে। তার আগে রবিবার থেকে দু’দিন ব্যাপী বাংলাদেশ জুড়ে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। বর্তমানে এই দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। শুরু হয়েছে ধরপাকড়ও। এরই মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বোমা বিস্ফোরণ ঘটতে শুরু করেছে।
ঢাকার সেন্ট্রাল রোড এলাকায় বাড়ি অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন, জলবায়ু এবং জলসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানাচ্ছে, রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ (ভারতীয় সময় অনুসারে) তাঁর বাড়ির সামনে দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এক দল দুষ্কৃতী তাঁর বাড়ির সামনে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। এর কিছু ক্ষণ পরেই রাত ৯টা ১০ মিনিট নাগাদ ঢাকার বাংলামোটর এলাকায় এনসিপির কার্যালয়ের সামনেও ককটেল বিস্ফোরণ হয়। বস্তুত, হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদেরই একাংশ এই এনসিপি দলটি গঠন করেছেন।
সন্ধ্যায় ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকাতেও দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিস্ফোরণগুলিতে কোনও হতাহতের খবর মেলেনি। তবে রবিবার সকালে ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডের উপর একটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। তাতে একজন জখম হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। পর পর এই ঘটনাগুলির জেরে ইতিমধ্যে বাংলাদেশি জনতাকে সতর্ক করে দিয়েছে পুলিশ। কোনও রকম বেচাল দেখলে গুলি চালানোরও নির্দেশ দিয়ে রেখেছে ঢাকা পুলিশ।
আরও পড়ুন:
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মুহাম্মদ সাজ্জাত আলী ‘প্রথম আলো’কে বলেন, যাঁরা মানুষ এবং পুলিশ সদস্যদের উপর ককটেল হামলা চালাবেন এবং যানবাহনে আগুন দেবেন, আইনসম্মত ভাবেই তাঁদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একাধিক পুলিশকর্তা ‘প্রথম আলো’কে জানান, সরকারি ভবন, ব্যাঙ্ক বা কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হামলা বা অগ্নিসংযোগের চেষ্টা হলে তা প্রতিহত করতে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।
গত কয়েক দিন ধরেই ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গাড়িতে, বাসে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। জায়গায় জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগও উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের দিন ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। তার কয়েক দিন আগে থেকে এই ধরনের ঘটনার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শনিবার রাত থেকে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। শনিবার রাত থেকে এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ১৮ জন কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা পুলিশ। মোতায়েন করা হয়েছে আধাসেনাও। ঢাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্য প্রান্তগুলিতেও পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। গোপালগঞ্জে ৭০০-র বেশি পুলিশকর্মী এবং ১০০ আধাসেনা (বিজিবি) মোতায়েন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ (জুলাই আন্দোলনের সময়ে হত্যাকাণ্ড)-এর অভিযোগ রয়েছে সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। প্রাক্তন পুলিশকর্তা এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন। এই মামলায় মোট ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষীদের তালিকায় রয়েছেন পুলিশের রবার বুলেটে বিদ্ধ হয়ে মৃত আবু সাঈদের পিতাও।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মুহাম্মদ গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলার রায় জানাবে। এই মামলার শুনানি পর্বের শেষে সমাপ্তিসূচক বক্তব্যে (ক্লোজ়িং স্টেটমেন্টে) হাসিনা এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) দাবি জানান বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। অন্য দিকে তিন অভিযুক্তেরই রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাঁদের নির্দোষ দাবি করে বেকসুর খালাসের আর্জি জানিয়েছেন। ফলে সোমবার আদালত হাসিনাকে নিয়ে কী রায় দেয়, সে দিকে নজর রয়েছে সকলের। এই মামলার রায়ঘোষণা এজলাস থেকে সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সরকারি আইনজীবী গাজী মুহাম্মদ তামিম জানান, রায়ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ না-করলে বা গ্রেফতার না-হলে, এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যেতে পারবেন না হাসিনা। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনেই তিনি আটকে যাবেন বলে দাবি তামিমের।