একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের নির্বাচন এবং জুলাই সনদ কার্যকরের উদ্দেশ্যে গণভোটের আয়োজনের বার্তা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। কিন্তু তাঁর সেই ‘ভারসাম্যের কৌশল’ নাকচ করে এ বার সরাসরি হুঁশিয়ারি দিল ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লা মুহাম্মদ তাহেরের অভিযোগ, একই সঙ্গে সাধারণ নির্বাচন এবং গণভোটের আয়োজন আদতে ‘সংস্কারকে গুরুত্বহীন করার ফাঁদ’! তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (ভোটে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ) তৈরির ব্যাপারে আদৌ মনোযোগী নয়। সরকারের কয়েক জন উপদেষ্টার সহযোগিতায় একটি বিশেষ দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে দলীয় প্রশাসনে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে।’’ সরাসরি নাম না করলেও এ ক্ষেত্রে তিনি নিশানা করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বিএনপি-কে।
আরও পড়ুন:
জামাত নেতার দাবি, একই সঙ্গে জোড়া নির্বাচন হলে মানুষের মনোযোগের অভাবে গণভোটে যদি ভোট কম পড়ে, তা হলে যাঁরা সংস্কার বিরোধী তাঁরা বলবেন, যেহেতু ভোট কম পড়েছে, জনগণ গণভোট চায়নি বলে বিবেচিত হোক। এর মাধ্যমে তাঁরা সংস্কার থেকে সরে আসবেন। প্রসঙ্গত, জামাত নেতৃত্ব গত কয়েক মাস ধরে দাবি তুলছেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন করতে হবে বাংলাদেশে! অন্য দিকে, বিএনপি-র দাবি, কোনও অবস্থাতেই জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগে সংস্কার প্রস্তাব সংক্রান্ত গণভোট করানো চলবে না। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইউনূস জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলির মতামত নেওয়ার পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণভোটের নির্ঘণ্ট স্থির করার ভার অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছিল। তার পরেই একসঙ্গে দু’টি ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:
গত ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিকল্প দু’টি সুপারিশ জমা দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথমটিতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাশ হলে আগামী জাতীয় সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। নির্ধারিত সময়ে সংসদ এটি করতে ব্যর্থ হলে সংস্কার প্রস্তাবগুলি স্বয়ংক্রিয় ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে। দ্বিতীয় সুপারিশটিও প্রায় একই। তবে সেখানে বলা হয়েছে, ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করা হবে। না হলে কী হবে, তার কোনও উল্লেখ নেই।
আরও পড়ুন:
চলতি বছরের ৫ অগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের বর্ষপূর্তিতে ‘৩৬ জুলাই উদ্যাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন ইউনূস। ২৮ দফার ওই ঘোষণাপত্র হল, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের একটি দলিল, যার মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মুজিবুর রহমান এবং হাসিনার আমলে ‘আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারের’ পাশাপাশি ওই সনদে সমালোচনা করা হয়েছে দুই সেনাশাসক, জিয়াউর রহমান (বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা) এবং হুসেন মহম্মদ এরশাদের (জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা) জমানারও। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে ঘোষণার কথাও বলা হয়েছে ওই সনদে। যদিও তার রূপায়ণের পদ্ধতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এমনকি, ইউনূস সরকারের সমর্থক জামাত এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র বিরোধও প্রকাশ্যে এসেছে।