দক্ষিণ গাজ়ার খান ইউনিসে ত্রাণ নিতে গিয়ে ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হল। বুধবারের ঘটনা।
ত্রাণ বিতরণকারী সংগঠন গাজ়া হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ও স্থানীয় একটি হাসপাতাল বুধবার এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। ইজ়রায়েল-আমেরিকার সাহায্যপ্রাপ্ত সংগঠন জিএইচএফ জানিয়েছে, ১৯ জন পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। তাদের মতে, সশস্ত্র হামাস জঙ্গিরা ত্রাণ শিবিরে ঢুকে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চেয়েছিল। তার জেরেই ওই দুর্ঘটনা। গাজ়ার হামাস পরিচালিত প্রশাসন অবশ্য সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, জিএইচএফ পরিকল্পিত ভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, যার জেরে ওই দুর্ঘটনা। এখন নিজেদের অপরাধ ঢাকতে হামাসের উপরে তারা দায় চাপাচ্ছে। স্থানীয় নাসের হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ভিড়ে দমবন্ধ হয়ে ও প্রশ্বাসের সঙ্গে কাঁদানে গ্যাস ঢুকে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনাস্থলের একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, গাড়িতে শায়িত অন্তত ৬টি দেহ। তার মধ্যে কয়েক জন শিশু। এক শিশুর দেহ হাতে তুলে নিয়ে এক ব্যক্তি বলছেন, ‘‘ওদের কী দোষ ছিল? ত্রাণ নিতে গিয়ে কেন ওদের মরতে হল?’’ এই দুর্ঘটনায় জখম ২১ বছরের তরুণ মাহমুদ ফোজো জানিয়েছেন, ত্রাণ শিবিরের আশপাশে তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল। হাজার খানেক মানুষ যখন ভিড় করেছিলেন, তখন জিএইচএফ-এর নিরাপত্তা রক্ষীরা ওই চত্বরের দরজা বন্ধ করে দেয়। ফানেলের মতো সরু জায়গায় প্রবল ঠেলাঠেলি শুরু হয়। যাঁরা চাপ সামলাতে পারেননি বা পড়ে গিয়েছেন, তাঁরা ভিড়ে পিষে গিয়েছেন। আর এক সাক্ষী আহমেদ আবু ওমরা বলেন, ভিড়ের দিকে তাক করে পেপার স্প্রে, টিয়ার গ্যাস এমনকি গুলিও ছুড়েছে ত্রাণ সংস্থার নিরাপত্তা রক্ষীরা। যদিও অভিযোগ মানেনি জিএইচএফ।
মে মাস থেকে গাজ়ায় একটু একটু করে ত্রাণ বিতরণ শুরু হওয়ার পর থেকেই জিএইচএফ-এর বিরুদ্ধে ত্রাণবিলিতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। জিএইচএফ-এর বিরুদ্ধে ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষের উপরে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, গত ৬ সপ্তাহে মধ্য ও দক্ষিণ গাজ়ায় জিএইচএফ-এর চারটি ত্রাণবিলি কেন্দ্রে ৬৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই প্রথম তাদের ত্রাণ শিবিরে মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে জিএইচএফ। রাষ্ট্রপুঞ্জ ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ত্রাণবিলি কেন্দ্রে মৃত্যু হয়েছে ২০১ জনের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)