Advertisement
E-Paper

বাইকে চেপে এসে হাদিকে গুলি করে চম্পট! বাবা, মা, স্ত্রী, অন্য স্বজনেরা গ্রেফতার হলেও সেই ফয়সাল মাসুদ এখনও ফেরার

১৩ ডিসেম্বর ঢাকা পুলিশ জানায়, হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন এক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর নাম ফয়সাল করিম মাসুদ। পুলিশের দাবি, তিনি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৪৭
শরিফ ওসমান হাদি।

শরিফ ওসমান হাদি। — ফাইল চিত্র।

আগামী বছর বাংলাদেশ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। শুরু করেছিলেন প্রচারও। তার মাঝেই ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তার পরেই আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় ঢাকা-সহ চার শহর। শাহবাগে নামানো হয় র‌্যাব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনকারীরা হাদিকে বলছেন, ‘লড়াকু যোদ্ধা’। বিক্ষোভকারীদের দাবি, হত্যার বিচার চাই। গুলি করার পর থেকেই ফেরার অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ছাত্রলীগ নেতা ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে কী ভাবে এগিয়েছিল ঘটনাক্রম, কোথায় গেলেন ফয়সাল, কী ভাবে এগোয় তদন্ত?

১২ ডিসেম্বর

জুম্মার নমাজ সেরে ব্যাটারিচালিত রিকশায় চেপে ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন হাদি। সঙ্গে ছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁদের পিছনে ছিল একটি মোটরবাইক। দুপুর আড়াইটে নাগাদ বাইকে চালকের পিছনে বসে থাকা এক ব্যক্তি হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বলে অভিযোগ। তার পরেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান বাইক-আরোহীরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয় হাদিকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, একটি গুলি তাঁর কানের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার বাঁ পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। হাদিকে ‘লাইফ সাপোর্ট’-এ রাখা হয়। পরে তাঁকে ঢাকার অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঢাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে শুরু হয় তদন্ত।

১৩ ডিসেম্বর

ঢাকা পুলিশ জানায়, হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন এক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুল। পুলিশের দাবি, তিনি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের (আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন) নেতা। গত বছরের ১ নভেম্বর অস্ত্র-সহ ফয়সালকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গত ২১ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। অভিযুক্তকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ চালু হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেনান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিএনপি, জামায়াতেদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস।

১৪ ডিসেম্বর

তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলে, গুলি চালানোর ঘটনায় তিন জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। বাইকের পিছনে বসে গুলি চালান ফয়সাল। চালক ছিলেন আলমগীর শেখ। আলমগীর যুবলীগের সদস্য ছিলেন। হাদিকে যখন ধাওয়া করা হচ্ছিল, তখন ফয়সাল, আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন জাকির নামে এক ব্যক্তি। তদন্তকারীরা জানান, কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করে হামলাটি চালানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, তাঁরা ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। যে বাইকে চেপে গুলি চালানো হয়েছিল, তার মালিককে গ্রেফতার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে আটক করে র‌্যাব।

১৫ ডিসেম্বর

হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলে, দুই সন্দেহভাজন ফয়সাল ও আলমগীর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। তাঁরা ঢাকা থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছোতে পাঁচ বার যান বদলেছেন। তত দিনে মোট ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক, বান্ধবীকে পাঁচ দিনের হেফাজতে পাঠানো হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় ফয়সালের এক সহযোগীকে। তাঁর নাম মহম্মদ কবীর। ফয়সালের বোনের আগারগাঁওয়ের বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। সেই ব্যাগের ভিতর দু’টি ম্যাগাজিন এবং ১১টি গুলি মেলে বলে দাবি করেন তদন্তকারীরা। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘প্রতিরোধ সমাবেশ’ করে জামায়াতে, এনসিপি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে যোগ দেয়নি বিএনপি।

১৬ ডিসেম্বর

সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, হাদির শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। ফয়সালের শ্যালক ওয়াহিদের এক বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব জানায়, ফয়সালের বাবা, মাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। নুরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তিকেও আটক করা হয়। অভিযোগ, তিনি ফয়সালকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। ওই দিন পর্যন্ত হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়।

১৭ ডিসেম্বর

হাদির অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানায় হাসপাতাল। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হাদির জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ করেন। হাদির ওপর হামলার ঘটনায় র‍্যাব ও পুলিশ মোট ১৪ জনকে আটক ও গ্রেফতার করেছে বলে জানা যায়।

১৮ ডিসেম্বর

সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মৃত্যু হয় হাদির। তার পরেই আবার উত্তপ্ত হয় বাংলাদেশ। ইউনূস দেশবাসীকে শান্ত থাকার কথা বলেন। যদিও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও ভাঙচুর শুরু হয়।

Bangladesh Unrest Osman Hadi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy