Advertisement
E-Paper

রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের নামও, রাজাকারদের তালিকা বাতিল করলেন হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেই তালিকা বাতিল করার ঘোষণা করতে হল সরকারকে। কারণ পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা তো বটেই, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কয়েক জনের নামও রয়েছে পাক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৫
শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র

শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র

স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন রবিবার ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হক। তিন দিন যেতে না যেতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেই তালিকা বাতিল করার ঘোষণা করতে হল সরকারকে। কারণ পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা তো বটেই, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কয়েক জনের নামও রয়েছে পাক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে।

দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পরে সরকারের তরফ থেকে স্বীকার করা হচ্ছে, তাড়াহুড়ো করে এমন একটি সংবেদনশীল তালিকা করায় ভুল থেকে গিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞ জনেরা বলছেন, রাজাকারদের নামের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ঢুকিয়ে সরকারকে হাসির খোরাক করা তো বটেই, রাজাকারদের চিহ্নিত করে বিচারের গোটা প্রক্রিয়াটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। সরকার ও শাসক দলের মধ্যে গা-ঢাকা দিয়ে বসে থাকা স্বাধীনতা-বিরোধীরা এই কাজ করেছে বলে তাঁদের দাবি।

একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী বেশ কয়েক জন রাজাকার শিরোমণিকে বিচার করে প্রাণদণ্ড কার্যকর করেছে শেখ হাসিনার সরকার। ঢাকায় এ জন্য আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত বসিয়েছে সরকার। সেই আদালতে প্রধান প্রসিকিউটর ৮৯ বছরের গোলাম আরিফ টিপু ভাষা আন্দোলনে ভূমিকার জন্য দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান একুশে পদক পেয়েছেন। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর সদস্য হিসেবে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করেছেন। রাজাকারদের নামের তালিকায় সেই টিপুর নামও উঠেছে। স্বরাষ্ট্র, আইন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন ক্ষুব্ধ এই আইনজীবী। বলেছেন, তালিকা থেকে শুধু নাম বাদই নয়, গেজেট নোটিফিকেশন ও সব সংবাদপত্রে চোখে পড়ার মতো বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশবাসীকে তা জানাক সরকার। টিপু স্পষ্ট জানান, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের কিছু শক্তি রয়েছে সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকে, যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর নাম রাজাকারদের তালিকায় ঢুকিয়েছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরও বলছেন, রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়াকে হাস্যকর প্রতিপন্ন করার জন্যই এখনকার পাক-সহযোগীরা এই কাজ করেছে।

বরিশালে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুধীর চক্রবর্তীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন করে পাকিস্তানি বাহিনী। তাঁর স্ত্রী উষা চক্রবর্তী ও ছেলে মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তীর নাম রাজাকার হিসেবে সরকারি তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। সুধীর চক্রবর্তীর নাতনি পেশায় চিকিৎসক মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ব্যাপারটা বিস্ময়কর। স্বাধীনতার আগে থেকে আমাদের পরিবার প্রগতিশীল আন্দোলনে যুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। এই তালিকায় আমার বাবা ও ঠাকুমার নাম তোলাটা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়!’’ বরিশালের মেয়র নির্বাচনে শাসক দল আওয়ামি লিগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বামপন্থী বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নজর কেড়েছিলেন মনীষা। অনেকেরই দাবি, এ ভাবে রাজাকার সাজিয়ে সেই ‘অপরাধের’ শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই তালিকা বাতিলের দাবিতে বরিশালে বহু মানুষ রাস্তায় নামেন। তালিকার কপি পোড়ানো হয়।

এ ছাড়াও অন্তত ৩০ জন পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা বা স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের নাম রাজাকার তালিকায় দেখে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। হাসির খোরাক হয়েছে সরকার। শেষে কাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব ঘোষণা করেন, স্থগিত রাখা হল রাজাকারদের তালিকা। কবে ফের তা প্রকাশ করা হবে তা-ও জানানো হয়নি।

Razakars Sheikh Hasina Freedom Fighters Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy