E-Paper

ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে সমীকরণ বদলের ইঙ্গিত

এক সময়ে পশ্চিম এশিয়ায় সংঘাত হলেও আরব-ইজ়রায়েলি সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করত আমেরিকা। কিন্তু বর্তমানে সৌদি আরব, মিশর-সহ আরব দুনিয়ার দেশগুলির সঙ্গে পরোক্ষ সমঝোতা হয়েছে ইজ়রায়েলের।

প্রদীপকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রাক্তন ভাইস অ্যাডমিরাল, নৌসেনা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৫ ০৭:২০
(বাঁ দিকে) ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই এবং ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই এবং ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

ইজ়রায়েল আর ইরানের এই সংঘাত সহজে না-ও থামতে পারে।কারণ, এর পিছনে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও পশ্চিম এশিয়ার বদলে যাওয়া কূটনৈতিক সমীকরণরয়েছে। মনে রাখতে হবে, ইরান পাকিস্তান নয়। তাদের সভ্যতা বহু প্রাচীন। ইসলামাবাদের মতো তেহরান পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে সহজে নতিস্বীকার করবে বলে আমিমনে করি না।

এক সময়ে পশ্চিম এশিয়ায় সংঘাত হলেও আরব-ইজ়রায়েলি সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করত আমেরিকা। কিন্তু বর্তমানে সৌদি আরব, মিশর-সহ আরব দুনিয়ার দেশগুলির সঙ্গে পরোক্ষ সমঝোতা হয়েছে ইজ়রায়েলের। ফলে আরব দেশগুলি সরাসরি তেহরানের পাশে দাঁড়াতে রাজি নয়। তা ছাড়া শিয়া ইরান বরাবরই আরব দুনিয়ায় বিচ্ছিন্ন শক্তি। দীর্ঘ সময় ধরে এই সমঝোতা গড়ে তুলতে ইজ়রায়েল চেষ্টা করে গিয়েছে। পাশাপাশি তাদের নজর ছিল ইরানি পরমাণু প্রকল্পের উপরে। ওই প্রকল্পকে ইজ়রায়েল তাদের অস্তিত্বের সঙ্কট বলে মনে করে।

প্যালেস্টাইনের হামাস, লেবাননে ঘাঁটি গেড়ে থাকা হিজ়বুল্লার মতো ইজ়রায়েল-বিরোধী সংগঠনগুলিকে আর্থিক মদত দেয় ইরানই। ইজ়রায়েলের সঙ্গে সরাসরিসীমান্ত না থাকায় এই সংগঠনগুলির মাধ্যমে তাদের আঘাত হানছিল ইরান। ফলে ইজ়রায়েলে হামাসের হামলার পরে ইরানের দিকেও নতুন ভাবে নজর দেয় তেল আভিভ।মোসাদের চরচক্রের জাল যে ইরানে দীর্ঘদিন ধরেই ছড়ানো ছিল, তা ইরানের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি দেখে বোঝা যাচ্ছে।

ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা যে সব পক্ষেরই সময় নেওয়ার কৌশল ছিল, তা এখন স্পষ্ট। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোথাওই শান্তি ফেরানোর বিষয়ে তেমন সফল হননি। বরং এখন ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’-এর হুমকি দিচ্ছেন। তবে আমার মনে হয়, তেহরান পরমাণু প্রকল্পের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে যাওয়ায় ইজ়রায়েল অধৈর্য হয়ে উঠেছিল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ চাইলেও, তা খুব সহজ না-ও হতে পারে। ইরানে শাসক বদলের খেলা খেলতে পারলেও আমেরিকা-ইজ়রায়েল ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না-ও হতে পারে। কারণ শাসক বদলের পরে সে দেশে যে অস্থিরতা দেখা দেবে, তা সামলানো কঠিন। ইরানি বাহিনী চাইলে এখনও আমেরিকান বিমানবাহী জাহাজ ও তার ‘স্ট্রাইক গ্রুপ’কে আঘাত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কি আমেরিকার মুখ পুড়বে না? মুসলিম দুনিয়ায় এখনও পাকিস্তান আমেরিকার হয়ে অনেক কাজ করে। পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির বর্তমানে আমেরিকায়। ফলে এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকা কী হবে, তা-ও দেখার।

ইরান ইজ়রায়েলের চেয়ে আয়তনে অনেক বড়। ফলে অস্ত্র মজুত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত গভীরতা (স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ) ইজ়রায়েলের অনেক কম। তাই অস্ত্রের সম্ভার প্রায় একই হলেও শত্রুর হামলার মুখে ইজ়রায়েল বেশি বেকায়দায় পড়তে পারে। তবে প্রযুক্তিগত ভাবে ইজ়রায়েল এগিয়ে। পাশাপাশি হরমুজ় প্রণালী দিয়ে তেল সরবরাহে যদি ইরান সমস্যা তৈরি করে, সব তেল আমদানিকারী দেশই সঙ্কটে পড়বে। বাড়তে পারেতেলের দামও।

পশ্চিম এশিয়ায় এই সংঘাত ওই এলাকার সমীকরণ আরও অনেকটাই বদলে দেবে বলে আমি মনে করি।

অনুলিখন: অনঘ গঙ্গোপাধ্যায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Israel Iran War Pakistan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy