Advertisement
১৮ মে ২০২৪

রাতের রাজপথ গাইছে গণতন্ত্রের জয়গান, ‘উই ওয়ান্ট ডেমোক্রেসি!’

হাততালি দিয়ে গান গাইতে গাইতে ভিড়টা চলেছে। হাতে জাতীয় পতাকা। গলায় স্লোগান, ‘উই ওয়ান্ট ডেমোক্রেসি!’ মাঝরাত পেরিয়ে গিয়েছে। ঘণ্টাখানেক আগেও শ্যুটিং করেছি। তখনই বুঝতে পারছিলাম, কিছু একটা ঘটছে এই দেশটায়। হোটেলে ফিরে টিভি খুলতেই স্পষ্ট হল সব। অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল তুর্কি সেনাবাহিনীর একটা অংশ। সেই চেষ্টা ব্যর্থ করতে পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ।

অবাক চোখে। ইস্তানবুলের রাস্তায়। ছবি: রয়টার্স।

অবাক চোখে। ইস্তানবুলের রাস্তায়। ছবি: রয়টার্স।

বিরসা দাশগুপ্ত
ইস্তানবুল শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৫
Share: Save:

হাততালি দিয়ে গান গাইতে গাইতে ভিড়টা চলেছে। হাতে জাতীয় পতাকা। গলায় স্লোগান, ‘উই ওয়ান্ট ডেমোক্রেসি!’

মাঝরাত পেরিয়ে গিয়েছে। ঘণ্টাখানেক আগেও শ্যুটিং করেছি। তখনই বুঝতে পারছিলাম, কিছু একটা ঘটছে এই দেশটায়। হোটেলে ফিরে টিভি খুলতেই স্পষ্ট হল সব। অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল তুর্কি সেনাবাহিনীর একটা অংশ। সেই চেষ্টা ব্যর্থ করতে পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ।

ভেবে কেমন লাগছিল। যে বসফরাস ব্রিজে সকালে শ্যুটিং করে এলাম, রাতে সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বিদ্রোহীদের একটা ট্যাঙ্ক!

তার পর জানলা দিয়ে বাইরে চোখ পড়তেই রাস্তায় নেমে এলাম। আমার সঙ্গে ইউনিটের কয়েক জন। দেখলাম, চলেছে ভিড়। তুলনাটা ঠিক হচ্ছে কি না জানি না, কিন্তু হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠল কলকাতার মিছিল। রাজনীতির নয়, প্রতিবাদী জনতার। মনে পড়ল নির্ভয়ার মৃত্যুর পর দিল্লির রাজপথ। সারা বিশ্বে এ ভাবেই তো বারবার পথে নামে সাধারণ মানুষ!

রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। ইস্তানবুলের ফতেহ সুলতান মেহমত সেতুর কাছে। ছবি: এএফপি।

তত ক্ষণে খবরে বলেছে, প্রায় একশো জন মারা গিয়েছেন। এবং সংখ্যাটা বাড়ছে। বিদ্রোহীরা নাকি নানা জায়গায় গুলি চালাচ্ছে। সে শব্দ আমরাও শুনেছি। এ বার একটা তিরতিরে চিন্তা হচ্ছিল। শ্যুটিংটা শেষ করতে পারব তো?

আমার এই ছবির প্রায় পুরোটাই শ্যুট হচ্ছে তুরস্কে। প্রায় ছ’সপ্তাহের শ্যুটিং। ইস্তানবুলে আরও সপ্তাহখানেক থেকে তার পর দূরের কয়েকটা ট্যুরিস্ট স্পটে লোকেশন। এই ছবিতে কাজ করছেন ব্রাত্য বসু, মিমি চক্রবর্তী, গৌরব চক্রবর্তী, যশ দাশগুপ্তরা। সবাই এখন ইস্তানবুলে। আমাদের সবার হোয়াটসঅ্যাপ-টুইটারে উপচে পড়া উদ্বেগ। নির্যাস একটাই— ‘ভাল আছিস তো?’

টুইটারে লিখলাম— ঠিক আছি। ফোনও করলাম বাড়িতে। মিমির মা টেনশনে পড়ে গিয়েছিলেন। মাঝে ওর চোখ লেগে গিয়েছিল, আর সেই সময়েই মায়ের ফোন। উনিই জানালেন, টিভিতে দেখানো হচ্ছে যে, আমরা হোটেলে বন্দি। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। এখানকার ভারতীয় দূতাবাস আমাদের বলেছিল, শুধু শনিবারটা যেন আমরা শ্যুটিং বন্ধ রাখি। আমরা তাই সকালে আর বেরোইনি।

বিদেশ মন্ত্রক ও ভারতীয় দূতাবাস খুব সাহায্য করছে। ওঁরা বলেছেন, রবিবার থেকে আবার শ্যুট করতে পারব। এই লেখা যখন পাঠাচ্ছি, তখন শনিবার প্রায় সন্ধে। দিব্যি গাড়ি চলছে। স্কুল থেকে ফিরছে বাচ্চারা। কে বলবে, এক রাত আগে সব অন্য রকম ছিল।

আমাদের ছবিটা পুজোয় বেরোনোর কথা। তবু মন ভারী হয়ে রয়েছে। গা ঘেঁষে এতগুলো মৃত্যু ঝাঁকিয়ে দিয়ে গিয়েছে আমাদের।

(লেখক চিত্র পরিচালক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Military coup incident birsha dasgupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE