(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাস্টিন ট্রুডো। —ফাইল চিত্র।
আগামী বছর নির্বাচন কানাডায়। তার আগে সে দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির আশা কার্যত ত্যাগ করেছে সাউথ ব্লক। ভারতের বক্তব্য, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যা করছেন তা নিজ দেশে শিখ আবেগকে সন্তুষ্ট করার জন্যই করছেন। কিন্তু তাঁর ক্রমশ উচ্চগ্রামে যাওয়া ঝাঁঝালো ভারত-বিরোধী আক্রমণ এবং আমেরিকা-সহ নিরাপত্তা জোট ‘ফাইভ আইজ়’কেও নিজের পক্ষে টানার কূটনৈতিক প্রয়াস কী ভাবে প্রতিহত করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সাউথ ব্লক।
অটোয়ায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাস্টিন ট্রুডোর দাবি, কানাডার মাটিতে খলিস্তানপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে হত্যার যে অভিযোগ, তার সাপেক্ষে তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হলেও নয়াদিল্লি তা অস্বীকার করছে। ভারত তাঁকে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ করছে বলেও দাবি করেছেন ট্রুডো। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আইনের শাসনের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের মিত্রদের সঙ্গে কাজ করে যাব। শুরু থেকে, গত গ্রীষ্মে, আমরা আমাদের ফাইভ আইজ় অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করেছি, বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে। আমেরিকাও বিচারবহির্ভূত হত্যার চেষ্টার ক্ষেত্রে ভারতের কাছ থেকে একই ধরণের আচরণ পেয়েছে।’’
পাশাপাশি ভারতীয় সূত্র গত কালের মতোই আজও কানাডার যাবতীয় অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলেই উড়িয়ে দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ পর্যায়ের কর্তার মতে, কানাডার সরকারি কর্তারা শিখ চরমপন্থী নিজ্জরের হত্যা মামলায় ভারতের যে সংযোগের নথি দেখাচ্ছে তা একেবারেই অসত্য। ভারতের কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়ে কানাডা ক্রমশ আর একটি পাকিস্তান হয়ে উঠছে নয়াদিল্লির জন্য। প্রসঙ্গত এর আগে নিরাপত্তা বিষয়ে পাঁচ দেশের মঞ্চ কোয়াডের সদস্য অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আমেরিকা এবং ব্রিটেনকেও নিজ্জর হত্যায় ভারতের বিরুদ্ধে নালিশ করে ট্রুডো প্রশাসন। ভারতও কোয়াডের অন্যতম সদস্য। যদিও কোনও দেশই ট্রুডোর দেশের পেশ করা তথ্যপ্রমাণে সন্তুষ্ট হয়নি। কেবল বাইডেন প্রশাসন ভারতকে আইন মেনে কাজ করতে বলেছিল।
ভারতের অনুমান, কানাডা আর এক পাকিস্তান হয়ে উঠছে। বড় সংখ্যক শিখ জঙ্গি এখন কানাডা সরকারের আশ্রয়ে আছে। সেখান থেকে অর্থ এবং আরও নানা ভাবে ভারতে খলিস্তানিদের মদত জুগিয়ে যাচ্ছে। বারবার ট্রুডো সরকারকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও ওই জঙ্গিদের ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি।
এ কথাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে যে আগামী বছর ট্রুডোকে নির্বাচনের মুখে দাঁড়াতে হবে। পঞ্জাবের পরে কানাডাতেই সবচেয়ে বেশি শিখের বাস। যদিও সংখ্যায় তাঁরা কানাডার জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ, বা সাত লাখ সত্তর হাজারের কাছাকাছি। তবে দুই শতাংশ ভোটই কানাডার ঘরোয়া রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।৩৪০ আসন বিশিষ্ট কানাডার পার্লামেন্টে ট্রুডোর লিবারেল পার্টির দখলে আছে ১৬০টি আসন, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে ১০টি কম। সে দেশের পার্লামেন্টের ৩৪০ আসনের ২০টির ভাগ্য নির্ধারিত হয় এশীয়দের ভোটে। তার মধ্যে ১৯টি-তে শেষ কথা শিখেরা। আর কানাডার শিখদের সিংহভাগই খলিস্তানপন্থী। ফলে কানাডায় ট্রুডো সরকারের আশ্রয়ে থেকেই কাজ করছে জঙ্গিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy