চিনে সদ্যসমাপ্ত এসসিও-র প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মঞ্চ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নে চোখ খুলে দিল দিল্লির। ওই বৈঠকের শেষে যৌথ বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ পহেলগাম নাশকতার উল্লেখ রাখতে না পারার পরে এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
বহুপাক্ষিক মঞ্চে যৌথ বিবৃতির ক্ষেত্রে শব্দ নিয়ে শেষ পর্যন্ত কাটাছেঁড়া চলতে থাকাটাই দস্তুর। খসড়া কী হবে, তা নিয়ে প্রতিটি দেশই ভেটো দেওয়ার অধিকারী। অনেক সময় এই বিলম্ব ঘটলেও ঐকমত্যে পৌঁছনো সম্ভব হয়। তবে এসসিও-র সাম্প্রতিক ঘটনা ভারতকে স্মরণ করিয়ে দিল, বহুপাক্ষিক বিশ্ব তৈরির জন্য সঠিক মঞ্চ এটি নয়। এই মঞ্চ রাশিয়া এবং চিনের প্রভাবে চলে। আর এদের মধ্যে চিন কোনও মূল্যেই পাকিস্তানের পাশ থেকে সরে যাবে না। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক আছে ঠিকই, কিন্তু এই মুহূর্তে নয়াদিল্লি এমন কোনও কূটনৈতিক উপঢৌকন মস্কোকে দিতে পারবে না, যার বিনিময়ে বেজিংয়ের পাল্টা অবস্থান নিতে পারে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার। বেজিংয়ের প্রতি গভীরতর কৌশলগত নির্ভরতা রয়েছে মস্কোর। সেই ভারসাম্য তারা নয়াদিল্লির কারণে নষ্ট করবে না। দক্ষিণ এশিয়ায় চিন যে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চাইছে, তার প্রমাণ সাম্প্রতিক চিন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান ত্রিপাক্ষিক অক্ষ গড়া।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ভারতের দু’টি স্বপ্নভঙ্গ ঘটল এসসিও-র প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের পরে। প্রথমত, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে একঘরে করে দেওয়া গিয়েছে— এই ধারণা ধোপে টিঁকল না। দুই, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একতরফা ভাবে ভারত তার কর্মসূচি চালাবে— এমনটাও হওয়া আর সম্ভব নয়। অর্থনীতি-সহ বহু সূচকেই পাকিস্তান ভারতের থেকে দুর্বলতর। কিন্তু এই দুর্বল পাকিস্তানই এক দিকে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ককে বিজ্ঞাপনের মতো ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে, অন্য দিকে চিনের সঙ্গে সখ্য তাদের ক্রমশ বাড়ছে। আবার অগস্টে ক্ষমতার হাতবদল হওয়ার পর থেকে ঢাকা ক্রমশ ভারতের শত্রুভাবাপন্ন শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এটা খুবই সম্ভব যে, ভারত যদি তার দুই প্রতিবেশীকে (ঢাকা, ইসলামাবাদ) নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তার সুযোগ নেবে বেজিং। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সংঘাতে ভারতের পাশে সমস্ত বন্ধু রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে পড়বে— বিষয়টা যে এমন নয়, তা পহেলগামের পরে প্রমাণিত।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এই মুহূর্তে ভিন্ন কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে এগোনোর কথা ভাবতে পারে সাউথ ব্লক। ইসলামাবাদ এবং ঢাকার বর্তমান শাসকদের অবজ্ঞা না করে, বরং ‘ট্র্যাক টু’-এর মাধ্যমে হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা জরুরি। রাওয়ালপিন্ডি এবং ইসলামাবাদের সঙ্গে অতীতেও সংঘাতের মধ্যে ‘ট্র্যাক টু’ চলেছে। পাশাপাশি ঢাকার বর্তমান শাসক সম্পর্কে বিরোধাভাস কমিয়ে, কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করে কথা চালিয়ে যাওয়া আজকের বৃহত্তর ভূকৌশলগত পরিস্থিতির সাপেক্ষে উচিত হবে— এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)