Advertisement
E-Paper

জঙ্গি-দমন অভিযানে নিহত ১৫

পুলিশ জানাচ্ছে, ইস্টার রবিবারে কলম্বোর শাংগ্রি-লা হোটেলে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো মহম্মদ জ়াহরান হাশিমের দলবলই ঘাঁটি গেড়েছিল ওই বাড়িতে।

পি কে বালচন্দ্রন

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৪৮
কালমুনাইয়ে জঙ্গি দমন অভিযানে শ্রীলঙ্কার সেনা ও পুলিশ। ছবি: এএফপি।

কালমুনাইয়ে জঙ্গি দমন অভিযানে শ্রীলঙ্কার সেনা ও পুলিশ। ছবি: এএফপি।

বাড়িটার খবর নিরাপত্তা বাহিনীকে দিয়েছিলেন স্থানীয় মসজিদের মৌলবি আর অন্য বাসিন্দারাই। যা থেকে শ্রীলঙ্কার সেনা-পুলিশ যৌথ বাহিনী আঁচ করেছিল, ইস্টার্ন প্রভিন্সের মুসলিম-প্রধান শহর সৈন্থামারুদু-র ওই বাড়িতেই সম্ভবত ঘাঁটি গেড়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা।

গত রাতে সেই বাড়িতেই অভিযান চালায় বাহিনী। পাল্টা গুলির পাশাপাশি তিনটে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। ভোরে পুলিশ জানায়, ১৫ জন নিহতের মধ্যে রয়েছে ৬টি শিশু ও ৩ জন মহিলা। যৌথ বাহিনীর কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে দুই সন্দেহভাজন আত্মঘাতী বোমারু এই লড়াইয়ের ফাঁকে পালিয়েছে।

পুলিশ জানাচ্ছে, ইস্টার রবিবারে কলম্বোর শাংগ্রি-লা হোটেলে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো মহম্মদ জ়াহরান হাশিমের দলবলই ঘাঁটি গেড়েছিল ওই বাড়িতে। ‘জামাত উল মুজাহিদিন ইন্ডিয়া’-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে আইএসের মতাদর্শে প্রভাবিত হয়েছিল জ়াহরান। ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মূল মস্তিষ্ক মনে করা হচ্ছে তাকেই। সেই জ়াহরানেরই দলের চার জন আত্মঘাতী বোমারু সম্ভবত মারা পড়েছে গত কাল। জখম এক মহিলা এবং একটি শিশু হাসপাতালে। নিহত মহিলা-শিশুরা জঙ্গিদের পরিবারেরই কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে অন্তত এক জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ইস্টারের হামলার পরেই যে দু’টি চরমপন্থী গোষ্ঠীর দিকে আঙুল উঠেছিল, সেই ‘ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত’ (এনটিজে) এবং ‘জামাথে মিল্লাতু ইব্রাহিম’ (জেএমআই)-কে আজ নিষিদ্ধ করেছেন প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। দু’টিই আইএসের শাখা সংগঠন। জ়াহরান নিজেও প্রথম দিকে এনটিজে-তে ছিল। গত কালের সংঘর্ষ ও বিস্ফোরণ যেখানে ঘটে, সেই সৈন্থামারুদুর কাছেই থাকেন সুফি নেতা এইচ এম আমির। তিনি জানান, গত রাতে বাহিনী ওই বাড়িটিকে ঘিরে ফেলার পরেই নম্বরবিহীন একটি ভ্যান থেকে গুলি চালানো শুরু করে জঙ্গিরা। আমিরের কথায়, ‘‘এখানকার স্থানীয় মুসলমিরা কেউই জ়াহরানের চরমপন্থী প্রচার মেনে নেননি। লোকে তৌহিদ জামাতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে তার বক্তৃতার রেকর্ডিং দিয়েছি। লাভ হয়নি।’’

স্থানীয় ফ্রিলান্স সাংবাদিক রিফতি আলি জানাচ্ছেন, বাড়িওয়ালা থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরাও ওই বাড়ির বাসিন্দাদের কাজকর্মে বিরক্ত ছিলেন। আমিরের কথায়, ‘‘শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা মনে করেন, জ়াহরানের মতো লোকেদের দেশ থেকে তাড়ানো উচিত। তা না-হলে কি ওঁরা পুলিশকে খবর দিতেন?’’ শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা মহম্মদ শোয়েবের কথায়, ‘‘খুন ও আত্মহত্যা ইসলাম-বিরোধী। আর এরা তো বাচ্চাদেরও রেহাই দিচ্ছে না।’’

এতগুলো শিশুর মৃত্যু কি এড়ানো যেত না? ‘মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কা’-র তরফে হিলমি আহমেদ বললেন, ‘‘জঙ্গি ঘাঁটিতে ঢোকা ছাড়া উপায় ছিল না বাহিনীর। কিন্তু আইনের প্রয়োগটাও যেন সতর্ক ভাবে করা হয়।’’ ‘সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভস’ নামে একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কও বলেছে, ‘‘নিরাপত্তার বন্দোবস্ত আর স্বাধীনতার মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকা দরকার। অতীতের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে এটাই বলার যে, রাষ্ট্র যেন ওই ভারসাম্যটাকে বিঘ্নিত না-করে।’’ সেনা সূত্রের বক্তব্য, ঘিঞ্জি এলাকায় সতর্কতা বজায় রেখেই অভিযান চালিয়েছে তারা।

গত কাল নিনতাভুর শহরে নম্বরবিহীন একটি গাড়ি উদ্ধার হয়। জ়াহরানের শ্যালক নিয়াস সেটির মালিক বলে গোয়েন্দাদের দাবি। সাম্মানন্থুরাই শহরে আইএসের পতাকা, ব্যানার ও বইপত্রের পাশাপাশি বিস্ফোরক, ডিটোনেটর, জিলেটিন স্টিক, সেনার উর্দি এমনকি আত্মঘাতী হামলা চালানোর পুরোদস্তুর ‘কিট’ উদ্ধার হয়। কলম্বোয় বাড়িতে ৪৬টি তলোয়ার রাখার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এক মৌলবিকে।

ISIS Sri Lankan Security Force Raid Militants Sri Lanka Blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy