Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
syria

দুই ভাই এক বোন ছিল, এখন আমি একা, বলছে আইএস জঙ্গিদের শেষ ঘাঁটি থেকে উদ্ধার হওয়া হারেথ

এই শিশুদের অনেকেই তাদের বাবা-মাকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছে শত্রুপক্ষের হামলায়।ইরাকি, সিরীয়, তুর্কি, ইন্দোনেশীয় প্রায় ২০ জন কিশোর ‘ফ্রন্টলাইন’ পেরিয়েছেন নিজের ঝুঁকিতে।

হারেথ নাজেম। ছবি রয়টার্স।

হারেথ নাজেম। ছবি রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
দেইর আল জোর প্রদেশ (সিরিয়া) শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ১৬:২৭
Share: Save:

পূর্ব সিরিয়া থেকে ইরাকে পালিয়ে আসতে পেরেছিল হারেথ নাজেম। ইসলামিক স্টেটের কবল থেকে পালিয়ে এসেছিল বলা ভাল। ড্রোন হামলায় ইরাকের আল কেম সীমান্তে শরণার্থী এই পরিবারের কেউই আর বেঁচে নেই। শুধু মাত্র বছর ষোলোর হারেথ। ‘‘জানো তা আমার দুটো ভাই আর একটা বোন ছিল। সব্বাই মারা গিয়েছে। আর কেউ নেই। শুধু আমি একা,’’ সংবাদ সংস্থাকে এমনটাই জানায় হারেথ।

ও বলে, ‘‘আমার বোনটা এক্বেবারে ছোট, খুব ভালবাসতাম ওকে। বাজারে বেড়াতে নিয়ে গেলেই ও খুশি। ‘‘মরুভূমিতে গবাদি পশুর ট্রাকে গুলিতে জখম অপর এক কিশোরের পাশে শুয়ে কাতরাতে কাতরাতে কোনওমতে এমনটাই বলে উঠল হারেথ। কম্বলে ঢাকা দেহ, মুখের বেশিরভাগ অংশই ধুলোয় আচ্ছন্ন, মাথায় ব্যান্ডেজে ক্ষতস্থানটা ঢাকা।সংঘর্ষের কারণে ইরাকের বাঘৌজ খালি করে দেওয়ার সময় হারেথও পালিয়ে আসে।

হারেথের ১১ বছর বয়সে ইরাক ও সিরিয়ায় হাজারো সাধারণ নাগরিকের প্রাণ যায় বোমারু বিমানের হানায়। কোনও কোনও শিশুকে তাঁর অভিভাবকই ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের কাছে দিয়ে গিয়েছিল। কেউ বিদেশি, কেউ বা শিশু জিহাদি, রয়েছে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের শিশুরাও।

আরও পড়ুন: কবে ফের যুদ্ধবিমান চালাতে পারবেন অভিনন্দন? কী বলছে নিয়ম

এই শিশুদের অনেকেই তাদের বাবা-মাকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছে শত্রুপক্ষের হামলায়। সিরিয়ান ডেমোক্রাটিক ফোর্সেস বলছে, বাঘৌজের প্রতিটি পুরুষ ও কিশোরদের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে আইএস জঙ্গিদের সংযোগ রয়েইছে। ইরাকি, সিরীয়, তুর্কি, ইন্দোনেশীয় প্রায় ২০ জন কিশোর ‘ফ্রন্টলাইন’ পেরিয়েছে নিজের ঝুঁকিতে। বেশির ভাগেরই বাবা আইএস জঙ্গি, এটা জানার পরই গ্রেফতার করা হয়েছে।

এসডিএফ কমান্ডার আদনান আফরিন সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘‘এই বাচ্চাগুলোর কেউ নেই। দিনের পর দিন এরা কেউ খেতে পারেনি।মানসিকভাবে পাশে থাকাটা অন্তত দরকার। আমাদের পরিকল্পনা হল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতেই ওদের তুলে দেওয়া।’’

আরও পড়ুন: ভারতীয় ভেবে পাকিস্তানি পাইলটকেই পিটিয়ে খুন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে!

হারেথকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে তাঁর কোনও সংযোগ নেই। তাঁর বাবার একটা দোকান ছিল বাঘৌজের বাজারে। তার গোটা পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বোমারু বিমানের হামলায়। সিরিয়া সীমান্ত পেরিয়েছে সে আর পাঁচজন ইরাকি শিশুর সঙ্গে। হারেথ জানায়, জিহাদিদের সঙ্গে সে কখনওই মেশেনি। তাদের স্কুলে ভর্তি হতে বললেও ভর্তি হয়নি। নেয়নি সামরিক প্রশিক্ষণ।

ও বলে, ‘‘আমি জঙ্গিদের ভয় পাই। ওদের জন্যই আজ আমার বাড়িতে কেউ বেঁচে নেই। সারাক্ষণ প্রতিটি স্কুলে-মসজিদে ওরা বক্তৃতা দিত, কার্যকলাপ চালাত।’’
সিরিয়া থেকে ইরাকের বাঘৌজে পৌঁছে একটা খেতে কাজ করত সে, বিনিময়ে সে রাতে শোওয়ার জায়গাটুকু পেত, আর সামান্য কিছু টাকা। বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলেও সে পারেনি।

হারেথ জানায়, ‘‘ইউফ্রেটিস নদীর ধারে দাঁড়িয়েছিলাম আমি। আচমকা বোমা পড়তে শুরু করল। হাত, কান, পা, পেটে ক্ষতস্থানও ওই বোমার আঘাতেই।’’

সেরে উঠলেই আত্মীয়দের খোঁজে বেরিয়ে পড়বে হারেথ। সুস্থ হয়েই পড়াশোনা করতে চায়, আর ভবিষ্যৎ গড়তে, সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিকে এমনটাই জানায় সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE