Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
International News

উত্তর কোরিয়ার দিকে রওনা মার্কিন নৌসেনার স্ট্রাইক গ্রুপ, উত্তাপ তুঙ্গে

পরিস্থিতি প্রবল উত্তপ্ত করে তুলে উত্তর কোরিয়ার দিকে রওনা হয়ে গেল মার্কিন নৌসেনার স্ট্রাইক গ্রুপ। সিঙ্গাপুর থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিল ইউএসএস কার্ল ভিনসনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন নৌবহরটির। কিন্তু মার্কিন নৌসেনার সেই স্ট্রাইক গ্রুপটি রওনা দিয়েছে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে।

মার্কিন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ইউএসএস কার্ল ভিনসন। এই যুদ্ধজাহাজের নেতৃত্বাধীন স্ট্রাইক গ্রুপই এগোচ্ছে উত্তর কোরিয়ার দিকে। ছবি: রয়টার্স।

মার্কিন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ইউএসএস কার্ল ভিনসন। এই যুদ্ধজাহাজের নেতৃত্বাধীন স্ট্রাইক গ্রুপই এগোচ্ছে উত্তর কোরিয়ার দিকে। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ১৪:৩৪
Share: Save:

পরিস্থিতি প্রবল উত্তপ্ত করে তুলে উত্তর কোরিয়ার দিকে রওনা হয়ে গেল মার্কিন নৌসেনার স্ট্রাইক গ্রুপ। সিঙ্গাপুর থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিল ইউএসএস কার্ল ভিনসনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন নৌবহরটির। কিন্তু মার্কিন নৌসেনার সেই স্ট্রাইক গ্রুপটি রওনা দিয়েছে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে। উত্তর কোরিয়ার বেপরোয়া পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির প্রেক্ষিতেই এই কঠোর পদক্ষেপ করা হল বলে মার্কিন নৌসেনার তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়েছে।

চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং সম্প্রতি আমেরিকা সফর করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। চিনফিং-এর সেই আমেরিকা সফরের মধ্যেই কিন্তু ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, চিন যদি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে আমেরিকা একাই পদক্ষেপ করবে। ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারির পর ৪৮ ঘণ্টাও কাটেনি, আক্ষরিক অর্থেই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করল আমেরিকা। এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ইউএসএস কার্ল ভিনসনের নেতৃত্বে মার্কিন নৌসেনার প্যাসিফিক কম্যান্ডের একটি নৌবহর শনিবারই উত্তর কোরিয়ার দিকে রওনা দিল। প্যাসিফিক কম্যান্ডের মুখপাত্র কম্যান্ডার ডেভ বেনহ্যাম বলেছেন, ‘‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে আমাদের উপস্থিতি এবং প্রস্তুতি নিশ্চিত করতেই কার্ল ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপকে সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ বেনহ্যাম আরও বলেছেন, ‘‘ওই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বিপদ হল উত্তর কোরিয়া।’’ কিম জং উনের ক্ষেপণাস্তার ও পরমাণু কর্মসূচিকে ‘‘বেপরোয়া, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং স্থিতিশীলতা ধ্বংসকারী’’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

চিন এবং উত্তর কোরিয়াকে চাপে রাখতে মার্কিন নৌসেনা মাঝেমধ্যেই পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে, দক্ষিণ চিন সাগরে বা জাপান সাগরে টহলদারি চালায়। কিন্তু নির্ধারিত কর্মসূচি ভেঙে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার সম্বলিত স্ট্রাইক গ্রুপকে উত্তর কোরিয়ার দিকে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ বেশ বিরল। স্বাভাবিক ভাবেই এশিয়া-প্যাসিফিক জলভাগে উত্তেজনা এক ধাক্কায় অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে।

ইউএসএস কার্ল ভিনসনের ডেকে এফ-১৮ ফাইটার জেট নিয়ে তৎপরতা মার্কিন নৌসেনার কর্মীদের। —রয়টার্সের ফাইল চিত্র।

কয়েক দিন আগেই সিরিয়ায় ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। বাশার আল-আসাদের সরকার বিদ্রোহীদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ ওঠার পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেয়। কথা মতো সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হানার সম্মুখীন হতে হয় আসাদের বাহিনীকে। আসাদ বাহিনীর একাধিক সামরিক ঘাঁটি এই মার্কিন হামলায় ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। তাই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার যে হুঁশিয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দিয়েছেন, তাকেও আন্তর্জাতিক মহল আর হালকা ভাবে নিতে পারছে না। যে ভাবে মার্কিন নৌসেনার স্ট্রাইক গ্রুপটি এগিয়ে যাচ্ছে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে এবং যে ভাবে উত্তর কোরিয়া পাল্টা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, তাতে যে কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের আশঙ্কা।

আরও পড়ুন: হঠাৎই বিপরীত হাওয়া, সিরিয়ায় ‘মুখোমুখি সমরে’ আমেরিকা আর রাশিয়া

উত্তর কোরিয়া এখন দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টায় রয়েছে। আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পরমাণু হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করতে চান উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। সেই লক্ষ্যেই তাঁর এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরমাণু কর্মসূচি। ইতিমধ্যেই পাঁচটি পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলেছে উত্তর কোরিয়া। উপগ্রহ চিত্র এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, ষষ্ঠ পরমাণু বিস্ফোরণটিও ঘটানোর তোড়জোড় চলছে। গুচ্ছ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক মহলের ক্রামগত সতর্কবার্তা সত্ত্বেও কিম জং উন পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে রাজি নন। বরং আমেরিকা ও জাপানকে তিনি পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন। গত বুধবার উত্তর কোরিয়া জাপান সাগরের দিকে একটি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। কয়েক মাস আগেও জাপানের দিকে এই ভাবেই চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল উত্তর কোরিয়া, যা জাপানের নিজস্ব অর্থনৈতিক জলসীমার মধ্যে আঘাত হানে। উত্তর কোরিয়ার তরফে জানানো হয়েছিল, প্রতিবেশী দেশগুলিতে যে সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, সেগুলি যে উত্তর কোরিয়া যে কোনও সময় গুঁড়িয়ে দিতে পারে, তা বোঝাতেই এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ। সম্প্রতি সিরিয়ায় আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র হানারও তীব্র নিন্দা করেছে পিয়ংইয়ং। এই মার্কিন হানাই প্রমাণ করছে, উত্তর কোরিয়া পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ঠিকই করছে, বিবৃতিতে জানিয়েছে পিয়ংইয়ং।

উত্তর কোরিয়ার এই অনড় অবস্থান আর যে আমেরিকা মানবে না, তা মার্কিন নৌসেনার পদক্ষেপ থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেল। ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

USA Navy Pacific Command North Korea Nuclear Weapons
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy