Advertisement
E-Paper

ফরাসি ভাষার ঘরেই বসত গড়েছেন শহরের বাঙালিনি

নয়ের দশকে গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে এসএফআই-এর ‘জিএস’ মেয়েটির জীবনের চিত্রনাট্য তবু অন্য খাতে বইছিল।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৮
সুমনা সিংহ

সুমনা সিংহ

‘ছবির দেশ, কবিতার দেশ’কে বইয়ের পাতাতেই চিনেছিলেন গোড়ায়! শিল্পী ভ্যান গঘ বা ভাস্কর কামিল ক্লোদেলের জীবনের গল্প সুমনা সিংহকে তীব্র নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। আর পাঁচজন বাঙালি ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রে যা আকছার ঘটে।

নয়ের দশকে গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে এসএফআই-এর ‘জিএস’ মেয়েটির জীবনের চিত্রনাট্য তবু অন্য খাতে বইছিল।

বাঘাযতীনের সেই মেয়ে এখন লেখক হিসেবে প্যারিসেই থিতু। ফরাসি ভাষায় চার-চারটি উপন্যাসের লেখক সুমনা ‘ফ্রেঞ্চ অ্যাকাডেমি’-র মর্যাদার পুরস্কার-সহ ইউরোপের নানা স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন। ভারত-ফ্রান্স সংস্কৃতি উৎসব ‘বঁজুর ইন্ডিয়া’ বা ‘থিম দেশ’ ফ্রান্সকে ঘিরে এ বারের কলকাতা বইমেলারও বিশিষ্ট অতিথি তিনি। ‘‘কলকাতায় বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা, অনুবাদে বিশ্বসাহিত্য পড়ার শিকড়টা কখনওই অস্বীকার করি না,’’ বড় হওয়ার শহরে বইমেলায় আসার ডাক পেয়ে বলছিলেন সুমনা। তাঁর একটি উপন্যাসের নামও ‘কলকাতা’।

বামমনস্ক, শিক্ষক মা-বাপের মেয়ের লেখায় বার বারই গা-ঘেঁষাঘেঁষি কলকাতা ও প্যারিসের। উঠে আসে সমকালের বাংলা বা শার্লি এবদোর ঘটনা-পরবর্তী ফ্রান্সের পরিবর্তনের পটভূমি। ইউরোপে পাড়ি দিয়ে জীবন পাল্টাতে চাওয়া ভারতীয়-বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘আসোমো লে পোভ্র’ (মেরে ফেল সব গরিবদের) উপন্যাসের ফিল্ম-স্বত্ত্ব জার্মানিতে বিক্রি হয়ে গিয়েছে।

১৭ বছর আগে ফরাসি দূতাবাসের ডাকে ফ্রান্সে ইংরেজি পড়াতে গিয়েই সুমনার উড়ান শুরু হয় এক অন্য ভুবনে। সরবোনে ফরাসি সাহিত্যে এমএ-এমফিল, এক প্রবীণ ফরাসি কবির সঙ্গে কিছু দিনের দাম্পত্য কলকাতার মেয়েটির জীবনে নানা অভিজ্ঞতার দিকচিহ্ন। ‘‘ফ্রান্সে সব থেকে ভাল লাগে, যেমন খুশি বাঁচোর স্বাধীনতা, সব ধরনের মতের প্রতি সম্মান!’’ কাটা-কাটা শব্দে ফোনে বলছিলেন সুমনা। তাঁর কথায়, ‘‘নারী হিসেবে, মানুষ হিসেবে আমার মুক্তির আয়োজন ঘটছিল ফরাসি ভাষাতেই। লিখতে বসে দেখি, বাংলার বদলে ফরাসিটাই চলে আসছে!’’

তবে বিদেশি ভাষায় লেখাটা বিরাট কিছু বলে ভাবেন না সুমনা। ইংরেজি ভাষার ভারতীয় লেখকেরা তো রয়েছেনই, ফরাসি ভাষাও বহু বিদেশি লেখকের বৌদ্ধিক আশ্রয়স্থল। ফ্রান্সবাসী আইরিশ স্যামুয়েল বেকেট বা চেক মিলান কুন্দেরা— উদাহরণ ভূরি ভূরি। জার্মানিতেও জার্মান ভাষার এক ইরাকি লেখকের সঙ্গে সুমনার আলাপ হয়েছে। নিজেকে তিনি ভারত ও ফ্রান্সের সংস্কৃতি সেতু গড়ার এক ছোট্ট কারিগর হিসেবে দেখেন। এবং সেই সঙ্গে ভাবেন, ‘‘ফ্রান্স বা ভারত নয়, ফরাসি ভাষাটাই আমার দেশ এখন!’’

তবে আইফেল টাওয়ারের কাছে শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত পাড়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলার একা থাকার কিছু জটিলতা আছে। ‘‘ভারতের মতো ফ্রান্সেও জাতিবিদ্বেষ বাড়ছে। ভারতীয়দের নিয়ে গড়পড়তা ফরাসির গাঁধী-গাঁজা-বলিউড-মাদার টেরিজা সর্বস্ব ক্লিশে ধারণার জ্বালাতে আমায় রোজ ভুগতে হয়!’’ মৃদু হেসে বলছিলেন সুমনা। আর আফশোস, ‘‘আমার মা বেচারি এখনও মেয়ের লেখা কিচ্ছু পড়তে পারেন না!’’ ‘কলকাতা’ উপন্যাসের আসন্ন ইংরেজি ভাষান্তরের দিকে তাই তাকিয়ে আছেন সুমনা।

লুচি-রসগোল্লা বা ফরাসি সুরার মধ্যে একটিকে বাছতে কিন্তু রাজি নন চল্লিশোর্ধ প্যারিসবাসিনী। ফরাসি পাসপোর্টের প্রতি দায়বদ্ধ তিনি! আবার কলকাতার নানা পরিবর্তনের ঘন ঘন সাক্ষী হতেও উন্মুখ! ‘‘চেষ্টা করছি, যাতে ছ’মাস করে প্যারিস ও কলকাতায় থাকতে পারি।’’

France Woman Kolkata Shumona Sinha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy