Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Explosion

রাসায়নিক বিপর্যয়েই বিস্ফোরণ বেইরুটে

বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে সাইপ্রাসের মানুষও কাল সেই ভয়ানক শব্দ শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি।

বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে গিয়েছে বেইরুট বন্দর (বাঁ দিকে)। ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন জখম বাসিন্দা। এপি

বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে গিয়েছে বেইরুট বন্দর (বাঁ দিকে)। ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন জখম বাসিন্দা। এপি

সংবাদ সংস্থা
বেইরুট শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২০ ০৩:২২
Share: Save:

দীর্ঘ পনেরো বছরের গৃহযুদ্ধে এত ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেখেনি লেবাননের রাজধানী। এর আগেও বহু মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছে বেইরুট। কিন্তু একসঙ্গে এত রক্তাক্ত মুখ বহু বছর দেখেনি এই শহর। বেইরুটের রাজপথ আজ কার্যত ধ্বংসস্তূপ হয়ে দাঁড়িয়ে। অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গুঁড়িয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি আর রক্তের দাগ। গত কালই সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল যে, মৃতের সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে। আজ সেই সংখ্যাই বেড়ে হয়েছে অন্তত ১৩৫। আহত প্রায় তিন হাজার মানুষ। মৃত্যু যে আরও বাড়বে, তা আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছে হাসপাতালগুলি।

গত কাল বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল বেইরুটের বন্দর সংলগ্ন এলাকা। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে সাইপ্রাসের মানুষও কাল সেই ভয়ানক শব্দ শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় প্রথমে দেখা গিয়েছে, ভয়ঙ্কর শব্দে কিছু একটা ফাটতেই ছাই রঙা ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে চারপাশ। মুহূর্তে সেই ধোঁয়া রং পাল্টে কমলা হয়ে যাচ্ছে। বিস্ফোরণের জেরে প্রথমে কাঁপতে শুরু করে আশপাশের বাড়ি দরজা-জানলা। তার পরের কয়েক মিনিটে প্রচুর বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। বাদ পড়েনি বহুতলও। ঝনঝনিয়ে ভেঙে পড়েছে দূর-দূরান্তের বাড়িঘর-দোকানের কাচ। বন্দর সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রচুর গাড়িও দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে গিয়েছে।

প্রথমে সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা মনে করা হলেও দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী মহম্মদ ফাহমি আজ রাসায়নিক দুর্ঘটনার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বন্দর চত্বরের একটি গুদামঘরে প্রায় ২৭০০ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জমা করা ছিল ২০১৪ সাল থেকে। জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিকগামী একটি জাহাজ আইনি জটিলতায় বেইরুট আটকে পড়েছিল, সেই জাহাজেই ছিল এত রাসায়নিক। কাল কোনও ভাবে সেই গুদামে আগুন লেগে যায়। যার পরিণতি এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। রাসায়নিক বিশেষজ্ঞেরাও প্রায় একই কথা বলেছেন। তাঁদের অবশ্য দাবি, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে আশপাশে কোথাও মজুত রাখা বাজির একসঙ্গে বিস্ফোরণ হয়। প্রথম বার ধোঁয়া বেরোনোর পরে আগুনের যে ফুলকি আর শোঁ শোঁ শব্দ কাল পাওয়া গিয়েছিল, তা বাজি ছাড়া সম্ভব নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

আর্থিক মন্দায় বিধ্বস্ত লেবানন এখন নতুন সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে। গত এক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এখানকার মানুষ। তার উপরে কালকের বিস্ফোরণে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ গৃহহীন। করোনা সংক্রমণের জন্য হাসপাতালগুলি উপচে পড়ছিল। সেই সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ কাল আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেইরুট বন্দর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া খাদ্যসামগ্রী আমদানি নিয়েও চিন্তা রয়েছে। যে শস্যভাণ্ডারে অধিকাংশ খাদ্যশস্য মজুত থাকে, সেগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। গত কয়েক বছরের গৃহযুদ্ধে এক লক্ষেরও বেশি সিরীয় নাগরিক এখন এ দেশে আশ্রিত। ফলে চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যসঙ্কটে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

এই অবস্থায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও প্রতিবেশী দেশগুলি। আগামী কালই বেইরুট গিয়ে পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখবেন বলে জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটারে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Explosion Beirut Death Injury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE