E-Paper

শিশুমৃত্যুর হার বাড়ছে আমেরিকায়

গবেষণার পুরোধা, শিশুচিকিৎসক ক্রিস ফরেস্ট জানাচ্ছেন, দেশে শিশুদের স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য আর্থ-সামাজিক বৈষম্যকে দায়ী করা যাবে না, কারণ বিভিন্ন শ্রেণির শিশুদেরই স্বাস্থ্যের হাল অত্যন্ত খারাপ।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫ ০৭:০১
গর্ভস্থ শিশুমৃত্যু ও সদ্যোজাতের মৃত্যু ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে।

গর্ভস্থ শিশুমৃত্যু ও সদ্যোজাতের মৃত্যু ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে। —প্রতীকী চিত্র।

দ্রুত অবনতি ঘটছে আমেরিকার শিশু-স্বাস্থ্যের। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, পরিস্থিতি এতটাই সঙ্কটজনক যে সম-মানের, অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত দেশগুলির তুলনায় আমেরিকায় শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেশি। ‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ নামে এ দেশের প্রথম সারির চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি পত্রিকায় এই গবেষণাপত্রটিপ্রকাশিত হয়েছে।

এই গবেষণার পুরোধা, শিশুচিকিৎসক ক্রিস ফরেস্ট জানাচ্ছেন, এ দেশে শিশুদের স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য আর্থ-সামাজিক বৈষম্যকে দায়ী করা যাবে না, কারণ বিভিন্ন শ্রেণির শিশুদেরই স্বাস্থ্যের হাল অত্যন্ত খারাপ। আবার এই অবনতির কোনও জিনগত ব্যাখ্যাও খুঁজে পাননি গবেষকেরা। তা হলে পরিস্থিতির এত দ্রুত খারাপ হচ্ছে কেন?

গবেষকদের দাবি, গলদ গোড়াতেই। আমেরিকার ৩৫ শতাংশ এলাকা প্রসূতি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে ‘মরুভূমি’। অর্থাৎ, এই সব এলাকায় যে সব প্রসূতি থাকেন, তাঁরা ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকু পান না। ফলে এই সব এলাকায়প্রসূতিমৃত্যু, গর্ভস্থ শিশুমৃত্যু ও সদ্যোজাতের মৃত্যু ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে। যে সব মা কোনও রকম পরিষেবা ছাড়াই সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন, তাঁদের সন্তানেরা অনেক সময়েই অসুস্থ হয়ে জন্মাচ্ছে, এবং জন্মানোর পরেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুবিধা পাচ্ছেন না।

দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হয়ে দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে ‘মেক আমেরিকা হেল্‌দি এগেন’ বা ‘মাহা’ প্রস্তাব পেশ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।কিন্তু সেই ‘মাহা’ এই সব ‘স্বাস্থ্য মরু’ এলাকায় কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেই মনে করেন গবেষকেরা।

পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে উঠেছে হালফিলের জীবনযাপনের রীতি-নীতির জন্যই। গবেষকেরা দেখছেন, ২০১০-এর পরে যে শিশুরা জন্মেছে, তাদের ফাস্ট ফুড খাওয়ার এবং অলস ভাবেজীবনযাপন করার প্রবণতা বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলছে। স্থূল থেকে স্থূলতর হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা। এবং সাবালক হওয়ার আগেই তাদের শরীরে বাসা বাঁধছে ডায়াবিটিস ওনানা স্ত্রীরোগ।

‘শরীর’ খারাপের সঙ্গে চিন্তা বাড়াচ্ছে ‘মন’ খারাপও। কোভিড-১৯ ও অতিমারির প্রভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ বেড়েছে। শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নন, অবসাদ, হতাশার মতো মানসিক ব্যাধিতে জর্জরিত এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও। এবং মানসিক স্বাস্থ্যের এই করুণ হাল সরাসরি কু-প্রভাব ফেলছে শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরেও।

এই পরিস্থিতি থেকে বার হওয়ার কি কোনও উপায় নেই? ডাক্তার ফরেস্টের মতে, একদম অল্পবয়স থেকে পরিবার ও স্কুলকে উদ্যোগ নিয়ে শিশুদের স্বাস্থ্যসচেতন করে তুলতে হবে। এক দিকে যেমন খেলাধূলায় জোর দেওয়া ও স্বাস্থ্যকর খাবারদাবারের উপরে জোর দিতে হবে, তেমনই প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা। স্কুলগুলি যদি শিক্ষাপ্রাঙ্গণে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেয়, তা হলে ছেলেমেয়েরা পরস্পরের সঙ্গে গল্প করার সুযোগ পাবে মনেকরেন ফরেস্ট।

এ দেশে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া স্বাস্থ্য পরিষেবার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক, মত ফরেস্টের। তাঁর প্রশ্ন, “জার্মানি বাডেনমার্কের শিশুদের প্রত্যাশিত আয়ুর থেকে আমেরিকান শিশুদের প্রত্যাশিত আয়ু অনেক কম। এই শোচনীয় পরিস্থিতির যদি মোকাবিলা না করি, তা হলে ভবিষ্যৎ কাদের হাতে দিয়ে যাব আমরা?”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

america Research Child Health

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy