E-Paper

গোপালগঞ্জে ব্যাপক ধরপাকড়, সমাবেশ জামায়াতের

এনসিপির অভিযোগ ছিল, বুধবার তাদের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালায়। আওয়ামী লীগের পাল্টা অভিযোগ, এনসিপি-র নিশানায় ছিলেন তাদের নেতা-কর্মীরাই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ০৮:০৫
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে  প্রথমে ১৪৪ ধারা ও রাতে জারি করা হয়েছিল কার্ফু।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে ১৪৪ ধারা ও রাতে জারি করা হয়েছিল কার্ফু। —ফাইল চিত্র।

বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে বুধবার সংঘর্ষ বেধেছিল। সে দিনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়। জখম হয়ে হাসপাতালে অনেকে চিকিৎসাধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে দিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান। রাতেই জারি করা হয় কার্ফু। পরে কার্ফুর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হলেও আজ সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা কার্ফু শিথিল করা হয়।

এনসিপির অভিযোগ ছিল, বুধবার তাদের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালায়। আওয়ামী লীগের পাল্টা অভিযোগ, এনসিপি-র নিশানায় ছিলেন তাদের নেতা-কর্মীরাই। তাদের আরও অভিযোগ, ১৬ জুলাইয়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে গোপালগঞ্জে ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস শুরু করেছে সেনাবাহিনী। তল্লাশির নামে হয়রানির পাশাপাশি অকারণে সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, এই অভিযানের দায়িত্বে রয়েছেন যশোরের মেজর জেনারেল জে এম এমদাদুল ইসলাম। আজ কক্সবাজারে সাধারণ মানুষকে নিশানা করে সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে দাবি শেখ হাসিনার দলের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়াদুল কাদের বলেছেন, ‘‘সদ্যগঠিত একটি রাজনৈতিক দলকে সেনাবাহিনী নিরাপত্তা দিচ্ছে। কার্যত তাদের হয়েই কাজ করা হচ্ছে। সেনবাহিনীর এই ভূমিকা কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর কোনও সম্মানহানি না ঘটিয়ে অবিলম্বে সেনাবাহিনীর ব্যারাকে ফিরে যাওয়া উচিত।’’

অন্য দিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আরও একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার সাতপাড়ে পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ও রাস্তায় গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৩৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই নিয়ে গোপালগঞ্জের ঘটনায় পুলিশের উপরে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে মোট চারটি মামলা করা হল। চারটি মামলায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলির মোট ৩৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ৬৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় গত বুধবার থেকে আজ, শনিবার দুপুর পর্যন্ত গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩০৬ জনকে গ্রেফতারকরা হয়।

এক দিকে গোপালগঞ্জের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি, অন্য দিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রবল মতানৈক্য। তার মধ্যেই আজ দুপুরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করেছিল জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন, বৈষম্য মুছে দেওয়া, মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন— এই সমস্ত লক্ষকে সামনে রেখে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জামায়াত। সমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে দলে দলে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশের কারণে আজ সকাল থেকেই ঢাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। শাহবাগ এলাকায় বন্ধ ছিল বাস চলাচল। শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরবাইক, রিকশা ও অ্যাম্বুল্যান্স চালু ছিল। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে, জামায়াতে ইসলামী এই সমাবেশে সেনার গাড়ি ব্যবহার করেছে। শুধু তা-ই নয়, জামায়েত-এর সদস্যেরা যাতে সমাবেশে সহজে পৌঁছতে পারেন, তার জন্য রেল পরিষেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করে দিয়েছে সরকার। এ দিকে, খুলনা জেলা থেকে শনিবারের এই সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার জেরে আবু সৈয়দ (৫৫) ও মহম্মদ আমানত শেখ (৫৫) নামে দুই জামায়েত নেতার মৃত্যু হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh NCP jamaat e islami

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy