Advertisement
E-Paper

হাতে নেই নগদ, খিদে মেটাতে গাজ়ায় চলছে বিনিময় প্রথা! বাড়ছে অনাহারে মৃতের সংখ্যাও

গাজ়া জুড়ে খাদ্যাভাবে হাহাকারের ছবি প্রতি দিনই বদলাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইজ়রায়েলি সেনার হামলা। লেগেই আছে গোলাবর্ষণ। ইজ়রায়েলি সেনার হামলা থেকে প্রাণ বাঁচালেও অনাহার আর খিদের জ্বালা গ্রাস করছে দিনে দিনে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ১৫:৫১
Those without cash in Gaza City are meeting their needs through bartering

গাজ়ায় ত্রাণশিবিরের বাইরে ভিড় প্যালেস্টাইনিদের। ছবি: রয়টার্স।

নগদ হাতে নেই। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যা রয়েছে, তা-ও যৎসামান্যই। তবে সেই টাকাও সরাসরি তুলতে পারছেন না গাজ়াবাসী। ‘মিডলম্যানের’ সাহায্যে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুললে গুনতে হচ্ছে প্রচুর পরিমাণের ‘কমিশন’ও। নগদের অভাবে বাজার থেকে কিছু কেনারও উপায় নেই। খিদে মেটাতে বা প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা মেটাতে গাজ়ায় বসবাসকারী প্যালেস্টাইনিরা শুরু করেছেন বিনিময় প্রথা। রুটির বিনিময়ে ডাল, সব্জি দিলে মিলছে চিনি।

গাজ়া শহরে বহু দিন ধরে সেলুন চালাচ্ছেন হিলাল হাবিব। সংবাদমাধ্যম ‘আলজ়াজিরা’কে তিনি বলেন, ‘‘আমার সেলুনে কেউ এক জন বলছেন, যদি তাঁর চুল কেটে দিই তো দু’খানা রুটি দিতে পারেন! মানুষের হাতে নগদ নেই বললেই চলে। শুধু তা-ই নয়, সরকারি খাতে যাঁরা বেতন পান, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও শূন্য।’’

গাজ়া জুড়ে খাদ্যাভাবে হাহাকারের ছবি প্রতি দিনই বদলাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইজ়রায়েলি সেনার হামলা। লেগেই আছে গোলাবর্ষণ। ইজ়রায়েলি সেনার হামলা থেকে প্রাণ বাঁচালেও অনাহার আর খিদের জ্বালা গ্রাস করছে দিনে দিনে। গাজ়ার হাসপাতালগুলি সূত্রে খবর, গাজ়া জুড়ে ইজ়রায়েলি হামলায় শনিবারই মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। তাঁদের মধ্যে থাকা ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন ত্রাণ আনতে গিয়ে।

ইজ়রায়েলের সঙ্গে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সংঘাতের কারণে ভেঙে পড়েছে গাজ়ার অর্থনীতি। প্যালেস্টাইনিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা প্রায় শেষ হয়ে আসছে। জমানো টাকায় চলছে একাংশের সংসার। তবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা তুলতে পারছেন না প্যালেস্টাইনিরা। তেমনই এক ভুক্তভোগী সাবের আহমেদ জানান, কেউ যদি হাজার শেকেল (ইজ়রায়েলি মুদ্রা) তোলেন তা হলে হাতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬০০ শেকেল। কিন্তু সেই টাকা নিয়ে বাজারে গেলে তা যথেষ্ট নয়। সাবেরের কথায়, ‘‘বাজারে গেলে দু’কেজি ডাল, এক কেজি আটা কিনতে গিয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছে ৬০০ শেকেল। সেটাই বড় সমস্যা।’’

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গাজ়াবাসীকে। গাজ়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার এবং অপুষ্টির কারণে মৃত্যু হয়েছে ছ’জনের। ইজ়রায়েলের সংঘাত শুরুর পর থেকে এই নিয়ে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৭৫, যার মধ্যে রয়েছে ৯৩ জন শিশু।

দিনের পর দিন হাহাকার বাড়ছে গাজ়ায়! খাদ্যসঙ্কট যেন প্রতি দিনই তীব্রতর হচ্ছে। আর এই সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা। দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছেন গাজ়াবাসীর একটা বড় অংশ। হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে রোগীদের। তাঁদের চিকিৎসা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চিকিৎসক-নার্সেরাও!

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এখন গাজ়ায় খাদ্যসঙ্কট চরম সীমায় পৌঁছেছে। ২০ লক্ষের বেশি গাজ়াবাসী খাদ্য এবং জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে হাহাকার করছেন। বাঁচার উপায় ত্রাণশিবির। কিন্তু সেটাও যেন প্যালেস্টাইনিদের কাছে ‘মৃত্যুফাঁদ’! খাবার ও প্রয়োজনীয় ত্রাণের জন্য গাজ়াবাসীর ভরসা ত্রাণশিবির। গাজ়ায় পরিচালিত ইজ়রায়েল-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণকারী সংগঠন গাজ়া হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নিয়েও প্রশ্নের অন্ত নেই। তাদের ত্রাণশিবিরে খাবার আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু তার পরেও ত্রাণশিবিরের বাইরে ভিড় কমার লক্ষণ নেই।

রাষ্ট্রপুঞ্জ গত সোমবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছিল, প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ডের তিনটি অঞ্চলে দৈনিক ১০ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইজ়রায়েল যতটুকু আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে, তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু তার পরেই ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করলেন, গাজ়ায় কোনও প্যালেস্টাইনি নাগরিক অনাহারে নেই! নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘গাজ়াবাসীকে অনাহারে রাখার কোনও অভিপ্রায় আমাদের নেই। গাজ়ায় কেউ না খেয়েও নেই। যুদ্ধ চলাকালীন আমরা সেখানে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিয়েছি। না হলে গাজ়ায় এখন কোনও মানুষই থাকত না।’’ কিন্তু ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ওই দাবি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘গাজ়ায় কার্যত দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শিশুরা ক্ষুধার্ত। গাজ়ার নাগরিকদের যে ছবিগুলি সামনে আসছে, তা খুবই উদ্বেগের।’’ সেই আবহে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ট্রাম্পের একটি প্রতিনিধিদল পরিদর্শনে গিয়েছে। এই দলে রয়েছেন পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইজ়রায়েলে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি।

starvation Starvation Death gaza food crisis Israel-Hamas Conflict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy