বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীকে ‘অপ্রিয়’ প্রশ্ন করার ‘অপরাধে’ চাকরি হারালেন তিন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের তিন সাংবাদিক। তাঁরা হলেন দীপ্ত টিভির সিনিয়র প্রতিবেদক রহমান মিজান, এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বি এবং চ্যানেল আই-এর প্রতিবেদক বাশার। শুধু তা-ই নয়, ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স (জেআরএ)’ নামের একটি রাজনৈতিক ফেসবুক পেজ এক স্ট্যাটাসে সাংবাদিকদের নাম ও ছবি প্রকাশ করে, যেখানে তাঁদের ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দালাল’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এবং ‘গণধোলাই’য়ের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। চাকরি খোয়ানোর দায় ৩ সাংবাদিকের উপরেই চাপিয়েছেন ফারুকী।
ঘটনার সূত্রপাত গত রবিবার। একটি সাংবাদিক বৈঠকে ফারুকীকে প্রশ্ন করছিলেন সাংবাদিকেরা। সেই সময় সাংবাদিক ফজলে রাব্বি প্রশ্ন করেছিলেন, “জুলাইয়ে ১৪০০ জন নিহত হয়েছে—এই তথ্যের ভিত্তি কী?” রহমান মিজান প্রশ্ন করেছিলেন, “আপনি শেখ হাসিনাকে খুনি বলছেন, আদালত কি সে রকম কোনও রায় দিয়েছে?”
এর পরেই আসরে নামে জেআরএ। ফেসবুকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি বিষোদ্গারের পরে দলবদ্ধ ভাবে তাঁদের গণপিটুনির হুমকি দেওয়া হয়। পোস্ট থেকে চ্যানেলগুলির দফতর অভিযানের ডাকও দেওয়া হয়। ওই পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর পরই দীপ্ত টিভির প্রধান সংবাদ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে জানানো হয়, মিজানকে আর চ্যানেলে প্রয়োজন নেই। একই দিন এটিএন বাংলার রাব্বিকেও মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি তাঁর দায়িত্বে আর বহাল থাকবেন না। পরে চ্যানেল আইও জানিয়েছে বাশারকেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
চাকরি হারানোর পরে রাব্বি বলেন, “আমাকে জানানো হয়েছে, আমার বক্তব্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অসন্তোষ রয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।” মিজানের ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মী জানিয়েছেন, তাঁকে জানানো হয় ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে’ তাঁর দায়িত্ব শেষ করা হচ্ছে। চ্যানেল আই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পরে ফারুকী দাবি করেছেন, তাঁকে প্রশ্ন করার জন্য তিন সাংবাদিক চাকরি হারাননি। তাঁর কথায়, ‘‘ সাংবাদিক বৈঠকে তাঁদের কথাগুলি আমাকে বিস্মিত করলেও ধৈর্য ধরে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজ জানলাম চ্যানেলগুলি তাঁদের চাকরিচ্যুত করেছে। একটা কথা বলার চেষ্টা হচ্ছে দেখছি, আমাকে প্রশ্ন করায় চাকরি গিয়েছে।হাস্যকর কথা। বিষয়টা যে আমি না, বিষয়টা যে জুলাই এটাও অনেকে বুঝতে পারছে না।’’
সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেট নাগরিকদের বড় অংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের টার্গেট করার এই প্রবণতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণেরই নামান্তর।
এ দিকে, নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার-সহ ১৭ অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা মামলা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন রাজধানী ঢাকার ভাটার থানা এলাকায় হওয়া এক হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে ওই অভিনেত্রীদের। ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার মো. মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া মেনেই মামলার তদন্ত চলছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)