Advertisement
E-Paper

শব্দ কোরো না! সুর বাঁধতে নিস্তব্ধ ইটালির ক্রেমোনা

এমন কোনও দিনও হয়নি। কাপ থেকে কোনও দিন চলকে পড়েনি এতটুকু কফি। সেখানে কি না কাপটাই হাত থেকে পড়ে গেল! 

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩২

এমন কোনও দিনও হয়নি। কাপ থেকে কোনও দিন চলকে পড়েনি এতটুকু কফি। সেখানে কি না কাপটাই হাত থেকে পড়ে গেল!

লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছিল ইটালির ক্রেমোনা শহরের এক কফিশপ কর্মী ফ্লোরেন্সিয়া রাসতেল্লির। কাফের সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। এক পুলিশ অফিসার চাপা স্বরে ফ্লোরেন্সিয়াকে বলেন, ‘‘থাক ওগুলো। তুলতে হবে না।’’ মাটিতে মিশে যাওয়ার দশা তখন তরুণীর।

গোটা শহরকে যে মুখে আঙুল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ক্রেমোনার মেয়র। গাড়ির হর্ন থেকে পেন্সিল হিলের খটাখট— নিষিদ্ধ সবই। রাস্তাঘাট পুলিশে ছয়লাপ। কোনও গোলমাল বাধলে যাতে গোড়াতেই আটকে দেওয়া যায়। শহরের মূল এলাকা থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে ট্র্যাফিক। আসলে ক্রেমোনা এখন ভাসছে বেহালার সুরে।

ক্রেমোনা মানেই আন্তোনিয়ো স্ত্রাদিভারি। ১৭-১৮ শতকে তাঁর হাতে জন্ম নিয়েছিল এমন কিছু বেহালা ও চেলো, যা সুরের দুনিয়ায় ঝড় তুলেছিল সে সময়ে। স্ত্রাদিভারির নিজের হাতে তৈরি সেই বাদ্যযন্ত্রগুলির বয়স ক্রমশ বাড়ছে। তাই এক অনন্য পদক্ষেপ নিয়েছে ক্রেমোনা প্রশাসন। স্ত্রাদিভারি ও ক্রেমোনার অন্য দুই কিংবদন্তি শিল্পী নিকোলো আমাতি এবং জুজ়েপ গারনেরি দেল জেসু-র তৈরি বাদ্যযন্ত্রগুলির সুরের ডিজিটাল রেকর্ডিং করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। যাতে ওই শিল্পীদের হাতে তৈরি যন্ত্রগুলি কালের নিয়মে নষ্ট হয়ে গেলেও, তাঁদের হাতে বাঁধা

সুর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখা যায়।

স্ত্রাদিভারির বেহালার আদলে বেহালা তৈরির বহু চেষ্টা হয়েছিল।

কিন্তু ওই সুর সৃষ্টি করতে পারেননি কেউই। ক্রেমোনার বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহশালা ‘মিউসিয়ো দেল ভায়োলিনো’-র কিউরেটর ফুত্তো ক্যাসিয়াতোরি বললেন, ‘‘স্ত্রাদিভারির বাদ্যযন্ত্রের নিজস্বতা রয়েছে। বয়সের ভারে সেগুলো ভগ্নপ্রায়। ওদের সুর সংরক্ষণ করা না গেলে এক সময় পৃথিবী থেকে তা সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে।’’ ক্রেমোনার ওই সংগ্রহশালা থেকেই নেওয়া হয়েছে বাদ্যযন্ত্রগুলি।

‘স্ত্রাদিভারিয়াস সাউন্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরি করছেন তিন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। সংগ্রহশালার বাছাই করা চারটি বাদ্যযন্ত্রের সুর রেকর্ড করা হচ্ছে। যত ধরনের সুর তৈরি হতে পারে তা থেকে, সবই। মাত্তিয়া বাসানি নামে এক ইঞ্জিনিয়ার জানালেন, আসল বাদ্যযন্ত্রগুলির সুর একবার সংগ্রহ করা হয়ে গেলে, সফ্‌টওয়্যারের মাধ্যমে তা থেকে নতুন রেকর্ডও তৈরি করা যাবে। তবে এই প্রকল্পটি বায়স্তবায়িত হতেই এক বছর লেগে গিয়েছে। পাঁচশো বছরের পুরনো যন্ত্রগুলো ধরতে দিতেই রাজি হচ্ছিল না সংগ্রহশালা।

গোটা জানুয়ারি মাস জুড়ে চলবে রেকর্ডিং পর্ব। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা সুর-বন্দি চলছে। সপ্তাহে ছ’দিন। চার শিল্পী বাজিয়ে চলেছেন দু’টি বেহালা, একটি ভায়োলা ও একটি চেলো। বেহালার ‘তার’ আর ‘বো’-এর টানে জন্ম নিচ্ছে হাজারো সুর। সংগ্রহশালার অডিটোরিয়ামে বসানো হয়েছে ৩২টি অত্যাধুনিক মাইক্রোফোন। বন্দি হচ্ছে স্ত্রাদিভারি-আমাতির মূর্চ্ছনা।

Stradivarius Museo del Violino
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy