E-Paper

দূতাবাসে হামলার ছকের ‘মাথা’ জিয়া ঢাকাতেই

সূত্রের দাবি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে দূতাবাসে হামলার সম্ভাবনার খবর এসেছিল আমেরিকার তরফেই। তার পরে নড়েচড়ে বসে মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:১২

—প্রতীকী চিত্র।

দিন কয়েক আগে বাংলাদেশের ঢাকার বারিধারায় আমেরিকার দূতাবাসে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। সন্ত্রাসবাদী হামলা হতে পারে— এই গোয়েন্দা তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আসার পরেই দূতাবাস এবং তার সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, ঢাকার আমেরিকান দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা করেছিল শীর্ষ জঙ্গিনেতা তথা বরখাস্ত হওয়া সামরিক কর্মকর্তা মেজর জিয়া এবং তার সঙ্গীরা। লক্ষ্য একটাই, দেশের রাজনৈতিক ডামাডোলে বড়সড় নাশকতা ঘটিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা। শুধু তা-ই নয়, এমন কিছু ঘটাতে পারলে দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের রাস্তাও খুলে যেতে পারত।

ওই সূত্রের দাবি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে দূতাবাসে হামলার সম্ভাবনার খবর এসেছিল আমেরিকার তরফেই। তার পরে নড়েচড়ে বসে মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসন। সোয়াট সদস্যদের মোতায়েন করা হয় দূতাবাসের নিরাপত্তায়।

২০১১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই পলাতক মেজর জিয়া। জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল ইসলাম (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম)-এর প্রধান মেজর জিয়া লেখক অভিজিৎ রায়, জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সাল আরেফিন দীপন এবং কলাবাগানে জুলহাস-তনয় খুনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এ ছাড়াও বিভিন্ন মামলায় তার বিরুদ্ধে বিচার চলছিল। আমেরিকার বিদেশ দফতর থেকে তার বিষয়ে তথ্য চেয়ে ৫০ হাজার ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে পালাবদলের পরে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার গঠিত হলে প্রকাশ্যে এসেছে মেজর জিয়াও।

বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ২৯ ডিসেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে আইন মন্ত্রকে মেজর জিয়া তার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করে, ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকা থেকে নাম কাটানোর জন্য আবেদন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারও দেয়। সমাজমাধ্যমেও যথেষ্ট তৎপর ওই জঙ্গি নেতা।

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম নিয়ে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, মেজর জিয়া এখন বাংলাদেশে খুবই সক্রিয়। এক প্রাক্তন সেনা অফিসারের কথায়, ‘‘মেজর জিয়া থাকে আর্মি গল্ফ ক্লাবের কাছে বনানী ডিওএইচএস-এর ৩ নম্বর বিল্ডিংয়ে। সেনায় অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগ প্রমাণের পরে সে চাকরিচ্যুত হয়। তবে দেশের জঙ্গিবাদ বিস্তারের মূল হোতা মেজর জিয়া সেনা এলাকাতেই থাকছে বহাল তবিয়তে। শুধু তা-ই নয়, তার নিত্য গন্তব্য হল গুলশন অ্যাভিনিউয়ের ৯৬ নম্বরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনের অফিস।’’ ওই প্রাক্তন সেনা অফিসার জানাচ্ছেন, গুম কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম চৌধুরী মেজর জিয়ার মামা, মূল গবেষক নাবিলা ইদ্রিস জিয়ার তুতোভাই। বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারদের বড় অংশের মতে, বনানীর মতো অভিজাত জায়গায় জিয়ার থাকার অর্থ— প্রশাসনের অত্যন্ত প্রভাবশালী কোনও ব্যক্তির হাত রয়েছে তার মাথায়। তা না হলে আমেরিকা যে ব্যক্তিকে জঙ্গি তালিকাভুক্ত করেছিল, সে ঢাকার রাস্তায় অবাধে চলাফেরা করে কী করে!

বাংলাদেশের এক কূটনৈতিক বিশ্লেষকের বক্তব্য, ‘‘দেশে রাজনৈতিক ডামাডোল এবং সেনাবাহিনীর ভিতরে অস্থিরতা— এই পরিস্থিতিতে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি। কারণ, জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার এমন উপযুক্ত সময় বাংলাদেশে আগে আসেনি। আর মেজর জিয়ার মতো লোকজন এই পরিস্থিতির সুযোগ পূর্ণমাত্রায় নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh US Embassy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy