Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধুত্বে নাকে নাক, বাণিজ্যের দরজা খুলবে কি

বৈরিতা বাইশ গজে। ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সফর নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অধীর আগ্রহে ফিল্ডিং করছে রিচার্ড হেডলির দেশ!

স্বাগত। রীতি মেনেই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে অভ্যর্থনা মাওরি নেতার। শনিবার অকল্যান্ডে। ছবি: এএফপি।

স্বাগত। রীতি মেনেই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে অভ্যর্থনা মাওরি নেতার। শনিবার অকল্যান্ডে। ছবি: এএফপি।

অগ্নি রায়
অকল্যান্ড শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০৪:০১
Share: Save:

বৈরিতা বাইশ গজে। ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সফর নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অধীর আগ্রহে ফিল্ডিং করছে রিচার্ড হেডলির দেশ!

তিরিশ বছর আগে ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন এখানে। রাজীব গাঁধীর সেই সফরের পর ভারতের অগ্রাধিকার থেকে মুছে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী কেন, রাষ্ট্রপতির সফরেও কূটনৈতিক গন্তব্য হিসেবে কখনওই ভাবা হয়নি। প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজে এক বার এসেছিলেন বটে ১৯৯৫ সালে। বিদেশমন্ত্রী হিসেবে। এত বছর পরের এক ভোরবেলায় হাল্কা শীতের চাদরে মোড়া অকল্যান্ড তাঁর কাছেও নতুন। বললেন, ‘‘ভুললে চলবে না, ক্রিকেট আমাদের দু’দেশের মধ্যে একটা যোগসূত্র। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মানুষ কাছাকাছি রয়েছে ক্রিকেটের বশে।’’ যদিও অকল্যান্ড শহরটিতে চৌকিপাক মেরে দেখা যাচ্ছে, ক্রিকেট নয়, রাগবিই এখন জনপ্রিয়তম খেলা এখানে। নিউজিল্যান্ডের তারকারা আইপিএলে কী করছে তা নিয়ে উচ্চকিত নয় অকল্যান্ডের নিশি-পাবগুলো। বরং আগামিকাল থেকে যে রাগবি প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে শহরে তা নিয়ে উত্তেজনার পারদ অনেকটা চড়া।

তবে এটা বললে বাড়াবাড়ি হবে না, এই শহরে অন্তত ক্রিকেটের থেকে বেশি উত্তেজনা ভারতের এক নম্বর নাগরিককে নিয়ে। বিক্রির হিসেবে এখানকার এক নম্বর খবরের কাগজ ‘উইকএন্ড হেরাল্ড’-এর প্রথম পাতায় আট কলম জুড়ে ছবি ভারতীয় রাষ্ট্রপতির। সঙ্গে শিরোনাম ‘ঐতিহাসিক সফর’।

তবে স্বাগত জানাতে কিন্তু ওঁরা এলেন লাঠি হাতে! মেজাজে বেশ মারমুখী। শত্রু না বন্ধু বলা তো যায় না! প্রথম দেখায় তাঁদের দেওয়া ফার্ন পাতা হাতে তুলে নিলে, সেটাই প্রমাণ অতিথিটি বন্ধুই। এর পরই নেচেগেয়ে তাঁকে বরণ করে নেন নিউজিল্যান্ডের মাওরি সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রণববাবুর ক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটল।

এর পরে রীতি মেনে মাওরি নেতার নাকে নাকও ঘষলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। এই প্রথম বার! তবে নিছকই আনুষ্ঠানিকতা নয়। বাস্তবেই ভারতকে আরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেব পেতে আগ্রহী দক্ষিণ গোলার্ধের এই দেশ। গড়ে তুলতে চায় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বিশেষ করে চায় ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যের খোলা দরজা। রাষ্ট্রপতির অকল্যান্ড সফরে সেই আগ্রহের কথাই তুলে ধরলেন এ দেশের গভর্নর জেনারেল জেরি মেটপারে, প্রধানমন্ত্রী জন কি। গত পাঁচ বছর ধরেই ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য মরিয়া হয়ে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। এ নিয়ে দশ দফা বৈঠক হয়ে গেলেও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক হবে আগামী কাল। তার আগেই প্রধানমন্ত্রী জন কি আজ বলে রেখেছেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কথা বলব। আশা করছি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কিছুটা অগ্রসর হতে পারব।’’

এটা ঘটনা যে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলির সঙ্গে বাণিজ্যের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতির পাপুয়া নিউগিনি ও নিউজিল্যান্ড সফর সেই কৌশলেরই অঙ্গ। ভারত-নিউজিল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পাঁচ বছরে অনেকটা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু ভারতে নিউজিল্যান্ডের পণ্যের রফতানি বাড়েনি। বরং ২০১১ সালে যা ছিল ৯০ কোটি টাকা, ২০১১-’১৫, এই চার বছরে তা নেমে এসেছে ৬০ কোটিতে। ভারতের রফতানিও কিন্তু আহামরি বাড়েনি। আর এই শূন্যস্থানে রমরম করে বেড়ে চলেছে চিনের সাম্রাজ্য। এ কথা মাথায় রেখেই রাষ্ট্রপতি আজ এখানে তুলে ধরলেন মোদী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির কথা। জানালেন, আগের সরকারের আমলে ভারতের নীতি ছিল পূর্বের দেশগুলির দিকে নজর বাড়ানোর। সেই পর্ব থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমান সরকার এখন বাস্তবের জমিতে পূর্বের দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অন্যান্য সম্পর্ক বাড়াতে চাইছে। প্রণববাবুর কথায়, ‘‘প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির ক্ষেত্রে আমরা ‘পূবে তাকাও’ নীতি থেকে বেরিয়ে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসিতে যেতে চাইছি। সে ক্ষেত্রে এই গোটা অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা একান্ত কাম্য।’’

এ দিন গভর্নর জেনারেল জেরি মেটপারের সঙ্গে বৈঠকেও প্রণববাবু বলেন, ‘‘ভারতে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে পরিকাঠামো ও প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদাও। ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।’’ ক্রিকেট ভারত-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে একটা বড় যোগসূত্র হলেও, সেটুকুই সম্পর্কের শেষ কথা নয়। প্রায় পৌনে দু’লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাস করেন এ দেশে। মোট জনসংখ্যার যা ৫ শতাংশ। প্রতি বছর অন্তত ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়তে আসছেন এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। নিভন্ত আগ্নেয়গিরির মশলা দিয়ে তৈরি এই অকল্যান্ড এখন বিভিন্ন ভাষার ছবি, এমনকী, বাংলা ছবির শ্যুটিংয়ের জন্যও অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। রাষ্ট্রপতির সফরে
সম্পর্কের জানলাটা আরও একটু খুলবে, আশা দু’দেশেরই। অকল্যান্ডের পাখির চোখ অবশ্যই ভারতের সঙ্গে মুক্ত-বাণিজ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pranab mukhopadhyay auckland
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE