Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রাণ হাতে নিয়ে জাকার্তার পথে

কী দেখেছিলেন কাল? অ্যান্ডারসন জানাচ্ছেন— প্রথম বড় ঢেউটা কারিতা সৈকত থেকে ১০-১৫ মিটার দূরে থেমে যাওয়ায় বিশেষ গা করেননি। কিন্তু তার ঠিক পিছনে আরও একটা ঢেউ আসছে দেখেই টনক নড়ে তাঁর। তার আগে ক্যামেরায় বুঁদ ছিলেন। ভাবছিলেন, এই বুঝি শুক্রবারের মতো ফের শুরু হবে আনাক ক্রাকাতোয়ার ‘খেল’।

দামাল ‘শিশু’- আগ্নেয়গিরি আনাক ক্রাকাতোয়া  (ক্রাকাতোয়ার শিশু) জুন থেকেই সক্রিয়। মাঝেমধ্যে প্রচুর ছাই বেরিয়ে মিশছে আকাশে। যার জেরে দু’দিন ওই আগ্নেয়গিরির আশপাশ অন্ধকারে ঢাকা ছিল। অক্টোবরে এর থেকে বেরিয়ে আসা লাভার বোমা থেকে কোনওমতে রক্ষা পেয়েছে একটি নৌকা। ১৮৮৩ সালে ক্রাকাতোয়া আগ্নেয় দ্বীপে তিনটি চূড়া থেকে ভয়ঙ্কর অগ্ন্যুৎপাতের (যা থেকে তৈরি হওয়া সুনামিতে ৩৬ হাজার প্রাণহানি হয়েছিল) ৪৫ বছর পরে তৈরি হওয়া গর্তে গড়ে ওঠে আনাক ক্রাকাতোয়া। জন্ম থেকেই ধারাবাহিক ভাবে অল্প লাভা উদ্গীরণ করেছে। এ বারেরটিও খুব বড় অগ্ন্যুৎপাত  নয়। কিন্তু তার সঙ্গে জুড়েছে সমুদ্র তলদেশের ধস, দু’টি মিলে সুনামির কারণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

দামাল ‘শিশু’- আগ্নেয়গিরি আনাক ক্রাকাতোয়া (ক্রাকাতোয়ার শিশু) জুন থেকেই সক্রিয়। মাঝেমধ্যে প্রচুর ছাই বেরিয়ে মিশছে আকাশে। যার জেরে দু’দিন ওই আগ্নেয়গিরির আশপাশ অন্ধকারে ঢাকা ছিল। অক্টোবরে এর থেকে বেরিয়ে আসা লাভার বোমা থেকে কোনওমতে রক্ষা পেয়েছে একটি নৌকা। ১৮৮৩ সালে ক্রাকাতোয়া আগ্নেয় দ্বীপে তিনটি চূড়া থেকে ভয়ঙ্কর অগ্ন্যুৎপাতের (যা থেকে তৈরি হওয়া সুনামিতে ৩৬ হাজার প্রাণহানি হয়েছিল) ৪৫ বছর পরে তৈরি হওয়া গর্তে গড়ে ওঠে আনাক ক্রাকাতোয়া। জন্ম থেকেই ধারাবাহিক ভাবে অল্প লাভা উদ্গীরণ করেছে। এ বারেরটিও খুব বড় অগ্ন্যুৎপাত নয়। কিন্তু তার সঙ্গে জুড়েছে সমুদ্র তলদেশের ধস, দু’টি মিলে সুনামির কারণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা
জাকার্তা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৮
Share: Save:

এক চোখ বন্ধ। আর একটা, ক্যামেরার ভিউ-ফাইন্ডারে। জাভা উপকূলে দাঁড়িয়ে গত কালও ৪৭ কিলোমিটার দূরের আগ্নেয়গিরিটাকে তাক করছিলেন অয়স্টিন এল অ্যান্ডারসন। এখন প্রাণ হাতে করে পড়িমরি ছুটছেন জাকার্তার দিকে। নরওয়ের এই পেশাদার আলোকচিত্রীর প্রিয় বিষয় আগ্নেয়গিরি। আজ ‘পালাতে-পালাতেই’ ছবি-লেখা পোস্ট করছেন টুইটার-ফেসবুকে।

কী দেখেছিলেন কাল? অ্যান্ডারসন জানাচ্ছেন— প্রথম বড় ঢেউটা কারিতা সৈকত থেকে ১০-১৫ মিটার দূরে থেমে যাওয়ায় বিশেষ গা করেননি। কিন্তু তার ঠিক পিছনে আরও একটা ঢেউ আসছে দেখেই টনক নড়ে তাঁর। তার আগে ক্যামেরায় বুঁদ ছিলেন। ভাবছিলেন, এই বুঝি শুক্রবারের মতো ফের শুরু হবে আনাক ক্রাকাতোয়ার ‘খেল’। কিন্তু ঢেউয়ের গর্জনেই মনে পড়ে গেল, সৈকত-লাগোয়া হোটেলে থাকা স্ত্রী-পরিবারের কথা। ক্যামেরা কাঁধেই ছুট লাগালেন অ্যান্ডারসন। তত ক্ষণে পাহাড়ের মতো একটা ঢেউ আনাক ক্রাকাতোয়ার পুরোটা ঢেকে দিয়েছে। অ্যান্ডারসনের কথায়, ‘‘হোটেলে পৌঁছনোর আগেই দেখলাম, শুরু হয়ে গিয়েছে তাণ্ডব। রাস্তার গাড়ি-দোকান সব ভাসিয়ে ঢেউ আছড়ে পড়েছে হোটেলেও। হাহাকার চারদিকে। কিন্তু আমার মাথায় ঘুরছে শুধুই পরিবারের কথা। ওদের সঙ্গে নিয়ে উল্টো দিকের রাস্তায় নেমে, সোজা ঢুকে গেলাম জঙ্গলে।’’

এর পরের টুইটে অ্যান্ডারসন জানালেন, কী ভাবে স্থানীয়েরা কোমর বেঁধে নামলেন উদ্ধারকাজে। তাঁদেরই সাহায্যে এখন নিরাপদ তাঁর পরিবার। প্রশাসন-সেনা রাতারাতি বেশ কিছু রাস্তার হাল ফিরিয়েছে। অ্যান্ডারসনদের মতো অনেকেই গাড়ি ধরে ধ্বংসস্তূপ পাশে রেখে চলেছেন জাকার্তা বিমানবন্দরের দিকে। এ বার বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু কাল রাতের স্মৃতি কিছুতেই যেন ভুলতে পারছেন না ডাকসাইটে আলোকচিত্রী। শুক্রবার ‘লাইভ’ অগ্ন্যুৎপাতের ছবি তুলেছিলেন অ্যান্ডারসন। বুক ফুলিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি পোস্টও করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর ‘লাল দৈত্য’টা যে এমন সর্বগ্রাসী সুনামির কারণ হবে, ভাবেননি।

অগ্ন্যুৎপাতের জেরে সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধসের কারণেই এই সুনামি কি না, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে। পূর্ণিমার জেরে সাগর আরও ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা। আহতদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। ডাঁই করে রাখা দেহের স্তূপ ঘাঁটছেন উদ্বিগ্ন মানুষজন। এরই মধ্যে আবার প্রাণে বাঁচায় ঈশ্বরকেই ধন্যবাদ দিচ্ছেন তানজুং লেসাংয়ের বাসিন্দা নোনো। সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কাল রাত ৯টা ২০ নাগাদ তিনি তাঁর পরিবারকে নিয়ে প্রার্থনা-ঘরে ছিলেন। হঠাৎ বাইরে থেকে হল্লা শুনতে পান। সঙ্গে হাহাকার, আর্তনাদ। ঘর থেকে বেরোতেই দশ বছরের ছেলেকে নিয়ে নোনোও একটা বড় ঢেউয়ে বেশ খানিকটা দূরে গিয়ে আছড়ে পড়েন। তবে নোনোর স্ত্রী বাকি সন্তানদের নিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যাওয়ার অক্ষত আছেন। প্রাণে বেঁচেছেন। কিন্তু চোখের সামনে সাত মিটারের ঢেউ দেখার আতঙ্ক ভুলতে পারছেন না অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE