Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ওবামার পাশে কি রাশিয়া, তাকিয়ে বিশ্ব

রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ঘটনাটি কি বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে চলেছে? এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব পেতে হয়তো আরও দু’-এক দিন লাগবে। কিন্তু বুধবারের ঘটনাপ্রবাহ তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাঁদকে পাশে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়াকে পাশে পেতে চেয়েছিলেন। ওবামা বলেন, আগেই এই বোঝাপড়া থাকলে এই বিমান ধ্বংসের ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।

সংবাদ সংস্থা
মস্কো ও আঙ্কারা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ঘটনাটি কি বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে চলেছে? এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব পেতে হয়তো আরও দু’-এক দিন লাগবে। কিন্তু বুধবারের ঘটনাপ্রবাহ তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাঁদকে পাশে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়াকে পাশে পেতে চেয়েছিলেন। ওবামা বলেন, আগেই এই বোঝাপড়া থাকলে এই বিমান ধ্বংসের ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত। কারণ রাশিয়া যে এলাকায় হামলা চালাচ্ছে, সেখানে নানা দেশের সীমান্ত। লড়াই যখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব সেই লড়াইকেই দুর্বল করবে। তার চেয়ে রাশিয়া আসুক, কী ভাবে বোঝাপড়া হতে পারে সে আলোচনা হোক।

ন্যাটো ও মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে বোঝাপড়া করবে রাশিয়া? তা-ও আবার মার্কিন-সহযোগী তুরস্কের হাতে বিমান ধ্বংসের পরে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনও যখন দাবি করছেন, তাঁদের পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে!

বুধবার তুরস্কের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। কিন্তু ওবামার আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে তাঁর জবাব ইতিবাচক। বলেছেন, বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করে দেখবে মস্কো। আরও এক ধাপ এগিয়ে প্যারিসে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রে অরলভ মন্তব্য করেছেন, ‘‘এ ধরনের একটি জোট হতেই পারে।’’ মস্কো সরকারি ভাবে জানিয়েছে, তুর্কি হামলায় বিমান ধ্বংসের ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত প্ররোচনা’ হলেও তারা বদলার কথা ভাবছে না। সরকারি ভাষ্যে দাবি
করা হয়েছে, মস্কো মনে করে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব।

এর মধ্যেই টানা ১২ ঘণ্টা তল্লাশির পর এক জন পাইলটকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে। কিন্তু অন্য জন শত্রু পক্ষের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বলেই জানানো হল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে। মন্ত্রকের দাবি, উদ্ধার হওয়া পাইলট জানিয়েছেন, কোনও রকম সতর্কতা ছাড়াই তুর্কি বিমান থেকে তাঁদের লক্ষ করে গুলি করা হয়।

কালই তুরস্ক সীমান্ত ঘেঁষা উত্তর সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশে রুশ যুদ্ধবিমানটিকে গুলি করে নামায় তুর্কি সেনারা। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল সের্গেই রুদস্কোই জানিয়েছেন, তুর্কি যুদ্ধবিমান থেকে ছুটে আসা ঝাঁক ঝাঁক গুলির মধ্যেই জ্বলন্ত রুশ বিমানটি ছেড়ে প্যারাশুটে নামতে শুরু করেছিলেন দুই পাইলট। তখনই এক জন পাইলটের শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। তাঁর দেহ মেলেনি এখনও।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে আরও জানানো হয়েছে, দুই পাইলটের খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালানোর সময়েও ফের গুলিবর্ষণের মুখে পড়তে হয়েছিল দু’টি রুশ ‘এমআই-এইট’ হেলিকপ্টারকে। তাঁর দাবি, সম্ভবত তুর্কি সেনারাই ফের গুলিবর্ষণ করেছিল। গুলি থেকে বাঁচতে উদ্ধারকারী দুই রুশ হেলিকপ্টারকে জরুরি অবতরণও করতে হয় উত্তর সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশের অদূরে একটি ঘন জঙ্গলে। শত্রুপক্ষের গুলিতে উদ্ধারকারী দলের এক সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

কালকের ঘটনায় কার্যত প্রকাশ্যেই তুরস্কের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ এ দিন স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘জোটের সব ক’টি
দেশই তুরস্কের পাশে রয়েছে। তবে উত্তেজনা যত তাড়াতাড়ি কমানো যায়, ততই ভাল।’’

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আজ মস্কোয় তুরস্কের দূতাবাস ঘিরে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো রুশ যুবক। কালো পতাকা উড়িয়ে, তুরস্ক-বিরোধী প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে, প্রতিবাদ জানান তাঁরা। পাথর ছুড়ে ভেঙে দেওয়া
হয় দূতাবাসের কয়েকটি জানলা। উচ্চকিত স্লোগান ওঠে, ‘‘ভুলব না, ক্ষমাও করব না।’’

সিরিয়াকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন ধরেই বিভাজন তৈরি হয়েছে বিশ্বের দেশগুলিতে। প্যারিস
হামলার পর পরিস্থিতি অল্প সময়ের জন্য হলেও কিছুটা বদলেছিল। কারণ আইএস জঙ্গিদের নিকেশ করতে রাশিয়া ও ফ্রান্সের কাছে আরও বেশি সামরিক সক্রিয়তার দাবি জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু কাল
বিমান ধ্বংসের ঘটনা আবার পরিস্থিতিকে থমথমে করে তুলেছে। সেই সমস্যা মেটে কি না, সে দিকেই নজর গোটা বিশ্বের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

obama turkish russia jet shoot-down escalation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE