Advertisement
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দুই মেয়ে চলে গিয়েছে আইএস ক্যাম্পে, বাকি দু’জনকে আঁকড়ে মা

রাহ্‌মার বয়স ১৮। ঘোফরানের বয়স ১৭। ফুটফুটে দুই কিশোরী হঠাৎ টি-শার্টগুলো ছুড়ে ফেলেছে। প্রিয় গিটারটাকে ফেলে দিয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। কালো বোরখায় আপাদমস্তক ঢেকে আইএস ক্যাম্পে চলে গিয়েছে মেয়ে দু’টো। হাজার চেষ্টাতেও আটকাতে পারেননি মা ওউলফা হামরোউনি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ১৮:৪০
Share: Save:

রাহ্‌মার বয়স ১৮। ঘোফরানের বয়স ১৭। ফুটফুটে দুই কিশোরী হঠাৎ টি-শার্টগুলো ছুড়ে ফেলেছে। প্রিয় গিটারটাকে ফেলে দিয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। কালো বোরখায় আপাদমস্তক ঢেকে আইএস ক্যাম্পে চলে গিয়েছে মেয়ে দু’টো। হাজার চেষ্টাতেও আটকাতে পারেননি মা ওউলফা হামরোউনি।

টিউনিসিয়ার রাজধানী টিউনিসের কাছেই একটা শহরে থাকেন এই ওউলফা হামরৌউনি। এক সময় প্রাণোচ্ছ্বল ছিলেন। এখন পাথরের মতো। মুখে আর হাসি নেই। চোখেমুখে আতঙ্কের ছায়া আর অসহায়তা। চার মেয়ের মা হামরৌউনি এখন ছোট দুই মেয়েকে আগলে রেখেছেন বুকে। কিন্তু বুঝতে পারছেন না কত দিন আর আগলে রাখতে পারবেন। হাতের মুঠোয় যেন বালি ধরা রয়েছে। ক্রমশ বেরিয়ে যাচ্ছে ফাঁকফোকর গলে।

২০১৪ সাল থেকে টিউনিসিয়ায় আইএস-এর বাড়বাড়ন্ত শুরু। আফ্রিকার ছোট্ট দেশটা তার আগে পর্যন্ত দীর্ঘ দিন ছিল বেন আলির শাসনে। ২০১১ সালের টিউলিপ রেভলিউশনে বেন আলি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালান। টিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে বলে উৎসবে মাতে দেশ। তবে আচমকা পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো মিলে যাওয়া গণতন্ত্রের জন্য টিউনিসিয়া খুব একটা প্রস্তুত ছিল না। অবাধে বাড়তে থাকে ধর্মীয় কট্টরবাদ। ২০১৪ সাল থেকে আইএস-এর গতিবিধি মোটামুটি অবাধ হয়ে গিয়েছে টিউনিসিয়ায়। দুর্বল সরকার বহু চেষ্টাতেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি কট্টরবাদী ইসলামি নেতাদের বাড়বাড়ন্ত। পুরুষরা তো বটেই, অল্পবয়সী মেয়েরাও সে সময় থেকেই দলে দলে নাম লেখাতে শুরু করে আইএস-এ। সে প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে বই কমছে না।

মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে সম্প্রতি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হামরোউনি। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন, কট্টরবাদের সম্পূর্ণ উল্টো মেরুতে বাস করত তাঁর দুই মেয়ে। রাহ্‌মা গিটার বাজাতে খুব ভালবাসত। বাজাতও ভাল। বোরখা বেশ অপছন্দ ছিল দু’জনেরই। মাথায় স্কার্ফ বাঁধতেও দেখা যায়নি কোনও দিন। হার্ড রক টি-শার্ট খুব পছন্দ ছিল রাহ্‌মা আর ঘোফরানের। ছেলেদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশাও করত, ক্যাফেতে সময় কাটাত। ২০১৪ থেকে বদলে গেল মেয়ে দু’টো। বলতে বলতে চোখ ছলছল করে ওঠে হামরোউনির।

কী হয়েছিল ২০১৪ সালে? টিউনিসিয়ায় আইএস-এর অবাধ গতিবিধি সে বছর থেকেই শুরু। ধর্মীয় নেতারা মাইকে ঘোষণা করা শুরু করেন, ইসলামের নির্দেশ মেনে না চললে করুণ পরিণতি হবে। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয় টিউনিসিয়া জুড়ে। আইএস সরকারি স্কুল বয়কটের ডাক দেয়। নিজেদের তৈরি ধর্মীয় স্কুলে আসতে ডাক দেওয়া হয় তরুণ-তরুণীদের। কোথাও কোথাও ফতোয়াও জারি করা হয়।

হামরোউনির বড় মেয়ে আর মেজো মেয়ে তখন থেকেই বদলে যাচ্ছিল। স্কুল ছেড়ে দেয় তারা। আইএস-এর স্কুলে ভর্তি হয়। বোরখা পরতে শুরু করে, ছেলেদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা বন্ধ করে দেয়। টি-শার্ট ফেলে দেয়, গিটার ছেড়ে দেয়, টি-শার্ট পরে গিটার হাতে যে সব সুখের মুহূর্তের ছবি ছিল, সে সব পুড়িয়ে দেয় রাহ্‌মা আর ঘোফরান। মায়ের কোনও কথা শোননি তারা। আইএস নেতারা বোঝাচ্ছিলেন, যোদ্ধাদের বিয়ে করে তাঁদের সন্তান ধারণ করা এবং জনসংখ্যা বাড়ানো মেয়েদের মহান দায়িত্ব। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে টিউনিসিয়ার আরও অনেক মেয়ের মতো রাহ্‌মা আর ঘোফরানও চলে যায় আইএস ক্যাম্পে।

আরও পড়ুন:

নতুন প্রধান বেছে নিল তালিবান, আফগানিস্তানে আরও বড় হামলার ডাক

হামরৌউনি খবর পেয়েছেন, যে যোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছিল, সেই দুই যোদ্ধারই মৃত্যু হয়েছে মার্কিন বিমানহানায়। তার পর থেকে দুই বোনকেই লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির কাছে আর এক আইএস কম্যান্ডারের জিম্মায় রাখা হয়েছে। তাঁর সংসার প্রতিপালন করছে ওই দুই বোন। ইরাক আর সিরিয়ার বিশাল অংশ দখল করে নেওয়ার পর আইএস-এর নতুন যুদ্ধক্ষেত্র এখন লিবিয়া। লিবিয়াতেই তাই আইএস যোদ্ধাদের পরিবার বাড়িয়ে নিজেদের ভিত মজবুত করতে চাইছে আইএস। সেই কাজেই এখন মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছে রাহ্‌মা আর ঘোফরান।

হামরোউনি আতঙ্কে থাকেন আজকাল। ১৩ বছর আর ১১ বছরের দুই মেয়ে এখনও ঘরে রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তারাও দিদিদের মতো কট্টরবাদী হয়ে উঠছে দিন দিন। আর ক’দিন তারা ঘরে থাকবে, হামরোউনি জানেন না। দিদিরা আইএস ক্যাম্পে চলে যাওয়ার আগেই ছোট দুই বোনকে সরকারি স্কুল থেকে বার করে এনে ধর্মীয় স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল। মাকে মেয়েরা জানিয়েছিল, নাস্তিকরা যেখানে পড়ায়, সেই স্কুলে তারা পড়বে না। সদ্য কৈশোরে পড়া দুটো মেয়ে তাই এর মধ্যেই আপাদমস্তক ঢাকা পোশাক পরতে শুরু করেছে। দিদিরা তাদের রোল মডেল। মায়ের কথা, পরামর্শ ভাল লাগে না তাদের। ঘরের তাকে একটা গোলাপি পুতুল রেখেছে দুই বোন। নাম রেখেছে রাহ্‌মা।

অন্য বিষয়গুলি:

Hamrouni Tunisia ISIL Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy