Advertisement
২১ মে ২০২৪
Ukraine

Ukraine Crisis: শীত-শেষের রোদ মেখে কিভ কিন্তু একই ছন্দে চলছে

দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়ে গিয়েছে, তখনও দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা, পড়াশোনা, কাজকর্ম— সবই চলছে স্বাভাবিক নিয়মে। খোলা শহরের সুপারমার্কেটে।

‘আরও বিস্মিত হতে হয় এ দেশের ধীর-স্থির মানুষগুলিকে দেখে।’

‘আরও বিস্মিত হতে হয় এ দেশের ধীর-স্থির মানুষগুলিকে দেখে।’ প্রতীকী ছবি

সৌহার্দ্য মজুমদার
কিভ শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:১১
Share: Save:

আমি থাকি ইউক্রেনের রাজধানী কিভের চকোলিভস্কি বুলেভার্ডে। এখনও সেখানেই। ঠিকানা, হস্টেল নম্বর সাত। তিন বাংলা ভাষাভাষী মিলে একটা ঘরে থাকি। ষোলো তলা বাড়ির সাত তলায়। এখান থেকে আমার মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি দু’-তিন কিলোমিটার। দেশে ফেরার টিকিট কেটে ফেলেছি ৮ মার্চ। মা-বাবার কথায় ফিরতে হচ্ছে। যদিও পড়াশোনা ফেলে যেতে ইচ্ছে নেই একটুও। কারণ এখানে এখন অফলাইনেই পড়াশোনা চলছে।

২০১৮ সাল থেকে ডাক্তারি পড়ার সূত্রে এ দেশে এসেছি। কোভিড পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের কয়েকটা মাস ছিলাম না। এই কয়েক বছরেই ভালবেসে ফেলেছি দেশটাকে। ছবির মতো সুন্দর শহর। ছিমছাম, সাজানো রাস্তাঘাট। বিশ্বাস আর প্রযুক্তির মেলবন্ধন এ শহরে দেখার মতো। একটা উদাহরণ দিই।

রাস্তার ধারে থরে থরে রাখা থাকে ডিজিটাল সাইকেল বা মোটরবাইক। ট্রাম, বাস, মেট্রোর মতো গণপরিবহণ থাকা সত্ত্বেও এই নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থার চাহিদা যথেষ্ট। অ্যাপের মাধ্যমে দু’চাকার যান ভাড়া নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে কোনও রাস্তার ধারে রেখে দিতে হয়। নিজে থেকেই লক হয়ে যায় দ্বিচক্র যান। চুরির ভয়ই নেই। উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়ার দত্তবাগানে বেড়ে ওঠা আমার কাছে যা কল্পনার অতীত। হিন্দু স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। এ দেশে প্রথম এসে তরুণ চোখে এ সব যখন দেখেছিলাম, খুবই অবাক হয়েছিলাম।

আরও বিস্মিত হতে হয় এ দেশের ধীর-স্থির মানুষগুলিকে দেখে। দেশের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জ়েলেনস্কি স্বয়ং যখন তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে দেশের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি নিয়ে ঘন ঘন ঘোষণায় সক্রিয়, দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়ে গিয়েছে, তখনও এ দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা, পড়াশোনা, কাজকর্ম— সবই চলছে স্বাভাবিক নিয়মে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস মেলে শহরের সুপারমার্কেটে। সেগুলো এখনও ২৪ ঘণ্টা খোলা। কিভ থেকে যতই লিভিভ শহরে দূতাবাস সরিয়ে নিক আমেরিকা,
রাজধানীতে উত্তেজনার হেলদোল নেই। ছ’ডিগ্রির উষ্ণতা গায়ে মেখে দিব্যি শীত শেষের আড়মোড়া ভাঙছে নিপ্রো নদীর দু’ধারের এই শহর।

তবে পরিবর্তন যে আসছে, সেটা গত ছ’মাসের মুদ্রার ওঠানামা লক্ষ্য করলেই বোঝা যাচ্ছিল। আজ সকালে সেটা আরও স্পষ্ট হল আমার মতো সাধারণের চোখে। ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি। ইউক্রেনে চলে শুধুমাত্র তাদের মুদ্রা হৃভনিয়া ও আমেরিকান ডলার। শীতে ডলার প্রতি ২৬-২৮ হৃভনিয়া পাওয়া যায়। গ্রীষ্মে এক ডলারে মেলে ২৪-২৫ হৃভনিয়া। তাই গ্রীষ্মে এ দেশে জীবনযাত্রার খরচ বেশি। দেশ থেকে ডলার কিনে এনেছিলাম। কাল ডলারপ্রতি ২৯ হৃভনিয়া পেয়েছি। যা অকল্পনীয়। আজ সকালে দর হয়ে গিয়েছে ২৯.১০ হৃভনিয়া। দেশের অর্থনীতি যে পড়ছে, সেটারই অশনি সঙ্কেত। কিভের মানুষের জীবনযাত্রায় এখনও কিন্তু সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

কোভিড পরিস্থিতিতে প্রথম দেখেছিলাম, ভারত সরকার টাকার বিনিময়ে তার নাগরিককে অন্য দেশ থেকে ‘ইভ্যাকুয়েট’ করছে। এ বারও একই কাণ্ড। সাধারণ সময়ে দেশে
আসা-যাওয়ায় উড়ানে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে সেটা বেড়ে এক পিঠের ভাড়া ২৫ হাজার টাকার আশপাশে হয়েছে। আমি ২৮ হাজার টাকা দিয়ে পশ্চিম এশিয়ার উড়ানে কিভ থেকে কলকাতায় ফেরার টিকিট কেটেছি।

আর আমার দেশের সরকার বিমান পাঠিয়ে ৬০-৭২ হাজার টাকার বিনিময়ে নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াকে বলছে ‘ইভ্যাকুয়েট’! সরকারের তরফ থেকে এই শব্দের ব্যবহার নিয়ে আমাদের ঘোর আপত্তি আছে। আমার বেশির ভাগ পরিচিতেরা নিজেদের তৎপরতাতেই দেশে ফেরার ব্যবস্থা করছে।

লেখক: ডাক্তারি ছাত্র, অনুলিখন: জয়তী রাহা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ukraine Russia Kyiv
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE