গত পাঁচ মাস ধরে চূড়ান্ত খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে গাজ়া। এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদিত আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা ‘দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিয়োরিটি ফেজ় ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) এমন রিপোর্ট পেশ করল, যাতে সরাসরি গাজ়াকে দুর্ভিক্ষপীড়িত বলে ঘোষণা করা যায়। সেই রিপোর্টে তারা জানিয়েছে, গাজ়া সিটি ও সংলগ্ন এলাকায় দুর্ভিক্ষ চলছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ সেই রিপোর্ট অনুমোদন করেছে। তাতে বলা হয়েছে, গাজ়ার কয়েকটি জায়গার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে সেপ্টেম্বরের শেষে দের অল-বালা এবং খান ইউনুসেও চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। গাজ়া ভূখণ্ডে ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ, অনাহারক্লিষ্ট, সর্বহারা এবং মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে এই দুর্ভিক্ষ পুরোপুরি মানুষের তৈরি। চাইলে এই পরিস্থিতি রুখে তা বদলানো সম্ভব। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের চারটি সংস্থা এফএও, ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি এবং হু মানবতার খাতিরে গাজ়ায় যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছে।
গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি, ইজ়রায়েলি হামলায় আরও ৭১ জন নিহত হয়েছে। গাজ়ায় খেতে না পেয়ে কয়েকশো মানুষ ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে। যার অধিকাংশ শিশু। অনাহারে ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে আরও কয়েক লক্ষ। আইপিসি-র পেশ করা ৫৯ পাতার রিপোর্টে বলা হয়েছে, এখনই কোনও পদক্ষেপ না করলে হু-হু করে আরও লোক মারা যাবে। তাই শুধুমাত্র দুর্ভিক্ষ ঘোষণাই যথেষ্ট নয়, গাজ়ার মানুষ দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আর্জি জানাচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে।
তবে ইজ়রায়েল সরকার আইপিসি-র রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজ়ায় ত্রাণ বিলির দায়িত্বে থাকা সেনা বাহিনী এবং সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘‘রিপোর্টটি ভুয়ো। পক্ষপাতদুষ্ট এবং আংশিক তথ্যের ভিত্তিতে ওই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।’’ যে পদ্ধতিতে রিপোর্টটি তৈরি হয়েছে, সেই সমীক্ষাপদ্ধতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইজ়রায়েল। তবে আইপিসি ও ইজ়রায়েলের দাবি খারিজ করে নিজেদের কর্মপদ্ধতি বিশদে ব্যাখ্যা করেছে। শুধু তাই নয়, আগামী কয়েক মাসে গাজ়ায় কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তার একটা পূর্বাভাস দিয়েছে আইপিসি। বহু মানুষ নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে। অনাহার, অস্বাস্থ্যকর অবস্থা থেকে তৈরি রোগ, জলবাহিত রোগ যেমন ডায়েরিয়া, রক্ত আমাশা, পোলিয়োর মতো রোগ বাড়বে। এক কথায় নরকে পরিণত হবে গাজ়া।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)