Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
International News

আগামী ১০ বছরেই ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পৃথিবী! রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু রিপোর্টে উদ্বেগ বিজ্ঞানীদের

সমুদ্র উপকূলে এবং দ্বীপগুলি ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ সমুদ্রের জলস্তর বাড়বে। আর উষ্ণতা বৃদ্ধি দু’ডিগ্রিতে পৌঁছে গেলে সমুদ্রের তলদেশে প্রায় কোনও উদ্ভিদই বাঁচতে পারবে না।

বাড়ছে অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলার হার।

বাড়ছে অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলার হার।

সংবাদ সংস্থা
সিওল শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৩১
Share: Save:

পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। ১০ বছরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেন ভয়ঙ্কর বিপদ। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানব সভ্যতার জন্য অপেক্ষা করছে মহাপ্রলয়ের মতো বিপর্যয়। রাষ্ট্রসংঘ নিয়োজিত ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন ছিল শুধুই বিপদের আগাম পূর্বাভাস। এবার সরাসরি তার ফল ভুগতে শুরু করেছে মানবগ্রহ। বাদ নেই ভারতও।

সোমবারই দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলে আইপিসিসি-র বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্ট বলা হয়েছে, শিল্প বিপ্লব (১৭৫০-১৮৫০)-এর পর থেকে এই প্রথম পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণ। তার জেরে অ্যান্টার্টিকা আর গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলার হার আরও বাড়ছে। আরও উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০-এর মধ্যে এই তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এই কারণেই ভয়ঙ্কর এবং অভূতপূর্ব উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা।পৃথিবীর তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি বেড়ে গেলে কী কী হতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অ্যান্টার্কটিন্টা ও গ্রিনল্যান্ডে আরও দ্রুত গলবে বরফ। দক্ষিণ গোলার্ধে উষ্ণতা বাড়লে তার প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বেই। পাহাড়প্রমাণ হিমশৈল তথা বরফের চাঁই গলে সমুদ্রের জলে মিশবে। আয়তন বাড়বে জলভাগের। ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে বাস্তুতন্ত্র।

আর ভারতের ক্ষেত্রে? রিপোর্ট তৈরির দায়িত্বে থাকা অন্যান্যদের মধ্যে এক ভারতীয় বিজ্ঞানী অরোমার রেভি বলেন, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে ভারতেও। মানুষের সহ্যশক্তি বেশি হলেও অনেক প্রাণী, উদ্ভিদ এই উষ্ণতার সঙ্গে যুঝতে পারবে না। দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলি হয়ে উঠবে আরও উতপ্ত। সমুদ্র উপকূলে এবং দ্বীপগুলি ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ সমুদ্রের জলস্তর বাড়বে। আর উষ্ণতা বৃদ্ধি দু’ডিগ্রিতে পৌঁছে গেলে সমুদ্রের তলদেশে প্রায় কোনও উদ্ভিদই বাঁচতে পারবে না।

আইপিসিপি-র বিজ্ঞানীরা রাষ্ট্রনেতাদেরও তুলোধনা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ২০১৫-র প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ১৫০ দেশ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণ কমানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন নেই। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রনেতারা জলবায়ু তথা পরিবেশের এই ভয়ানক বিপদের কথা বুঝতেই পারেন না বলেও দাবি বিজ্ঞানীদের। তার উদাহরণ, বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণকারী দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্যারিস চুক্তি থেকে তাঁদের দেশকে সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ডের অন্যতম মুখ্য বিজ্ঞানী ক্রিস ওয়েবার যেমন রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর বলেছেন, ‘‘সম্ভব ও অসম্ভব নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর।’’

আরও পডু়ন: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়, পুজোর মুখেই ভাসবে রাজ্য!

তবে শুধুই আশঙ্কা নয়, মুক্তির উপায়ও রয়েছে আইপিসিপি-র রিপোর্টে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এখনও পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়নি। সহজ সরল ভাষায় বুঝিয়েছেন, দু’টি শর্ত। হয় কার্বন ডাই অক্সাইড তথা গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে, নয়তো এমন কিছু করতে হবে, যাতে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া গ্রিন হাউস গ্যাস শুষে নেওয়া যায়। এবং এই শুষে নেওয়া বা পরিশুদ্ধ করার পরিমাণ হতে হবে নির্গমণের থেকে বেশি।

নির্গমণ কমানোর জন্য বরাবরের মতোই আবারও অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহারে জোর দেওয়ার কথাও বলেছেন বিজ্ঞানীরা। সৌরশক্তি, জলবিদ্যুতের ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, এটা করলে অন্তত ২০৫০ সালের মধ্যে ফের জলবায়ুর ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। না হলে শিল্প বিপ্লবের পরের ওই সময় থেকে ধরলে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও স্পষ্ট ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের।

আরও পড়ুন: বিদেশেও নীরব খেল! নকল হিরের আংটি উপহার দেওয়ায় বিয়ে ভাঙল যুগলের

রিপোর্ট পেশের পর সাংবাদিক সম্মেলনে আইপিসিসি-র চেয়ারপার্সন হোসিয়াং লি বলেন, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়ন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখা অসম্ভব নয়। তবে তার জন্য সমাজের সব স্তরে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’’

রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রাক্তন বিশেষ দূত ম্যারি রবিনসন বলেন, ‘‘আমাদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য নিজেদেরই পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের সময় খুব সংক্ষিপ্ত, কিন্তু দায়িত্ব বিশাল।’’

কীভাবে তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের এই রিপোর্ট। সারা বিশ্ব থেকে জলবায়ু সংক্রান্ত প্রায় ছ’হাজার উদাহরণ নিয়ে সেগুলি বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। বিশ্বের কয়েক হাজার পরিবেশ বিশারদ ও বিজ্ঞানীর মতামত নেওয়া হয়েছে। ৪০টি দেশের ৯১ জন লেখক ও সম্পাদক এই রিপোর্ট তৈরি করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE