সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান তথা প্রাক্তন আল কায়দা নেতা আহমেদ আল-শারার উপর থেকে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। বৃহস্পতিবার ১৫ সদস্যের রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি দেশই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পক্ষে সায় দিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এক মাত্র চিন ভোটদানে বিরত থেকেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এই সিদ্ধান্তের ফলে সিরিয়ায় সংখ্যালঘু শিয়া এবং দ্রুজদের উপর সুন্নি জঙ্গি-শাসকদের অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে সিরিয়ায় সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনীর হাতে রাজধানী দামাস্কাস দখল এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটেছিল। আসাদ সপরিবার পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন মিত্র দেশ রাশিয়ায়। সেই গৃহযুদ্ধপর্বে এইচটিএস বাহিনীকে ধারাবাহিক মদত দিয়েছিল আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোর সদস্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোগানের সরকার। চলতি বছরের মে মাসে সৌদি আরবের রিয়াধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছিলেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আল-শারা। সেখানেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি মিলেছিল।
সেই প্রতিশ্রুতি মেনেই জুলাই মার্কিন অর্থ দফতর জানিয়ে দিয়েছিল, সিরিয়ার উন্নয়ন, সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা ও দেশের সামাজিক কাঠামো পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে। এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জও সেই পথেই হাঁটল। একসময় নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত এই এইচটিএস প্রায় দেড় দশক ধরে সিরিয়ায় আল-কায়েদার সহযোগী ছিল। কয়েক বছর আগে তারা আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। ২০১৪ সালের মে মাস থেকে এইচটিএস নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিলেন আল-শারা এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস খত্তারও। দু’জনের উপর থেকেই জুলাই মাসে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল ওয়াশিংটন। রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদও বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে।
আরও পড়ুন:
ঘটনাচক্রে, আল-শারার আমেরিকা সফরের আগেই নিরাপত্তা পরিষদ এই পদক্ষেপ করল। গত বছর পালাবদলের পরেই আল-শরা এবং আর এক আসাদ-বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট’-এর কমান্ডার মাজ়লুম আবদির সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করেছিল তুরস্ক। তাতে বিদেশি জিহাদিদের নবগঠিত সিরিয়া সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করার প্রসঙ্গ ছিল। গৃহযুদ্ধ পর্বে সুন্নি সশস্ত্র বাহিনী এইচটিএস-এর হয়ে প্রায় চার হাজার বিদেশি জিহাদি লড়াই করেছিলেন রাশিয়া ও ইরানের মদতপুষ্ট শিয়া নেতা আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেই জিহাদিদের সিরিয়া সেনায় অন্তর্ভুক্তিতেও ইতিমধ্যেই সায় দিয়েছে ট্রাম্প সরকার।