গাজ়ার পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়ার আর এক প্যালেস্টাইনি বসতি ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও হত্যালীলা চালাচ্ছে ইজ়রায়েলি সেনা। প্যালেস্টাইনি মুসলিমদের ভিটে থেকে উচ্ছেদের কাজও চালিয়ে যাচ্ছে সমানতালে! মঙ্গলবার সরাসরি এই অভিযোগ তুলল, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদ (ইউএনএইচআরসি)। সংস্থার তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘অবিলম্বে গণহত্যা এবং প্যালেস্টাইনি বসতি উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে ইজ়রায়েলকে।’’
মাস কয়েক আগে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কাটৎজ় এবং অর্থমন্ত্রী বেজ়ালেল স্মোত্রিচ জানিয়েছিলেন, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে নতুন করে ২২টি ইহুদি বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তেল আভিভের অনুমোদন না নিয়ে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের অধিকৃত অংশে আগে থেকেই যে ইহুদি বসতি গড়ে উঠেছে, সেগুলিকেও আইনি বৈধতা দেওয়ার কথা জানান তাঁরা। আন্তর্জাতিক জনমত উপেক্ষা করেই দীর্ঘ দিন ধরে প্যালেস্টাইনি মুসলিমদের প্রাচীন বসতি ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের একাংশ দখল করে রয়েছে ইজ়রায়েল। এ বার সেখানে পাকাপাকি দখলদারি কায়েমের উদ্দেশ্যেই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্যালেস্টাইন স্বশাসিত কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তুলেছিলেন। মঙ্গলবার ইউএনএইচআরসি কার্যত সেই অভিযোগকেই বৈধতা দিল।
প্যালেস্টাইনি স্বাধীনতা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা, প্রয়াত ইরাসের আরাফতের গড়া সংগঠন ‘ফাতা’-র নেতৃত্বাধীন জোট ‘প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’ (পিএলও)-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ভূখণ্ড। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘স্বশাসিত প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষ’ সেখানকার নির্বাচিত পরিচালনা করেন। একদা গাজ়ার নিয়ন্ত্রণও আরাফত অনুগামীদের হাতে ছিল। কিন্তু ২০০৭ সালে ‘গৃহযুদ্ধে’ কট্টরপন্থী হামাস বাহিনী পিএলও-কে পরাস্ত করে গাজ়ার দখল নিয়েছিল। ২০০২ সালের পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ চালিয়েছিল ইজ়রায়েলি সেনা। সে সময় তারা নতুন কিছু ভূখণ্ডের দখল নিয়েছে বলে অভিযোগ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আচমকাই দক্ষিণ ইজ়রায়েলে হামলা চালায় প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গাজ়ায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইজ়রায়েলি সেনা। ২১ মাস ধরে চলা যুদ্ধে কাতার, মিশরের মতো দেশগুলির মধ্যস্থতায় বেশ কয়েক বার সাময়িক সংঘর্ষবিরতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত যুদ্ধ থামার লক্ষণ নেই। ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটারের ওই ভূখণ্ডের ২৩ লক্ষ প্যালেস্টাইনি বাসিন্দার অর্ধেকেরও বেশি খান ইউনুস, রাফা-সহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও ধারাবাহিক ভাবে হামলা চালাচ্ছে নেতানিয়াহুর ফৌজ়। আরব দেশগুলির তরফে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, গাজ়া দখলের পরে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের দিরে ‘হাত বাড়াবে’ নেতানিয়াহু সরকার।