Advertisement
E-Paper

সিরিয়ায় ফ্রান্সের বিমান হানা, সঙ্গী আমেরিকাও

প্যারিসে হামলার পরে প্রত্যাঘাত করতে ৪৮ ঘণ্টাও সময় নিলেন না ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। রবিবার রাত থেকেই সিরিয়ায় আইএস-এর ডেরাগুলির উপরে বোমাবর্ষণ শুরু করে দিল ফরাসি বিমানবাহিনী।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৪২
নিশানায় আইএস। রানওয়েতে ফরাসি যুদ্ধবিমান।

নিশানায় আইএস। রানওয়েতে ফরাসি যুদ্ধবিমান।

প্যারিসে হামলার পরে প্রত্যাঘাত করতে ৪৮ ঘণ্টাও সময় নিলেন না ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। রবিবার রাত থেকেই সিরিয়ায় আইএস-এর ডেরাগুলির উপরে বোমাবর্ষণ শুরু করে দিল ফরাসি বিমানবাহিনী। আর এই কাজে তাদের সব রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা। এ দিন জি ২০-তে এক সাংবাদিক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্পষ্ট ঘোষণা, ‘‘আইএস শয়তানের মুখ। তাদের উপরে বিমান হানা আরও জোরদার হবে।’’ তবে এর পাশাপাশি সেনা নামিয়ে সম্মুখ সমরে যাওয়ার ব্যাপারে যে তিনি পুরনো অবস্থান থেকে সরেননি, সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, এখনই সিরিয়ায় সেনা পাঠাচ্ছে না আমেরিকা।

রবিবার ফরাসি বিমানবাহিনীর লক্ষ্য ছিল ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ঘোষিত রাজধানী রাকা। ফরাসি প্রশাসন একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং জর্ডনের সেনা ছাউনি থেকে উড়ে গিয়েই এই বোমাবর্ষণ করেছে তাদের বাহিনী। আমেরিকা জানিয়েছে, এই যৌথ হামলার প্রসঙ্গে শনিবার রাত থেকেই ফরাসি প্রশাসনের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা চলেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাশটন কার্টারের।

ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, মার্কিন সেনার সাহায্য নিয়ে তাদের ১২টি বিমান রবিবার রাকার ২০টি জঙ্গিডেরায় বোমা ফেলেছে। ধ্বংস করা হয়েছে জঙ্গিদের একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ শিবির এবং একটি অস্ত্রভাণ্ডারও।

সন্দেহভাজনের খোঁজে তল্লাশি ব্রাসেলসে।

তবে রাকায় উপস্থিত বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা জানাচ্ছেন, রবিবার অন্তত ৩০টি বোমা পড়েছে শহরে। উড়ে গিয়েছে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম, জাদুঘর, এমনকী হাসপাতালও। ফরাসি বোমায় বিচ্ছিন্ন হয়েছে সারা শহরের বিদ্যুৎ সংযোগও। আইএসের একটি গণমাধ্যমে জঙ্গিরা অবশ্য পাল্টা দাবি করছে, ফলাও করে হামলা চালালেও তাদের ছুঁতেই পারেনি ফ্রান্সের বোমা। কয়েকটি মানবাধিকার সর্বেক্ষণের তরফে দাবি করা হয়েছে, জঙ্গিডেরা লক্ষ করে হামলা চললেও সেই অর্থে সত্যিই লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি ফরাসি বিমান। প্যারিসে জঙ্গিহানায় বিশ্ব জুড়ে শোরগোল পড়ে যাওয়ায় জঙ্গিঘাঁটিতে যে পাল্টা হামলা চলবে, তা আগেই আঁচ করেছিল আইএস। তাই শুক্রবার রাতে প্যারিসে রক্তক্ষরণের খবর জানাজানি হওয়ার সময়েই রাকার ডেরাগুলো খালি করতে শুরু করে দেয় জঙ্গিরা।

তবে গা ঢাকা দিয়ে যে শেষরক্ষা হবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন যৌথবাহিনীর লাগাতার আক্রমণ। যৌথ বাহিনীর শরিক হলেও আগে কখনও পশ্চিম এশিয়ায় এতটা আক্রমণাত্মক হয়নি ফ্রান্স। জঙ্গিদের উপর চাপ বাড়াতে সোমবার সিরিয়ায় বিমান হানা চালিয়েছে আমেরিকাও। পূর্ব সিরিয়ার ডের আল-জোর প্রদেশে জঙ্গিদের ১১৬টি তেল পাচারের ট্রাক উড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন বিমান। তাৎপর্যপূর্ণ, এত দিন জঙ্গিডেরা লক্ষ করে হামলা চালালেও এই প্রথম আইএসের মূল অর্থ-ভাণ্ডারকে নিশানা করে হামলা চালাল আমেরিকা। তেলের খনি দখল এবং তেল পাচার করে দিনে লক্ষ লক্ষ ডলার আয় হয় আইএসের।

আজ তুরস্কে জি-২০ শীর্ষ বৈঠক চলাকালীন পশ্চিম এশিয়ায় পদাতিক সেনা নামানোর প্রশ্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একপ্রকার বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্যারিস হানার পরে আইএসকে ঠেকাতে আমেরিকার জঙ্গিদমন-নীতিতে রদবদলের প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকেরা। একাধিক বার প্রশ্ন ওঠে, প্যারিস হামলার পরেও কেন পদাতিক সেনা নামানোর কথা ভাবছেন না প্রেসিডেন্ট? উত্তরে ওবামা বলেন, ‘‘শুধু আমি নয়, আমার ঘনিষ্ঠ সামরিক এবং অসামরিক উপদেষ্টারাও মনে করেন এটা (পদাতিক সেনা নামানো) ভুল সিদ্ধান্ত হবে।’’

তবে কি পশ্চিমী দুনিয়ার বিরুদ্ধে আইএসের জেহাদ ঘোষণাকে লঘু করে দেখছে ওবামা-প্রশাসন? প্রশ্নকর্তাকে তাঁর কড়া জবাব, ‘‘আগের তিনটে প্রশ্নের উত্তরে আমি এই কথাটাই তো বললাম!’’

সমালোচকদের একহাত নিয়ে এ দিন ওবামা বললেন, ‘‘সমালোচকরা এখনও গ্রহণযোগ্য কোনও নীতির খোঁজ দিতে পারেননি। আমার একমাত্র লক্ষ্য আমেরিকার নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কেউ বিকল্প বাতলালে, আমরা সেটা করতেই পারি।’’

আইএস-কে কোণঠাসা করতে সবচেয়ে আগে যে তাদের পরিকাঠামো এবং অর্থনৈতিক ভিতের উপর আঘাত হানতে হবে তা গত সপ্তাহেই ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন শীর্ষ আধিকারিকেরা। তবে সোমবার পর্যন্ত তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি আমেরিকা। তবে তেলের ট্যাঙ্কার লক্ষ করে হামলা চললে সেই বিস্ফোরণে প্রচুর সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কাতেই পিছু হটেছিল মার্কিন সেনা। ফলে জঙ্গিদের পাচার-ব্যবস্থা চলছিল নির্বিঘ্নেই। তবে সোমবার তেলের ট্রাক লক্ষ করে হামলা চালানোর আগে বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করে আমেরিকা। হামলার এক ঘণ্টা আগে দু’টি মার্কিন এফ-১৫এস সামরিক বিমান ডের আল-জোর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেয় লিফলেট। তাতে হামলা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। ওই এলাকায় সার দিয়ে দাঁড়ানো ২৯৫টি তেলের ট্যাঙ্কারের চালককে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকে এলাকা ছাড়ার আর্জি জানানো হয়। দিন কয়েক আগেই মার্কিন সেনাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কুর্দ ও ইয়াজিদি বাহিনী ইরাকের মসুলের একটি রাস্তা খুঁড়ে যান চলাচল থামিয়ে দেয়। রাস্তাটি জঙ্গিদের তেল পাচারের অন্যতম প্রধান রাস্তা। আর তার পরই ফরাসি ও মার্কিন সেনার যৌথ হামলায় ধনে-প্রাণে আক্রান্ত আইএস! আর জি-২০ শীর্ষ বৈঠক থেকে আজও আইএস-কে উৎখাত করার বার্তা দিলেন ওবামা। বললেন, ‘‘লক্ষ্য একটাই— বর্বর এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা।’’ বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও যে জঙ্গিগোষ্ঠীকে ছাড়া হবে না, স্পষ্ট করে দিয়েছেন ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী লরেন ফ্যাবিয়াসও। বলেছেন, এই যুদ্ধ জারি থাকবে।

সোমবার রয়টার্স ও এপি-র ছবি।

syria france america air strike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy