শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা ব্যর্থ হলে বিকল্প ব্যবস্থার জন্য তৈরি মার্কিন নৌসেনা, খবর পেন্টাগন সূত্রের। —ফাইল চিত্র।
আগ্রাসী ভাবে নয়, শান্তিপূর্ণ উপায়েই মেটাতে হবে দক্ষিণ চিন সাগরের সমস্যা। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন্স সহ সবক’টি দেশকে এই পরামর্শই দিল আমেরিকা। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ না থাকলে তা মোকাবিলার জন্যও আমেরিকা প্রস্তুত থাকছে। খবর পেন্টাগন সূত্রের। তবে সুর নরম করছে চিনও। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় সব দেশেরই মেনে চলা উচিত বলে যে মন্তব্য ভারত করছে, তার জবাবে চিনা বিদেশ বলছে, চিন আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতেই চায়।
দক্ষিণ চিন সাগরের যতটা এলাকাকে চিন ঐতিহাসিক ভাবে নিজেদের বলে দাবি করছে, তা আসলে চিনের এলাকা নয়। রায় দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের। ঐতিহাসিক ভাবেই চিনের এই দাবি ভিত্তিহীন, বলেছে ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ধাক্কা খেয়েছে তাইওয়ানও। স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ ইতু আবা বা তাইপিং এত দিন তাইওয়ানের দখলে ছিল। ওই এলাকার উপরে তাইওয়ানের কোনও অধিকার নেই বলেও আদালত জানিয়েছে। এই রায় ঘোষিত হওয়ার পর বেজিং কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় চিন মানছে না, জানানো হয়েছিল বেজিং-এর তরফে। তাইওয়ান আরও এক ধাপ এগিয়ে ইতু আবার উপকুলে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে দিয়েছিল। নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে তাইওয়ান বদ্ধপরিকর, জানানো হয়েছিল সে দেশের তরফে।
অন্য দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় যে সব দেশকে স্বস্তি দিয়েছে, সেই ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছিল। ইন্দোনেশিয়া স্থির করেছিল নাটুনা দ্বীপে মৎস্যজীবীদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ওই দ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতেই ইন্দোনেশিয়া এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছিল। ফিলিপিন্সের মৎস্যজীবীরা যে ভাবে স্কারবোরো শোল এবং স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ থেকে চিনা বাহিনীর দ্বারা বিতাড়িত হয়েছিল, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের উপর ভিত্তি করে সেই হেনস্থার জবাব দেওয়ার দাবি উঠতে শুরু করেছিল ফিলিপিন্সের অন্দরেও। কিন্তু মার্কিন হস্তক্ষেপে দু’দেশই ধীরে চলো নীতি নিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রত্যেক দেশ নিজেদের জলসীমা নতুন করে নির্ধারণ করে নিক, এমন বার্তাই আমেরিকার তরফে থেকে দেওয়া হয়েছে ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামকে।
আরও পড়ুন: কেন এত উত্তপ্ত দক্ষিণ চিন সাগর? জরুরি ১০টি তথ্য
চিনের তরফেও কিন্তু কিছুটা বদলে গিয়েছে অবস্থান। রায় ঘোষণা হওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বেজিং যতটা আক্রমণাত্মক ছিল, এখন আর ততটা নয়। মঙ্গলবার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক আন্তর্জাতিক আদালতের রায় প্রসঙ্গে বলেছিল, ‘‘ভারত মনে করে, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই রাষ্ট্রপুঞ্জ প্রণীত আন্তর্জাতিক জলভাগ আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখা উচিত।’’ ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে আরও বলা হয়, ‘‘হুমকি বা বলপ্রয়োগ না করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান করা উচিত। যে ধরণের আচরণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং সমস্যা বাড়াতে পারে, সেই ধরনের আচরণের বিষয়ে সংযম দেখানো উচিত।’’ ভারতের এই বার্তা যে মূলত চিনের উদ্দেশেই, তা বেজিং-এর বুঝতে বাকি থাকেনি। কারণ আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ঘোষিত হওয়ার পর থেকে হুমকি দেওয়া এবং শক্তিপ্রদর্শনের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছিল চিনই। বুধবার সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে চিনা বিদেশ মন্ত্রক আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান জানানোর কথাই বলেছে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লু ক্যাং বুধবার বলেন, ‘‘যদি এটা বলা হয় যে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে আন্তর্জাতিক আইনকে সম্পূর্ণ ভাবে মেনেই, তা হলে আমার মনে হয়, চিনের সরকার ঠিক সেই পথেই হাঁটছে।’’ ভারতের বিবৃতিকে নস্যাৎ করার পথে হাঁটেনি চিন। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে মানা হবে না, এমন কথাও আর নতুন করে বলা হয়নি।
মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, ‘‘আমরা শান্তির আহ্বান জানাচ্ছি, ওই অঞ্চলের সব দেশকে চিনের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিতে চাইছি না, কারণ সে ক্ষেত্রে একটা ভুল বার্তা যাবে যে আমেরিকা চিনের মোকাবিলা করতে অনেকগুলি দেশকে নিয়ে জোট বেঁধেছে।’’
তবে পেন্টাগন সূত্রের খবর, বিকল্প পথও খোলা রাখছে আমেরিকা। যদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়, তা হলে আন্তর্জাতিক জলসীমা এবং আকাশসীমার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মার্কিন বায়ুসেনা এবং নৌসেনা প্রস্তুত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy