অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে দক্ষিণ-পূর্ব জর্জিয়ায় হুন্ডাইয়ের কারাখানায় হানা দিল মার্কিন তদন্তকারীদের বিশাল একটি দল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই এই তল্লাশি অভিযান বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার তল্লাশির পর ওই কারখানা থেকে ৪৭৫ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দা। এই দেশটির সঙ্গে আমেরিকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আধিকারিকদের উল্লেখ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, এই শ্রমিকদের দক্ষিণ কোরিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে। দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সকাল জর্জিয়ার সাভান্নাথ থেকে ২৫ মাইল পশ্চিমে এলাবেল এলাকায় হুন্ডাইয়ের কারখানাটিতে হানা দেয় মার্কিন বাহিনী। রাত ৮টা পর্যন্ত তল্লাশি চলে। কারখানাটিতে মূলত গাড়ির ব্যাটারি নির্মাণের কাজ চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অন্তত ৫০০ জন অফিসার কারখানায় গিয়েছিলেন। প্রথমেই সকল শ্রমিককে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে বলা হয়। একে একে সকলের পরিচয়পত্র দেখতে চান আধিকারিকেরা। জানতে চান জন্মতারিখ, সামাজিক নিরাপত্তা নম্বরের (সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর) মতো কিছু তথ্য। যাঁদের কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের কারখানা থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। যাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বলে সন্দেহ হয়েছে, তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। যাঁরা ছাড়া পেয়েছেন, তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি করে সম্মতিসূচক চিরকুট, দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।
আরও পড়ুন:
ধৃত শ্রমিকদের মধ্যে ৩০০-র বেশি দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক, সে দেশের সরকার এই পরিসংখ্যান দিয়েছে। আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশন বিভাগের বিশেষ এজেন্ট স্টিভেন স্ক্র্যাঙ্ক বলেন, ‘‘ধৃতদের কেউ কেউ বেআইনি ভাবে আমেরিকায় ঢুকেছেন, কারও ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে এবং কারও ভিসা মকুব করে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে।’’ হুন্ডাই কারখানা থেকে ধৃতদের মধ্যে মেক্সিকোর ২৩ জন নাগরিকও রয়েছেন। গ্রেফতারির পর এই শ্রমিকদের ফোকস্টন অভিবাসী আটককেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা হুন্ডাইয়ের কারখানা থেকে আরও ১০০ মাইল দক্ষিণে। জর্জিয়ার এই তল্লাশি অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আমেরিকার অভিবাসন ও শুল্ক দফতর, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতর, জর্জিয়া নাগরিক নিরাপত্তা দফতর, শ্রম দফতর, এফবিআই, সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর আধিকারিকেরা।
আমেরিকা সরকারের পদক্ষেপের পর নড়েচড়ে বসে দক্ষিণ কোরিয়া। আমেরিকায় কূটনীতিবিদদের পাঠিয়ে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাজধানী সোলেতে আমেরিকার দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং এই ঘটনার পর জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসেছিলেন। ধৃত কোরীয়দের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপের নির্দেশ দেন তিনি। কোরিয়ার বিদেশমন্ত্রী চো হিউন জানান, প্রয়োজনে তিনি নিজে ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। তার পরেই জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
উল্লেখ্য, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম থেকেই অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প। দেশ জুড়ে ধরপাকড় শুরু করেছেন। সীমান্তে বাড়িয়েছেন নজরদারি। ভারতীয়দের অনেককেও দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। এমনকি, অবৈধ অভিবাসনের জন্য সীমান্তবর্তী কানাডা এবং মেক্সিকোর দিকে আঙুল তুলেছিলেন তিনি। দুই দেশের উপর চড়া শুল্কও আরোপ করেছিলেন। সেই থেকে আমেরিকার নানা প্রান্তে অবৈধ অভিবাসীর খোঁজে তল্লাশি চলছে। জর্জিয়ার ঘটনাকে এই পর্বে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অভিবাসী তল্লাশি অভিযান বলা হচ্ছে।