বাণিজ্যিক দিক থেকে আমেরিকার অন্যতম প্রধান বন্ধুরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদেরও শুল্কচিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ভারতের সঙ্গে এখনও বাণিজ্যিক বোঝাপড়া হয়ে ওঠেনি আমেরিকার। নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটন দু’পক্ষই বলছে, শীঘ্রই বাণিজ্যচুক্তি হয়ে যাবে বলে তারা আশা করছে। কিন্তু আলোচনা কত দূর এগিয়েছে, তা নিয়ে কোনও পক্ষই বিস্তারিত মন্তব্য করছে না প্রকাশ্যে।
সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে কৃষিজাত পণ্য-সহ কিছু ক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকার মধ্যে দর কষাকষি চলছে। বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকার সঙ্গে দর কষাকষিতে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কৃষি এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে কোনও আপস করা উচিত নয় ভারতের। ওয়াশিংটন যে শুধু ভারত নয়, আরও অন্য দেশগুলির সঙ্গেও বাণিজ্যিক বোঝাপড়া নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে, তার উপরেও গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা। অর্থনৈতিক চিন্তন সংস্থা ‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’ (জিটিআরআই)-এর কর্তা অজয় শ্রীবাস্তব পিটিআইকে জানিয়েছেন, এই ক্ষেত্রে তাড়াহুড়োর বদলে সাবধানী পদক্ষেপই শ্রেয়।
ট্রাম্প এখনও পর্যন্ত যে দেশগুলিতে শুল্ক-চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে সর্বনিম্ন শুল্ক রয়েছে ২০ শতাংশ। সর্বোচ্চ রয়েছে ৫০ শতাংশ। শনিবারই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মেক্সিকোর উপর ৩০ শতাংশ করে শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেছেন তিনি। কানাডার উপর তারও আগে শুল্ক ঘোষণা করে দিয়েছে আমেরিকা। ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকার তিন অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক ‘বন্ধু’র উপরেই শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রায় ১৮.৫ শতাংশ পণ্য আমদানি করে আমেরিকা। তাদের উপর ৩০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মেক্সিকো থেকে আমেরিকা আমদানি করে ১৫.৫ শতাশ পণ্য। তাদের উপরেও ৩০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে। আমেরিকার বাজারে কানাডা থেকে আসে প্রায় ১২.৬ শতাংশ পণ্য। তাদের উপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:
বস্তুত, গত কয়েক মাস ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনা চালিয়ে গিয়েছে। তার পরেও ট্রাম্পের শুল্ক-চিঠি পৌঁছে গিয়েছে তাদের কাছে। গত এপ্রিলে যেখানে ২০ শতাংশ শুল্কের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প, এ বার তা বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করে দিয়েছেন। মেক্সিকোর উপরেও শুল্কের হার ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করেছেন তিনি। কানাডার উপর চাপিয়েছেন ৩৫ শতাংশ শুল্ক। চিনের থেকে কানাডা হয়েই নিষিদ্ধ ওষুধ ফেন্টানিল আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করে বলে আগে থেকেই অভিযোগ তুলে আসছিলেন ট্রাম্প।
তবে ঘটনাচক্রে, চিনের সঙ্গেই সকলের আগে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলেছে আমেরিকা। গত কয়েক মাসে শুল্কযুদ্ধে চিনের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছিল ওয়াশিংটন এবং বেজিং। দু’পক্ষই একে অন্যের উপর শুল্ক এবং পাল্টা শুল্কের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল। আমেরিকার তরফ থেকে শুল্ক বৃদ্ধি করতে করতে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছিল। চিনও দফায় দফায় শুল্ক বৃদ্ধি করে তা ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সমঝোতা হয়ে গিয়েছে। চুক্তির বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তবে গাড়ি, রোবট, টার্বাইন, যুদ্ধবিমান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ধাতু এবং কিছু খনিজের উপর ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেজিং। পরিবর্তে ওয়াশিংটনও ইথেন, বিমানের যন্ত্রাংশ-সহ আরও কিছু প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি চিনের উপর ভিসায় কড়াকড়ির যে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল আমেরিকা, তা থেকেও সরে আসে ট্রাম্প প্রশাসন।