আমেরিকার সরকারে ‘শাটডাউন’ ৩৬তম দিনে পড়ল। এর মাঝেই দেশের ৪০টি বড় বিমানবন্দরের উড়ানে ১০ শতাংশ কাটছাঁটের কথা ঘোষণা করলেন মার্কিন পরিবহণ সচিব সিন ডাফি। কারণ হিসাবে এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। ‘শাটডাউন’-এর জন্য এই সমস্ত দফতরে কর্মীদের গত ৩৬ দিন ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই উড়ানে কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
বুধবার (স্থানীয় সময়) হোয়াইট হাউস থেকে উড়ানে ১০ শতাংশ কাটছাঁটের কথা ঘোষণা করেছেন ডাফি। শুক্রবার থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা। তবে তিনি জানিয়েছেন, ডেমোক্র্যাটেরা যদি সরকারের সিদ্ধান্তে সম্মতি দেন, তবে শীঘ্রই ‘শাটডাউন’ উঠে যাবে এবং বিমান সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও কার্যকর করার প্রয়োজন পড়বে না। অনেকের মতে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপক্ষের উপর কিছুটা চাপ সৃষ্টিও করতে চাইছে ট্রাম্পের সরকার।
আরও পড়ুন:
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, উড়ানে কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আমেরিকা জুড়ে বিমানযাত্রায় সমস্যা বাড়বে। অনেক বিমান বাতিল করে দেওয়া হবে। তা ছা়ড়া, বিমানের ওঠানামাও নির্ধারিত সময়ে হবে না। অনেক ক্ষেত্রে দেরি হতে পারে। যাত্রিবাহী বিমান তো বটেই, আকাশপথে মাল পরিবহণেও বিঘ্ন ঘটবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে। উদাহরণ হিসাবে শিকাগো বিমানবন্দরের কথা বলা যায়। ১০ শতাংশ কাটছাঁটের অর্থ, সেখানে দিনে ১২১টি উড়ান কম থাকবে। অথবা, কমে যেতে পারে বিমানের সাড়ে ১৪ হাজার আসন।
সরকারের এই ঘোষণার পর মার্কিন সংস্থা এয়ারলাইন্স অফ আমেরিকা একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, ১০ শতাংশ কাটছাঁটের প্রকৃত অর্থ কী, তা সরকারের সঙ্গে কথা বলে তারা বোঝার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তারা যাত্রীদের উদ্দেশে পৃথক বিবৃতি জারি করবে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আমেরিকার ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ ‘শাটডাউন’। গত ৩৬ দিনে ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রক বেতন পাননি। ৫০ হাজার পরিবহণ নিরাপত্তা এজেন্টকেও বেতন দেওয়া যায়নি। তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন।
কোন ৪০টি বিমানবন্দরের উড়ান কাটছাঁট করা হবে, নাম এখনও প্রকাশ করেনি হোয়াইট হাউস। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, নিউ ইয়র্ক সিটি, ওয়াশিংটন, শিকাগো, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডালাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে। এর ফলে দিনে ১৮০০টি করে উড়ান এবং ২ লক্ষ ৬৮ হাজার আসন কমে যেতে পারে আমেরিকায়। ভারত থেকে যে সমস্ত বিমান আমেরিকায় যায়, তা-ও বাতিল হতে পারে।
‘শাটডাউন’ কী
প্রতি অর্থবর্ষে সরকারের বিভিন্ন দফতরে কাজ চালানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসকে অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। অর্থবর্ষ শুরু হয় ১ অক্টোবর থেকে। এই সময়ের মধ্যে সেনেট সদস্যেরা একমত হয়ে ব্যয়বরাদ্দ চূড়ান্ত করতে পারেননি। ফলে ১ অক্টোবর থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ১০০ সদস্যের মার্কিন সেনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩। যে কোনও বিল পাশ করাতে অন্তত সাত জন ডেমোক্র্যাটের সমর্থন তাঁদের প্রয়োজন হয়। সরকারি তহবিল সংক্রান্ত বিলে তা হয়নি। সেই কারণে সেনেটের অনুমোদনও মেলেনি।