হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলায় আদালতে ধাক্কা খেয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদেশি ছাত্রদের ভর্তির বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করার সরকারি সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। তবুও দমেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি পড়ুয়াদের নিয়ে সরব হলেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘হার্ভার্ডে কোন বিদেশি পড়ুয়ারা পড়েন, তা জানতে চাই!’’
দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন ট্রাম্প। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপও করেছে তাঁর প্রশাসন। অনুদান বন্ধ থেকে শুরু করে করমুক্ত মর্যাদা প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সর্বশেষ পদক্ষেপ বিদেশি পড়ুয়া ভর্তির ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া। যদিও আদালতের নির্দেশে, প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত। তবে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সুর নরম করতে নারাজ ট্রাম্প।
ট্রাম্পের প্রশ্ন, হার্ভার্ড কেন বলছে না তাদের ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থীই বিদেশি? এমন দেশ থেকেও পড়ুয়া হার্ভার্ডে আসেন, যাদের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভাল নয়। ওই সব দেশ কখনও তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করে না। এমনকি কিছু করার সদিচ্ছাও নেই। তবে এখানেই থামেননি ট্রাম্প। হার্ভার্ডের বিদেশি পড়ুয়া এবং তহবিল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রবিবার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। সেই পোস্টেই ট্রাম্প দাবি করেন, ‘‘আমরা জানতে চাই, হার্ভার্ডে বিদেশি পড়ুয়া কারা? এটা আমাদের যুক্তিসঙ্গত অনুরোধ। কারণ, আমরা হার্ভার্ডকে হাজার হাজার কোটি ডলার দিচ্ছি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছুই জানাচ্ছেন না। আমরা বিদেশি পড়ুয়াদের নাম এবং তাঁরা কোন দেশের নাগরিক, তা জানতে চাই।’’ তার পরেই ট্রাম্প দাবি করেন, ‘‘হার্ভার্ডের কাছে পাঁচ কোটি ২০ লক্ষ ডলার রয়েছে।’’ হার্ভার্ডের উদ্দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আপনারা সেই অর্থ ব্যবহার করুন। টাকা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা বন্ধ করুন।’’
প্রসঙ্গত, হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমেরিকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্যালেস্টাইনের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। আমেরিকার প্রশাসনের অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইহুদি-বিদ্বেষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ইহুদি-বিদ্বেষ বন্ধ করার জন্য বেশ কিছু শর্ত দিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। যার মধ্যে ছিল নিয়োগ ও শিক্ষাদানে পরিবর্তন করা-সহ বেশ কিছু শর্ত। তবে সরকারের দেওয়া শর্ত মানতে রাজি ছিলেন না হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। সরকারের কাছে মাথা নত না করায় বার বার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছে। দফায় দফায় অনুদান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও এই বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। সেই আবহেই বিশ্ববিদ্যালয়ের করমুক্ত মর্যাদা প্রত্যাহারের কথাও বলেন ট্রাম্প। দিন কয়েক আগেই আমেরিকা প্রশাসন হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা কেড়ে নেয়। ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আইন মেনে চলার ব্যর্থতার জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ট্রাম্প সরকার বিদেশি পড়ুয়া ভর্তির ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার ছ’দফা শর্ত দিয়েছিল হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষকে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশি পড়ুয়াদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে তারা আবার নতুন শিক্ষাবর্ষে বিদেশি পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে পারবে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাতারাতিই আদালতের দ্বারস্থ হন হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বিদেশি পড়ুয়া ভর্তির উপর ট্রাম্প সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ স্থগিত করে বস্টনের ফেডারেল আদালত।