Advertisement
E-Paper

চড়া শুল্ক চাপানো আরও এক দেশের রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান ট্রাম্প! বিশ্ব বাণিজ্যে কি কৌশল বদলাচ্ছে আমেরিকা

ভারত এবং চিন— দুই দেশের উপরেই চড়া হারে শুল্ক চাপিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। ভারতের উপর ৫০ শতাংশ এবং চিনের উপর ৫৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক কার্যকর রয়েছে। দুই দেশের প্রতিই বর্তমানে সুর নরম করেছেন ট্রাম্প।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ২১:০২
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

বিশ্ব বাণিজ্যে কি কৌশল বদলাতে শুরু করল আমেরিকা? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে। ব্যবসা নিয়ে ভারতের সঙ্গে ফের আলোচনা শুরু করেছে আমেরিকা। চিনের প্রসঙ্গেও সুর নরম করেছেন তিনি। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জ়িনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকেও বসার কথা রয়েছে তাঁর। এই দুই দেশের উপরেই বর্তমানে চড়া হারে শুল্ক চাপিয়ে রেখেছে আমেরিকা। এ বার মার্কিন শুল্ককোপের মুখে পড়া আরও এক দেশের সঙ্গে আলোচনার দরজা খুলতে উদ্যোগী ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসের আধিকারিক সূত্রে রয়টার্স জানাচ্ছে, ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান ট্রাম্প। অক্টোবরের শেষেই মালয়েশিয়ায় সাক্ষাৎ হতে পারে দু’দেশের প্রেসিডেন্টের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট লুলার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব একটা মসৃণ নয়। বরং, ব্রাজ়িলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসেনারোর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক তুলনামূলক ভাবে ভাল ছিল বলেই মনে করেন অনেকে।

২০২২ সালে ব্রাজ়িলের সাধারণ নির্বাচনে বামপন্থী নেতা লুলার কাছে হেরে যান অতি দক্ষিণপন্থী বোলসেনারো। ভোটে হেরে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর সমর্থকেরা ব্রাজ়িলের সংসদ ভবন আক্রমণ করার চেষ্টা করেন। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে মামলা হয়। ব্রাজ়িলের আদালত বোলসেনারোকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করার জন্য অভিযুক্ত করে। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। ট্রাম্পের দাবি, বোলসেনারোর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে ব্রাজ়িল এবং আমেরিকার সম্পর্ক ক্রমে তলানির দিকে গিয়েছে।

ভারতের মতো ব্রাজ়িলের উপরেও ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। চড়া হারে শুল্ক চাপানোর সময়ে বোলসেনারোর প্রসঙ্গের পাশাপাশি ব্রাজ়িল এবং আমেরিকার ‘অন্যায্য বাণিজ্য ঘাটতি’র কথাও উল্লেখ করেছিলেন ট্রাম্প। ঘটনাচক্রে, ব্রাজ়িল, চিন এবং ভারত— তিন দেশই আন্তর্জাতিক জোট ‘ব্রিক্‌স’-এর অংশ। সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন সময়ে ‘ব্রিক্‌স’কে নিশানা করতে দেখা গিয়েছে ট্রাম্পকে। এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সদস্যদের উদ্দেশেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের চাপানো শুল্ক নিয়ে গত মাসেও ‘ব্রিক্‌স’ গোষ্ঠীর দেশগুলির একটি ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছিলেন লুলা। সেখানে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বিশ্ব বাণিজ্যে কী ভাবে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়, তা নিয়ে আলোচনায় হয় সেপ্টেম্বরের ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে।

তবে বাণিজ্য ঘিরে এই কূটনৈতিক টানাপড়েনের মাঝেই সুর কিছুটা নরম করতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। চলতি মাসের শুরুর দিকে লুলার সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের। ব্রাজ়িলের তরফে সেই সময় জানানো হয়, দু’জনের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ আলোচনা হয়েছে। দু’জন যে মুখোমুখি আলোচনায় বসতে চান, সে কথাও তখন জানিয়েছিল ব্রাজ়িল। এ বার হোয়াইট হাউস থেকেও সেই একই কথা জানানো হল।

শুধু ব্রাজ়িল নয়, চড়া হারে শুল্ক চাপানো অন্য দুই দেশ— চিন এবং ভারতের সঙ্গেও সম্প্রতি ‘বন্ধুত্বের’ কথা বলতে শোনা গিয়েছে ট্রাম্প। বাণিজ্য জট কাটাতে ওয়াশিংটন এবং বেজিংয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে এখনও সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসেনি। এ অবস্থায় মঙ্গলবারই ট্রাম্প জানিয়েছেন, চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘‘আমি সব সময় চিনের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতে চাই। কিন্তু চিন বছরের পর বছর ধরে আমাদের প্রতি কঠোর আচরণ করে আসছে।’’ ট্রাম্প এ-ও মনে করেন, তাঁর পূর্বতন প্রেসিডেন্টদের ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ ভাল না-হওয়ার সুযোগ নিয়েছে চিন।

ভারত এবং আমেরিকার ‘বাণিজ্য ঘাটতি’ এবং রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা নিয়ে দিল্লির উপরেও অসন্তুষ্ট ট্রাম্প। এর জন্য ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে রেখেছেন তিনি। ট্রাম্প দাবি করেন, ভারতের অর্থনীতি ‘মৃত’। তবে সেই ট্রাম্পই এখন ভারতের সঙ্গে ফের বাণিজ্য আলোচনা শুরু করেছেন। সম্প্রতি ভারত থেকে ঘুরে গিয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। ভারতের প্রতিনিধিদলও আমেরিকায় গিয়েছে। গত মাসের শুরুতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, সাম্প্রতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। মোদীও সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুভূতি এবং দুই দেশের সম্পর্কের ইতিবাচক মূল্যায়নকে উপলব্ধি করতে পারছি। তার প্রতিদানও দেওয়ার চেষ্টা করব।’’ ট্রাম্প এ-ও জানান, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। শীঘ্রই একটি সফল সিদ্ধান্তে পৌঁছোবে দুই দেশ। মোদীকে তাঁর ‘অন্যতম ভাল বন্ধু’ বলেও সম্মোধন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

US Tariff Donald Trump Brazil China
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy