Advertisement
E-Paper

নয়াদিল্লির ঢালাও প্রশংসা ওয়াশিংটনের! আমেরিকার বাণিজ্যসচিব বললেন, ভারতকে সম্মান করেন ট্রাম্প!

ভারতের প্রতিভা এবং ভারতের অর্থনীতির ঢালাও প্রশংসা আমেরিকার। ওয়াশিংটনে এক আলোচনাসভায় সে কথা তুলে ধরেছেন মার্কিন বাণিজ্যসচিব। তিনি জানান, ট্রাম্প ভারতকে ভীষণ সম্মান এবং প্রশংসা করেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ০৮:০৭
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্মান করেন ভারতকে। ভারতের ভীষণ প্রশংসাও করেন। ওয়াশিংটনে এক আলোচনাসভায় এমনটাই জানিয়েছেন আমেরিকার বাণিজ্যসচিব হোয়ার্ড লুটনিক। তাঁর বক্তব্য, ট্রাম্প যে ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিতে চলেন, সেটির অর্থ ‘শুধুমাত্র আমেরিকা’ নয়। ট্রাম্পের ভাবনা প্রসঙ্গে লুটনিক বলেন, “প্রথমে তাঁকে (ট্রাম্পকে) আমাদের ঘরের দিকটা দেখতে হবে, যাতে আমেরিকাকে উন্নত এবং মজবুত করা যায়। তার পরে তিনি ‘বন্ধুরাষ্ট্র’গুলির বিষয়টি দেখবেন। ভারতের দিকগুলিও যাতে দেখা হয়, সেটিও তিনি নিশ্চিত করবেন।”

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করার সময় নয়াদিল্লির ঢালাও প্রশংসা করেন লুটনিক। ট্রাম্পের বাণিজ্যসচিবের মতে, ভারতবাসীর মধ্যে যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তা ভারতের অর্থনীতিকে সব সময় ঊর্ধ্বমুখী রাখবে। লুটনিক বলেন, “এর জন্যই ভারতে যা করা যায়, তা অন্য অনেক দেশেই করা যায় না।” ভারতের অর্থনীতির প্রশংসা করার সময় তিনি জানান, সাধারণ ভারতবাসীদের দৃঢ় সংকল্পই হল নয়দিল্লির অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি। ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে আগামী দিনে আরও সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হবে বলেই মনে করছেন ট্রাম্পের বাণিজ্যসচিব।

ওয়াশিংটনের ওই আলোচনাসভায় আমেরিকার ভিসা এবং অভিবাসন সংক্রান্ত কড়াকড়ি নিয়েও প্রশ্ন করা হয় লুটনিককে। সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়েই ভারতীয় উদ্যোগপতিদের প্রশংসা করেন তিনি। ভারতীয় উদ্যোগপতিদের আমেরিকায় সাফল্য এবং আমেরিকায় অনেকগুলি ‘বড় সংস্থা’ যে ভারতীয়েরা পরিচালনা করছেন, তা-ও তুলে ধরেন আমেরিকার বাণিজ্যসচিব। তাঁর কথায়, ভারতীয়েরা উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী হিসাবে দুর্দান্ত। একই সঙ্গে তাঁরা ‘স্মার্ট’, চিন্তাশীল, সব দিক থেকে শিক্ষিত।

ভারতে জিনিস তৈরি করার জন্য আমেরিকা সংস্থাগুলিকে উৎসাহ দেবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল লুটনিককে। আমেরিকার বাণিজ্যসচিব জানান, ঘরোয়া বাজারে বিক্রির জন্য জিনিস আমেরিকায় তৈরি করানো লক্ষ্য ট্রাম্প প্রশাসনের। এ ছাড়া ভারতে জিনিস উৎপাদন করলে আমেরিকা ‘আনন্দিত’ই হবে বলে জানান তিনি।

আলোচনায় উঠে আসে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তির প্রসঙ্গও। তিনি জানান, যে চুক্তি সম্পন্ন হতে দুই-তিন বছর সময় লাগার কথা, তা এক মাসের মধ্যে সেরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এই চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী আমেরিকার বাণিজ্যসচিব। লুটনিক বলেন, “ব্যাপারটা হল, যে দেশগুলি আগে (বাণিজ্য নিয়ে সমঝোতায়) আসবে, তারা ভাল চুক্তি পাবে। আমার মনে হয়, ভারতও ভীষণ ভাবে চেষ্টা করছে প্রথমের দিকে আসা দেশগুলির মধ্যে থাকতে। আমি এটার প্রশংসাই করছি। তবে এই ধরনের চুক্তিতে আগে দুই-তিন বছর সময় লাগত। এখন আমরা এক মাসের মধ্যে সেটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। কোনও দু’টি দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমনটা সাধারণত দেখা যায় না।”

বস্তুত, ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই আলোচনা চলছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে গত ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই সময়েই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে উভয়ের মধ্যে আলোচনা হয় এবং দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের পর থেকেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।

ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়ে গিয়েছে গত কয়েক মাসে। কখনও আমেরিকার প্রতিনিধিদল ভারতে এসেছে, আবার কখনও ভারতের প্রতিনিধিদল আমেরিকা গিয়েছে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য। গত মাসেও ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে আমেরিকার বাণিজ্যসচিবের।

সম্প্রতি ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি প্রায় সম্পন্ন হয়ে এসেছে। লুটনিকও ফের এক বার সেই আভাসই দিয়ে রাখলেন। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে তাড়াহুড়োর কথা বললেও আমেরিকার বাণিজ্যসচিবের মতে, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন হতে খুব বেশি দেরি নেই। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় এটি (বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা) খুবই ভাল পর্যায়ে রয়েছে। শীঘ্রই আপনারা আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি দেখতে পাবেন বলে আশা করছি। কারণ, আমরা এমন একটি জায়গা খুঁজে পেয়েছি, যা সত্যিই দু’দেশের জন্যই কার্যকর।”

গত মাসের শেষে আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন ভারতীয় বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। ওই সময় সে দেশের বিদেশ উপ-সচিব ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউয়ের সঙ্গেও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয় ভারতীয় বিদেশসচিবের। বস্তুত, ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্কনীতি অনুসারে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ শুল্কের কথা বলা হয়েছিল। যদিও পরে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়। আগামী ৯ জুলাই ওই ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার মধ্যেই আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে বিভিন্ন দেশ। যদিও সম্প্রতি আমেরিকার শুল্কনীতি ধাক্কা খেয়েছে সে দেশের আদালতে। আমেরিকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক একটি আদালত জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প তাঁর যে আইনি বাধ্যবাধকতা, তার বাইরে বেরিয়ে কাজ করেছেন।

India US Trade Narendra Modi Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy