ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকা ইরানে হামলা চালাবে কি না, সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দু’সপ্তাহ সময় নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই মন্তব্যের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। ওই তিন পরমাণুকেন্দ্রের মধ্যে ইসফাহানে মার্কিন হামলার মুহূর্তের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এল।
ইরানের পরমাণু প্রকল্পের জন্য ইসফাহান, ফোরডো এবং নাতান্জ়— এই তিন পরমাণুকেন্দ্রই জরুরি। সেগুলিকেই নিশানা করেছে আমেরিকা। রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরানের নাতান্জ়, ফোরডো এবং ইসফাহান পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলা চালাতে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ এবং ‘বি ২ বম্বার’ ব্যবহার করা হয়েছে। রয়টার্স-এর প্রতিবেদন বলছে, ইরানের ফোরডো পরমাণুকেন্দ্রে ছ’টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ফেলা হয়েছে। জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) নামেও পরিচিত এই বোমা। তা ফেলার জন্য বি ২ স্পিরিট বোমারু বিমানকে ব্যবহার করেছে আমেরিকা, যে বিমান ১৫ টন ওজনের বোমা বহনে সক্ষম।
ইরানে হামলার ঘটনাকে আমেরিকা এবং ইজ়রায়েলের জন্য ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলেও বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি এই বার্তাও দিতে চেয়েছেন যে, প্রয়োজনে এই হামলার তেজ আরও বাড়াতে প্রস্তুত আমেরিকা। শুধু ‘বাঙ্কার বাস্টার’ই নয়, আমেরিকার নৌবাহিনীও টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের দু’টি পরমাণু কেন্দ্র নাতানজ় এবং ইসফাহানে হামলা চালিয়েছে দাবি।
ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে হামলার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছেন মাইকেল উলরিচ নামে এক ব্যবহারকারী। পরে সেই ভিডিয়োটি তারা যাচাই করেছে বলে দাবি করেছে মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’। ৩৭ সেকেন্ডের সেই ভিডিয়োটিতে ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রের চত্বরে বিস্ফোরণের রক্তিম ঝলকানি দেখা গিয়েছে। ‘জিয়োলোকেটর’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে, অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ উল্লেখ করে উলরিচের দাবি, বিস্ফোরণটি পরমাণুকেন্দ্রের সুড়ঙ্গপথের ঠিক মুখেই হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরণে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
আমেরিকার হামলার পর ইরান অবশ্য দাবি করেছে, ওই তিনটি পরমাণুকেন্দ্র থেকে এখনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ লক্ষ করা যায়নি। ফলে ওই এলাকায় জনগণের চিন্তার কোনও কারণও নেই। এর আগে ইজ়রায়েলও ইরানের পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। সে বারও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়নি।
ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য আমেরিকা ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইন ভয়ানক ভাবে লঙ্ঘন করেছে। আজ সকালের ঘটনাগুলি জঘন্য। এর পরিণতি হবে দীর্ঘস্থায়ী। এই ভয়ানক বেআইনি অপরাধমূলক আচরণ নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সকল সদস্যের শঙ্কিত হওয়া দরকার। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম অনুযায়ী আত্মরক্ষা, জনগণের স্বার্থ রক্ষা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার অধিকার ইরানের আছে।’’