Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৩
International News

পাখি বাঁচাতে বিড়াল পোষায় নিষেধাজ্ঞা! ফুঁসছে বাসিন্দারা

বিড়াল পোষার উপর নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছে নিউজিল্যান্ডের একটি গ্রামে।

বিড়াল পোষার উপর নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছে নিউজিল্যান্ডের একটি গ্রামে।

সংবাদ সংস্থা
ওয়েলিংটন শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ১১:২৫
Share: Save:

কিউইদের বিড়ালপ্রীতির কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। বিড়াল নেই, এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর নিউজিল্যান্ডে। বরং দুই, তিন, পাঁচ এমনকী দশটা পর্যন্ত পশমী পোষ্য থাকে অনেক বাড়িতেই। আবার রাস্তা-ঘাটেও সর্বত্র বিড়ালের দাপাদাপি। যেমন দক্ষিণ নিউজিল্যান্ডের উপকূলে ওমাউই গ্রামের লোকসংখ্যা মাত্র ৩৫। কিন্তু সেখানে পোষা এবং জংলি মিলিয়ে বিড়ালের সংখ্যা ৭২।

এ বার এই গ্রাম দিয়েই বিড়াল পোষার উপর নিয়ন্ত্রণ শুরু করল সে দেশের সরকার। নির্দেশ জারি হয়েছে, এই গ্রামে নতুন করে আর কোনও বিড়াল পোষা যাবে না। কারণ জীব বৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অন্যতম প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঘের এই মাসিরা। এদের আক্রমণে নানা প্রজাতির পাখি, বেশ কিছু সরিসৃপ কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছে।

গত মঙ্গলবারই ‘ওমাউই প্ল্যান’ চালু করেছে নিউজিল্যান্ড সরকার। তাতে বলা হয়েছে, আগামী ছ’মাসের মধ্যে গ্রামের পোষ্য বিড়ালের সংখ্যা এবং প্রজাতি-সহ বিস্তারিত বিবরণ নথিবদ্ধ করাতে হবে। পোষ্য-সহ সব বিড়ালের গলায় লাগাতে হবে মাইক্রোচিপ। পোষ্য বিড়ালের মৃত্যুর পর আর নতুন করে বাড়িতে বিড়াল পোষা যাবে না। এর পর সরকার সমস্ত বিড়াল বাজেয়াপ্ত করে নির্বাসনে পাঠাবে। কোনও বাসিন্দা বাধা দিলে জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: বড় পরমাণু হামলার জন্য আদৌ তৈরি নয় আমেরিকা, রিপোর্ট বিজ্ঞানীদের

সরকারের এই ঘোষণায় স্বাভাবিক ভাবেই বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বাড়িতে যেখানে বিড়াল ‘মাস্ট’, তারাই থাকবে না, এটা মেনে নিতে পারছেন না প্রায় কেউই। অধিকাংশেরই বক্তব্য, ‘‘বিড়াল ছাড়া বাঁচব কী করে, এ তো ভাবাই যায় না।’’ ওমাউই গ্রামের বাসিন্দা নিকো জারভিস কার্যত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, বাড়িতে আর ক’টা, অধিকাংশই বিড়ালই তো জঙ্গলে থাকে। একটা বিড়াল না থাকলে তো গোটা বাড়িটাই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।

সরকার বিরোধীরাও সুর চড়িয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, শুধুমাত্র ৩৫ বাসিন্দার একটি গ্রামে বিড়াল বিতাড়নের সিদ্ধান্ত বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের বাঁচাতে পারবে না। তা ছাড়া সাধারণ নাগরিকরাও এই সিদ্ধান্তের বিরোধী। পরিবেশপ্রেমীরাও সিদ্ধান্তের পক্ষে এবং বিপক্ষে দু’ভাগ।

আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রতটে ১৪ ফুটের দৈত্যাকার স্কুইড!

সারা বিশ্বের মধ্যে নিউজিল্যান্ডেই মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি বিড়াল রয়েছে। আবার এই নিউজিল্যান্ডেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় পশু-পাখি। সংখ্যাটা প্রায় চার হাজার। এমনকী, তার মধ্যে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের জাতীয় প্রতীক কিউই পাখিও। সেই কারণেই দু’বছর আগে নিউজিল্যান্ড সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ২০৫০ সালের মধ্যে পাখিদের উপর আক্রমণকারী প্রজাতির সব প্রাণী মেরে ফেলা হবে। হিসাব করে দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর এই ধরনের প্রাণীর আক্রমণেই প্রায় ২৫ হাজার পাখির মৃত্যু হয়।

তবে ২০১৬-র সেই সময় বিড়ালদের সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণটা সম্ভবত কিউইদের বিড়ালপ্রীতি। তবু সেই সময় বাড়ি পিছু সর্বাধিক দু’টি বিড়াল রাখার উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করতে বিল আনা হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার সংসদে সংখ্যার অভাবে সেই বিল পাস হয়নি। তবে এ বার প্রকৃতপক্ষেই বিড়াল নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া শুরু করে দিল নিউজিল্যান্ড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE