Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: সঙ্কটে কিভ, শান্তি বৈঠক চাইছেন জ়েলেনস্কি

এক বার করে বিস্ফোরণের আওয়াজ। তার পরেই সাইরেন। মাটির তলায় বাঙ্কারে বসে শুধু প্রহর গুনছে অর্ধমৃত মানুষগুলো।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২২ ০৫:৩৮
Share: Save:

এক বার করে বিস্ফোরণের আওয়াজ। তার পরেই সাইরেন। মাটির তলায় বাঙ্কারে বসে শুধু প্রহর গুনছে অর্ধমৃত মানুষগুলো।

আর বাকি বিশ্ব আজ টিভির পর্দায় ক্ষণে ক্ষণে দেখে গিয়েছে ‘ব্রেকিং’। রাশিয়া আজ আরও বিধ্বংসী। সব দিক থেকে সাঁড়াশির মতো ইউক্রেনের টুঁটি চেপে ধরতে মরিয়া তাদের বাহিনী। খারকিভ, মারিয়ুপোল, সুমি-সহ বিভিন্ন প্রান্তে নাগাড়ে চলেছে গোলাবর্ষণ। মারিয়ুপোলের একটি মসজিদে আজ বোমা ফেলেছে তারা। আশির বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে। তাঁদের কথা জানা নেই। অপহরণ করা হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের মেলিটোপোল শহরের মেয়রকে। সব চেয়ে উত্তপ্ত রাজধানী কিভ। শোনা যাচ্ছে, আর মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার সুবিশাল কনভয়। হাওয়ায় উড়ছে আতঙ্ক, আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই না কিভের পতন হয়! এই অবস্থায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, জেরুসালেমে শান্তি বৈঠকের আয়োজন করার জন্য ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটকে অনুরোধ করেছেন তিনি।

গত কাল বেশ রাতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আচমকাই ঘোষণা করেন, ‘‘সব কিছু পরিকল্পনা মতো এগোচ্ছে। এ সপ্তাহে দিনের দিন খবর পেয়ে যাবেন।’’ আজ ভোর হতেই খবর মিলল, কিভের প্রায় দোরগোড়ায় রুশ বাহিনী। দিন সাতেক আগে থেকেই শোনা গিয়েছিল, কিভের বাইরে জড়ো হয়েছে রাশিয়ার ৬৪ কিলোমিটার সুদীর্ঘ সশস্ত্র সেনা কনভয়। তারা ক্রমশই আড়েবহরে বেড়েছে। ঠিক কী ছক কষছে রাশিয়া, তা নিয়ে ক্রমেই জল্পনা ছড়িয়েছে। ধীর গতিতে এক-একটি অঞ্চল দখল করতে-করতে এগিয়েছে এই বাহিনী। দখল করা অংশগুলোতে মোতায়েন করেছে তাদের ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধাস্ত্র। আজ শুরু হয়েছে দু’পক্ষের সম্মুখ সমর। স্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলোর দাবি, যুদ্ধ এমনই ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে যে, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা মৃতদেহ তুলে নিয়ে গিয়ে কবর দেওয়ার জন্য কেউ নেই!

যুদ্ধ আজ ১৭ দিনে। ইতিপূর্বে অনেকেই বলেছেন, পোড়খাওয়া রুশ রাষ্ট্রনায়ক ভ্লাদিমির পুতিনের এ বারে হিসেবে কিঞ্চিৎ ভুল হয়ে গিয়েছে। ইউক্রেনের ক্ষমতার আন্দাজ করতে পারেনি তারা। তাই হয়তো এতটুকু পড়শি দেশকে দখল করতে গিয়ে বেকায়দায় মস্কো। যুদ্ধ-বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু বলছেন, স্তালিনের জমানা থেকে এটাই রাশিয়ার সুবিদিত রণকৌশল। তারা এ ভাবেই একটু একটু করে ভাঙতে থাকে বিপক্ষের শক্তিকে। শত্রুর সেনাবাহিনীতে যখন ক্লান্তি চলে আসে, নিঃশেষ হতে হতে ভাঙন ধরতে শুরু করে, তখন তারা আসল যুদ্ধ শুরু করে। ঠিক যা তারা করছে ইউক্রেনে— আকাশপথে লাগাতার গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হানায় শত্রুপক্ষের সশস্ত্র বাহিনীকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা। অতীতে সিরিয়া ও চেচনিয়াতেও ঠিক এটাই ঘটেছিল। এ যুদ্ধে রাশিয়ার নিখুঁত, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী অস্ত্রভান্ডার এবং দক্ষ সেনাবাহিনীকে সব দিক থেকে এগিয়ে রাখছেন বিশেষজ্ঞেরা। তা ছাড়া রয়েছে অভিজ্ঞতা। উল্টো দিকে, ২০১৪ সালের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ইউক্রেন। সে সময়ে রুশ বাহিনীর ক্রাইমিয়া দখল আটকাতে পারেনি তারা। কিন্তু এর পরের আট বছরকে তারা অপব্যয় করেনি। যুদ্ধাস্ত্রের ভান্ডার ও পারদর্শীতা, দুইই বাড়িয়েছে। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্তানিল-বাহিনীকে মনে করিয়ে দিয়ে বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, ‘‘রুশ সেনাবাহিনীর প্রকাণ্ড অস্ত্রভান্ডারের চাপে ইউক্রেনের উৎকর্ষতাও স্রেফ গুঁড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষা।’’

অনেকেই বলছেন, কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। জ়েলেনস্কিও কি সেই ভয়টাই পাচ্ছেন? আজ রাতে তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে তিনি প্রস্তুত। এত দিন বলছিলেন, মস্কো হামলা বন্ধ না করলে তিনি কোনও সমঝোতায় যেতে রাজি নন। আজ আর সেই প্রসঙ্গেই যাননি। জানিয়েছেন, জেরুসালেমে শান্তি বৈঠক আয়োজন করার জন্য তিনি ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘আর কোনও প্রতিনিধি স্তরে আলোচনা নয়... আমি শীর্ষ নেতৃত্ব স্তরে বৈঠকের কথা বলছি।’’ সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, তাঁর এই উদ্যোগ যদি সফল হয়, শুধু রাশিয়া নয়, পশ্চিমের থেকেও তিনি ইউক্রেনের ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ আশা করেন।

প্রায় দূর্গের চেহারা নিয়েছে কিভ। তবে দুর্ভেদ্য নেই। রাজধানীকে ঘিরে ফেলেছে রুশ বাহিনী। এখন শুধু চূড়ান্ত আক্রমণের নির্দেশের অপেক্ষা। কিভের শহরতলিতে আজ লাগাতার হামলা চলেছে। শহরের দক্ষিণপশ্চিমে ভেসেলকিভে আজ দু’বার দুই আকাশছোঁয়া ধোঁয়ার স্তম্ভ তৈরি হয়। আর তার পরেই নাগাড়ে বিস্ফোরণের আওয়াজ। সূত্রের খবর, ওই অঞ্চলে ইউক্রেনের অস্ত্র মজুত ছিল। অস্ত্রাগারে হামলা করে রাশিয়া। তার জেরে কয়েকশো বিস্ফোরণ ঘটে।
দক্ষিণে মারিয়ুপোলে আজও দিনভর হামলা চলেছে। এই বন্দর শহরকে দখল করতে পারলেই ক্রাইমিয়া পর্যন্ত রাস্তা সাফ রাশিয়ার। শিশু ও প্রসূতি হাসপাতালে হামলার পরে আজ মারিয়ুপোলের একটি মসজিদে বোমা ফেলেছে তারা। মসজিদটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৮০-রও বেশি মানুষ। তার মধ্যে ছিল বেশ কিছু শিশু। কত জন প্রাণ হারিয়েছেন, কিছুই জানা যায়নি। তুরস্ক দাবি করেছে, মসজিদে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরা তাদের দেশের নাগরিক। মোট ৮৬ জন ছিল। তার মধ্যে ৩৪টি শিশু ছিল।

শহরটাকে কার্যত বন্দি করে হামলা চালাচ্ছে রুশরা। যুদ্ধক্ষেত্রে আটকে পড়া সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ। বাইরে থেকে খাবার, পানীয় জলও পাঠানো যাচ্ছে না মারিয়ুপোলে। বিদ্যুৎ নেই, ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা নেই। অনেকেই বলছেন, ‘‘রাশিয়ার বোমায় নয়, ঠান্ডাতেই মরে যাবে মানুষগুলো।’’
মারিয়ুপোলের মেয়র আজ জানিয়েছেন, গর্ত খুঁড়ে গণকবর দেওয়ারও উপায় নেই। সব বন্ধ। এক দিকে চলছে সরাসরি সংঘর্ষ, অন্য দিকে বন্দি করা শুরু হয়েছে প্রশাসকদের। খুব অস্পষ্ট একটি ভিডিয়ো ফুটেজ ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে এক ব্যক্তিকে বার করে নিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। সেই ‘বন্দি’ ইউক্রেনের মেলিটোপোল শহরের মেয়র। ইউক্রেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে টুইট করা হয়েছে ভিডিয়োটি। তাদের অভিযোগ, দিনেদুপুরে চোখ বেঁধে প্রকাশ্য স্থান থেকে মেয়র ইভান ফেডোরোভকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে রাশিয়া।

দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের এই ছোট্ট শহরটির কিন্তু যুদ্ধের শুরুতেই পতন ঘটেছিল। মেলিটোপোল সেই থেকে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। অপহরণের ঘটনাটি অবশ্য সাম্প্রতিক বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। প্রকাশ্যে এসেছে আজই। তার পরই আজ রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামেন মেলিটোপোলের মানুষ। তাঁদের দাবি, মেয়রকে মুক্তি দিতে হবে। ফেডোরোভের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কিও। তিনি বলেন, ‘‘যারা আমাদের দেশে ঢুকে আগ্রাসন চালাচ্ছে, এই ঘটনা তাদের দুর্বলতার প্রমাণ। এক জন মেয়রকে ওরা খুন করেছে, আর এক জনকে তুলে নিয়ে গেল। ওরা এক এক করে দেশের প্রশাসকদের সরিয়ে ফেলতে চাইছে।’’ জ়েলেনস্কির সন্দেহ হয়তো ভুল নয়। তবে দুর্বলতা, নাকি এটাও রণকৌশল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE