Advertisement
E-Paper

ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে এ বার জঙ্গি টার্গেট চিন

সন্ত্রাসবাদ এ বার জাঁকিয়ে বসছে চিনেও। কিন্তু সরকারি ব্যর্থতা ঢাকতে সে খবর প্রকাশ পেতে দিচ্ছে না বেজিং। তেমনই খবর সংবাদপত্র সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সূত্রে। চিনের পুলিশকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি এই খবর প্রকাশ্যে এনেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৩:৫০
পশ্চিম চিনে হওয়া একাধিক জঙ্গি হামলার একটি। বিছিয়ে রয়েছে শব।

পশ্চিম চিনে হওয়া একাধিক জঙ্গি হামলার একটি। বিছিয়ে রয়েছে শব।

সন্ত্রাসবাদ এ বার জাঁকিয়ে বসছে চিনেও। কিন্তু সরকারি ব্যর্থতা ঢাকতে সে খবর প্রকাশ পেতে দিচ্ছে না বেজিং। তেমনই খবর সংবাদপত্র সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সূত্রে। চিনের পুলিশকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি এই খবর প্রকাশ্যে এনেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, বেজিং কিন্তু সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই খবরকে খারিজ করে কোনও বিবৃতি দেয়নি।

চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার সম্মুখীন হয় চিনের বাইচেং কাউন্টি। অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়। জখম হন আরও ৫০ জন। আমেরিকার একটি রেডিও চ্যানেল প্রথম এই খবর প্রকাশ্যে আনে। কিন্তু, চিনের সরকার সে খবর তখন স্বীকার করেনি। আকসু এলাকার বাইচেং কাউন্টিতে এই জঙ্গি হামলা হয়েছিল বলে খবর। একটি কয়লা খনিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওই হামলায় যাঁদের মৃত্যু হয়, তাঁরা সবাই খনির কর্মী ছিলেন। মৃতেরা সকলেই অন্য প্রদেশ থেকে বাইচেং-এ কাজ করতে এসেছিলেন এবং তাঁরা হান সম্প্রদায়ভুক্ত। উইগুর জঙ্গিরাই এই হামলা চালায় বলে খবর। ওয়ার্ল্ড উইগুর কংগ্রেসের মুখপাত্র দিলসাত রেসিত-ও এই হামলার খবর স্বীকার করে নেন সে সময়। জঙ্গি হামলার জন্য চিনের কমিউনিস্ট সরকারের নীতিকে দায়ী করে রেসিত সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, উইগুর সম্প্রদায়ের প্রতি চিনে বঞ্চনা চলে। এই সম্প্রদায়ের স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকারকেও চিনা সরকার স্বীকৃতি দেয় না। আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে উইগুর আন্দোলনকারীরা একাধিক বার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু কমিউনিস্ট চিন বার বার জানিয়েছে, উইগুরদের প্রতি কোনও বঞ্চনা নেই। তারা জিহাদ ঘোষণা করে স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি করতে চাইছে। তা মেনে নেওয়া হবে না।

উইগুর জঙ্গিদের কার্যকলাপ যে আর চিনা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, সে কথা বেজিং এখন স্বীকার করতে নারাজ। তাই হামলা হওয়ার পর দু’মাস ধরে খবর চেপে রেখেছিল বেজিং। প্যারিসে জঙ্গি হামলার পর দিন চিনের সরকার এই খবর স্বীকার করে। সরকার পরিচালিত একটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বেজিং জানায়- প্যারিসে যখন এত বড় জঙ্গি হামলা, তখন চিনের পশ্চিম প্রান্তে জিনজিয়াং প্রদেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চিনের পুলিশ বাহিনী সাফল্য পেয়েছে। ৫৬ দিন ধরে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি হামলার পান্ডাদের খতম করা হয়েছে বলে ওই পোস্টে দাবি করা হয়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সেই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টও বেশি দিন রাখেনি চিনের সরকার। ডিলিট করে দেওয়া হয় কয়েক দিনের মধ্যেই।

তবে জঙ্গিদের খতম করা হয়েছে বলে যে দাবি বেজিং করছিল, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সূত্রেই খবর, বাইচেং কাউন্টির বিভিন্ন থানার পুলিশ আধিকারিকরা জঙ্গি হামলার খবর স্বীকার করেছেন। তবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযানের খবর সম্পর্কে তাঁরা কিছু বলতে পারেননি।

লাল রঙে চিহ্নিত এলাকাই জিনজিয়াং। এই বিশাল এলাকা ভেঙে

স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চাইছে জঙ্গিরা।

নিউ ইয়র্ক টাইমস সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইচেং‌ কাউন্টিতে হামলাকারী জঙ্গিদের খতম করা হয়েছে বলে যে দাবি চিন করছে, তা ভুয়ো। হামলার পর কিরঘিজস্তান আর কাজখস্তান সীমান্ত লাগোয়া তিয়ানশান অঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গা ঢাকা দিয়েছে জঙ্গিরা। সেখানে পৌঁছতেই নাকি পারেনি চিনের সেনা বা পুলিশ। উইগুর জঙ্গিরা আজকাল যে কোনও নাশকতা ঘটিয়েই তিয়ানশানের পর্বত কন্দর হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী কিরঘিজস্তান বা কাজাখস্তানে। ফলে জঙ্গিদের নাগাল পাচ্ছে না বেজিং। খবর চেপে রাখলেও, পশ্চিম চিন তথা তিয়েনশান, বাইচেং-সহ গোটা জিনজিয়াং এলাকায় ক্রমেই শিথিল হচ্ছে বেজিং-এর নিয়ন্ত্রণ। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই খবর ভারতের জন্যও উদ্বেগজনক। জম্মু-কাশ্মীরের পশ্চিম সীমান্তে এমনিতেই জঙ্গি কার্যকলাপ তুঙ্গে থাকে। উত্তর তথা উত্তর-পূর্বে লাদাখ সীমান্তে জঙ্গি কার্যকলাপ নেই। কিন্তু চিনের যে অঞ্চল জঙ্গি উপদ্রুত হয়ে উঠছে, তাতে তিয়ানশান বা জিনজিয়াং থেকে তিব্বত হয়ে লাদাখ পৌঁছনোর নতুন করিডর পেয়ে যাবে ভারত বিরোধী জঙ্গিরাও।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy