Advertisement
E-Paper

ফাঁসির সাজা, কারাদণ্ডও! কী কী ‘দোষ’ করেছেন হাসিনা, কোন ‘দোষে’ কী শাস্তি, ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়দানের সারাংশ জেনে নিন

আড়াই ঘণ্টা ধরে জুলাই গণহত্যা মামলার ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। শেখ হাসিনা, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ফাঁসির শাস্তি দেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে অপর অভিযুক্ত প্রাক্তন পুলিশকর্তা আল-মামুনের।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ২২:৩৩
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: রয়টার্স।

জুলাই গণহত্যার মামলায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসির শাস্তি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। পাঁচটি অভিযোগের ক্ষেত্রে মোট তিনটি ধারায় তাঁর দোষ প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং প্রাক্তন পুলিশকর্তা চৌধুরী আবদুল্লা আল-মামুনকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। তাঁরা ভারতে রয়েছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাই আসাদুজ্জামানকেও ফাঁসির শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দু’জনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। তবে আল-মামুনকে কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমা প্রদর্শন করেছে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মহম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর ট্রাইবুনাল। তিনি রাজসাক্ষী হয়েছেন। এখনও বাংলাদেশ পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁকে পাঁচ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার ঢাকার আদালতকক্ষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনান বিচারপতিরা। হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হলে আদালতকক্ষ হাততালিতে ফেটে পড়ে। জুলাই গণহত্যায় নিহতদের পরিবারকে এবং আহতদের আর্থিক সাহায্যের নির্দেশও দিয়েছে ট্রাইবুনাল।

মোট পাঁচটি অভিযোগ তোলা হয়েছিল হাসিনাদের বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে এই সংক্রান্ত মামলা চলছে। অভিযোগগুলি হল—

  • হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের সময় ছাত্র-যুবদের উপর পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্রপ্রয়োগ করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেড় হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগ তুলেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
  • এ ছাড়া, উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হাসিনার বিরুদ্ধে। দাবি, বিভিন্ন সময়ে তাঁর বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। ক্ষোভ বেড়েছে জনমানসে। সেই কারণেই ছাত্র-যুবরা সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন।
  • রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনা আন্দোলনধ্বস্ত বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক স্তরেও তার সমালোচনা হয়েছে। সেই হত্যার ঘটনাতেও অভিযুক্ত হাসিনা। অভিযোগ, তিনিই গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন।
  • ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছ’জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল বাংলাদেশের পুলিশ। অভিযোগ, হাসিনাই সেখানে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি নির্দেশ না দিলে পুলিশ গুলি চালাত না।
  • গণআন্দোলন চলাকালীন আশুলিয়ায় ছ’জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। অভিযোগ, সেই নির্দেশও দিয়েছিলেন হাসিনা।

তিন ধারায় দোষী সাব্যস্ত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল জানিয়েছে, মোট তিনটি ধারায় হাসিনার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমত, তিনি উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন, যা পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলে। দ্বিতীয়ত, আন্দোলন দমনের জন্য বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাসিনা। তৃতীয়ত, দমনপীড়ন আটকানোর ক্ষেত্রে পুলিশকে তিনি নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন। উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে হাসিনাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি দু’টি ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ

  • আরও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকার লোভে হাসিনা ছাত্র আন্দোলনকে অবহেলা করেছেন। ছাত্রদের কথা শোনার পরিবর্তে তাঁদের দমনের নির্দেশ দিয়েছেন। সংগঠিত হামলা করেছেন। এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
  • আন্দোলনকারী ছাত্রদের বার বার ‘রাজাকার’ বলে অপমান করেছেন হাসিনা। একাধিক অসম্মানজনক মন্তব্য করেছেন।
  • একাধিক আধিকারিকের সঙ্গে হাসিনার ফোনালাপ পড়ে শোনানো হয়েছে আদালতকক্ষে। কিছু ভিডিয়ো যাচাই করে দেখা হয়েছে। কোনওটিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহযোগে তৈরি নয়। সেগুলির সত্যতা প্রমাণিত।
  • অপরাধের জন্য হাসিনা কোনও ক্ষমা চাননি। অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। বরং তিনি আধিকারিকদের এবং ট্রাইবুনালের কর্মীদের হুমকি দিয়েছেন বার বার।
  • বিক্ষোভকারী ছাত্র আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে বার বার গুলি করেছে পুলিশ। একাধিক বার তাঁর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে। পরিবর্তনের জন্য চাপও দেওয়া হয়েছে।
  • বাংলাদেশে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে হাসিনার উপস্থিতিতে। প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা সত্ত্বেও তা ঠেকাতে পারেননি তিনি। এর দায় তৎকালীন প্রধানের উপরেই বর্তায়।

এর পর কী

হাসিনা ভারতে রয়েছেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় ভারত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে, জানিয়েছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী। তিনি আরও জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে হাসিনা আপিল করতে পারবেন না। কারণ, তিনি পলাতক। আপিল করার হলে রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে পুলিশ হাসিনাকে গ্রেফতার করতে পারলেও তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পেতেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারত সরকারকে ফের চিঠি দেবে ঢাকা।

Sheikh Hasina Bangladesh Muhammad Yunus International Tribunal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy