Advertisement
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bangladesh Unrest

বাংলাদেশের ‘ভবিষ্যৎ’ তাঁর কাঁধে, কে এই সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ়-জ়ামান? কী ভাবে হল তাঁর এই উত্থান?

১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ওয়াকার। ২৩ জুন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান হয়েছেন তিনি। তাঁর কার্যকালের মেয়াদ তিন বছর। এর আগে এই পদে ছিলেন জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ।

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ়-জ়ামান।

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ়-জ়ামান। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৪ ২০:১০
Share: Save:

গায়ে সেনার উর্দি। চোখমুখে অদ্ভুত এক আত্মবিশ্বাস। সোমবার দুপুরের পর থেকে অভিভাবকহীন দেশের দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। তিনি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ়-জ়ামান। শেখ হাসিনাহীন বাংলাদেশকে ‘কন্ট্রোলে’ রাখতে যিনি ক্যামেরার সামনে এসেছেন। খানিক অভিভাবকীয় ঢঙে আর্জি জানিয়েছেন তাঁর উপর ভরসা রাখার। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন সেনাপ্রধান। সরকারে সেনাবাহিনীর কী ভূমিকা থাকবে তা নিয়ে অবশ্য এখনও ধোঁয়াশা। তবে ওয়াকারের আত্মবিশ্বাসী বাচনভঙ্গি যেন ইঙ্গিত দিচ্ছে গদি যাঁরই হোক, নিয়ন্ত্রণ থাকবে তাঁরই হাতে। ওয়াকার সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়ও বটে।

কে এই ওয়াকার? সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৬ সালে ঢাকায় জন্ম ওয়াকারের। তখনও বাংলাদেশ স্বপ্ন মাত্র। ‘বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি’ (বিএমএ)-তে প্রশিক্ষণ। পড়াশোনা মিরপুরের ‘ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ’-এ। ইংল্যান্ডের ‘জয়েন্ট সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ’-এও প্রশিক্ষণ নেন তিনি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট বলছে, সে দেশের ‘ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’-তে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি লাভ করেন ওয়াকার। এর পর ব্রিটেনের প্রখ্যাত ‘কিংস কলেজ, লন্ডন ইউনিভার্সিটি’ থেকে প্রতিরক্ষা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন।

বিয়ে করেন জনৈকা সারাহনাজ কমলিকা জ়ামানকে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কমলিকা বাংলাদেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুড়তুতো বোন। তাঁর বাবা জেনারেল মহম্মদ মুস্তাফিজ়ুর রহমানও ছিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন মুস্তাফিজ়ুর।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে আরও খবর, ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ওয়াকার। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিদূত হয়ে সফরও করেছেন। চলতি বছর ২৩ জুন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান পদে উন্নীত হন। তাঁর কার্যকালের মেয়াদ তিন বছর। এর আগে এই পদে ছিলেন জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। সেনাপ্রধানের দায়িত্ব সামলানোর আগে ছ’মাস বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান ছিলেন তিনি। সে সময় গোয়েন্দা বিভাগের কাজকর্মেও নজর রাখতেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিস্থাপন অভিযানে বাংলাদেশের কী ভূমিকা হবে, তা-ও স্থির করতেন ওয়াকারই। তারও আগে বাংলাদেশের পদাতিক বাহিনী, স্বাধীন পদাতিক ব্রিগেড এবং পদাতিক বাহিনীর একটি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন। সেনার সদর দফতরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন ওয়াকার।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে শেখ হাসিনার প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ছিলেন। দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কৌশল নিয়ে তাই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধহস্ত। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট বলছে, তাদের আধুনিকীকরণে অবদান রয়েছে ওয়াকারের। ২০১৪ সাল থেকে টানা তিন বছর বাংলাদেশের বিজয় দিবস প্যারেডের কমান্ডার ওয়াকারকে ‘সেনা গৌরব’(এসজিওপি) এবং ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি সার্ভিস’ পদকও দেওয়া হয়েছে।

এই ওয়াকারই হাসিনার ছেড়ে যাওয়া দেশের দায়িত্ব কার্যত নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। প্রায় ন’মিনিটের সাংবাদিক বৈঠকে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। তার আগে তিনি বাংলাদেশের বিশিষ্টজন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সাংবাদিক বৈঠকে সেনাপ্রধানের আশ্বাস, ‘‘আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি। এখনই আশাহত হবেন না। আপনাদের যত দাবি আছে, তা আমরা পূরণ করব এবং দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব।’’ আন্দোলন চলাকালীন হত্যার বিচারের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। প্রথম সুযোগেই যে হারে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন, আগামী দিনে বাংলাদেশের নয়া ‘রূপকার’ হিসাবে ওয়াকারের নাম উচ্চারিত হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই বলে মত এক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

army Army Chief
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE