Advertisement
E-Paper

স্টিং অপারেশন দেখিয়ে দিল, পাকিস্তানেই বহাল তবিয়তে আছেন দাউদ

ডি-১৩, ব্লক ৪, ক্লিফটন, করাচি। এই ঠিকানা কার? কে থাকেন তিন মিটার উঁচু পাঁচিলে ঘেরা বিশাল কম্পাউন্ডটায়। মেইন গেট যে রাস্তায়, সেই রাস্তার দুই মুখেই পুলিশের ব্যারিকেড। একের পর এক কংক্রিটের ব্লক ফেলে রাখা হয়েছে ইতিউতি। ২৪ ঘণ্টা পাঁচিল ঘেরা কম্পাউন্ডটাকে ঘিরে রেখেছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ১৫:৩৪
এই সুবিশাল কম্পাউন্ডেই লুকিয়ে দাউদ ইব্রাহিম?

এই সুবিশাল কম্পাউন্ডেই লুকিয়ে দাউদ ইব্রাহিম?

ডি-১৩, ব্লক ৪, ক্লিফটন, করাচি।

এই ঠিকানা কার? কে থাকেন তিন মিটার উঁচু পাঁচিলে ঘেরা বিশাল কম্পাউন্ডটায়। মেইন গেট যে রাস্তায়, সেই রাস্তার দুই মুখেই পুলিশের ব্যারিকেড। একের পর এক কংক্রিটের ব্লক ফেলে রাখা হয়েছে ইতিউতি। ২৪ ঘণ্টা পাঁচিল ঘেরা কম্পাউন্ডটাকে ঘিরে রেখেছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।

করাচির ধনী এলাকা ক্লিফটনে একাধিক ভিভিআইপি’র বাস। কোনওটা সিন্ধ প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। কোনও পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র তথা প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারপার্সন বিলাবল ভুট্টোর বাংলো। সবক’টি ভিভিআইপি বাংলোকে ঘিরেই নিরাপত্তার বেড়াজাল রয়েছে। কিন্তু ডি-১৩, ব্লক ৪-এর কম্পাউন্ডটাকে ঘিরে নিরাপত্তার যেমন বাড়াবাড়ি, তা আর কোথাও নেই। অথচ স্পষ্ট করে পাক প্রশাসন কিছুতেই জানায় না ওই বাংলোর বাসিন্দা কে।

ওই বাংলো তথা কম্পাউন্ডের বাসিন্দার নাম দাউদ ইব্রাহিম। ভারতের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের মূল পান্ডা।

২৩ বছর ধরে পাকিস্তান মিথ্যা বলে যাচ্ছে। নিশ্ছিদ্র পাহারা, পুলিশের ব্যারিকেড, উঁচু পাঁচিল আর রহস্যময়তা দিয়ে ঘেরা ওই কম্পাউন্ডে ঢেকে রাখা হয়েছে সেই ২৩ বছরের সেই মিথ্যাচারকেই। করাচির বাসিন্দাদের কাছে অবশ্য কোনও রহস্য নেই। সবাই জানেন দাউদ ইব্রাহিম তাঁদের শহরেই থাকেন। ক্লিফটন এলাকার যে কোনও প্রান্তে পথচলতি লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেই দাউদের বাংলোয় পৌঁছনোর পথনির্দেশ পাওয়া যায়। একটি সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে সেই ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে।

স্টিং অপারেশনে কি দেখা গিয়েছে? দেখা গিয়েছে, অ্যাবটাবাদে লাদেনের বাড়িটাকে ঘিরে রাখা হয়েছিল যে রকম উঁচু পাঁচিল দিয়ে, এই বাড়িটাও তেমন ভাবেই ঘেরা। নিরাপত্তার অতন্দ্র বেড়াজালও সেই রকমই। এত বড় এলাকা নিয়ে কম্পাউন্ডটা তৈরি হয়েছে যে ওই কম্পাউন্ডের মধ্যে যে কোনও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের গোটা চারেক সৌখিন বাংলো ঠাঁই পেয়ে যাবে। যে প্লটে দাউদের কম্পাউন্ড, তার সামনের এবং পাশের প্লট দু’টি খালি রাখা হয়েছে। কোনও বাড়ি করতে দেওয়া হয়নি ওই দুই প্লটে। একটু এগিয়ে গেলে অষ্টম শতাব্দীর এক সুফি ধর্মগুরুর মাজার। তার পাশ দিয়ে গিয়েছে শাহ রাহ্‌ ই ফিরদৌসি— করাচির এক প্রান্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তের সংযোগকারী এক্সপ্রেসওয়ে। রাস্তার অন্য পারে নয়নাভিরাম ক্রিকেট স্টেডিয়াম।

স্টিং অপারেশন যাঁরা করেছেন, তাঁরা অন্য একটি বাংলোর নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে প্রথমে কথা বলেন। নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘‘দাউদ ইব্রাহিমের বাংলোটা কোন দিকে?’’ নিরাপত্তা রক্ষী আঙুল দেখিয়ে পথনির্দেশ দেন এবং বলেন, ‘‘এই তো, কাছেই।’’

স্টিং অপারেশন চালিয়েছেন যে সাংবাদিক, তিনি ক্লিফটন এলাকায় দাউদের বাংলোর রাস্তা জানতে চাওয়ার সময় লোকজনকে বলছিলেন, এক ঠিকাদার তাঁর থেকে টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছেন না। সেই ঠিকদার দাউদের বাড়িতে কাজ করছেন বলে তিনি খবর পেয়েছেন। তাই ঠিকাদারকে খুঁজতে বেরিয়েছেন।

আরও পড়ুন:

উলার লেকে মোতায়েন ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’, ঘুম উড়েছে জঙ্গিদের

এক আফগান শরণার্থীর কাছেও দাউদের বাড়ির পথনির্দেশ জানতে চান ছদ্মবেশী সাংবাদিক। আফগানিস্তান থেকে করাচিতে আসা সেই শরণার্থীও জানেন, দাউদ ইব্রাহিম কোথায় থাকেন। তিনি বুঝিয়ে দেন, কোন রাস্তায় ঢুকতে হবে এবং কী ভাবে চিনতে হবে বাড়িটা। তিনি সাংবাদিককে জানান, কম্পাউন্ডের ভিতরেই একটি মসজিদ তৈরি করিয়েছেন দাউদ। বাইরে থেকেই মসজিদের গম্বুজটা দেখা যাবে। ওই গম্বুজ দেখেই চিনে নেওয়া যাবে ঠিকানা।

দাউদের বাড়ির গেটে নিরাপত্তা রক্ষীরাও অস্বীকার করলেন না যে দাউদ ওই বাড়িতে থাকেন। ছদ্মবেশী সাংবাদিককে নিরাপত্তা রক্ষীরা জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কাকে খুঁজছেন?’’ সাংবাদিক বলেন, ‘‘আমার কাছ থেকে এক ঠিকাদার টাকা নিয়েছেন। তিনি দাউদ ইব্রাহিমের বাড়িতে এখন কাজ করছেন শুনলাম।’’ রক্ষীরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘ঠিকাদারের নাম কী?’’ সাংবাদিক বললেন, ‘‘লতিফ।’’ রক্ষীরা জানালেন, ‘‘এই বাড়িতে লতিফ নামের কেউ কাজ করছেন না।’’ রক্ষীরা আরও জানালেন, ওই বাড়িতে এখন কোনও কাজই চলছে না। রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সব কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।

দাউদকে হাতে পেতে ভারত যে খুব তৎপর হয়েছে, পাকিস্তান সে কথা জানে। সেই কারণেই দাউদের নিরাপত্তা আগের চেয়েও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই বন্ধ রাখা হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের কাজও। কিন্তু মিথ্যাচার চাপা থাকছে না। দাউদের আস্তানাও আর গোপন রইল না।

Karachi Pakistan Dawood Ibrahim Sting Operation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy