Advertisement
E-Paper

কেন ‘হাসান’? প্রাক্তন পুলিশকর্তাই দেড় ঘণ্টা আটক নিউইয়র্কে

প্যারিস থেকে উড়ে এসে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পা ছোঁয়াতেই সেই অবসর নেওয়া মার্কিন পুলিশকর্তা বুঝে গেলেন, তাঁর এত দিনের দেখা আমেরিকা একেবারেই বদলে গিয়েছে। তিনি পা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকায়।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ১৬:৪৯
সেই হাসান অ্যাডেন।

সেই হাসান অ্যাডেন।

অতগুলি বছর কাটিয়েছেন আমেরিকায়। মার্কিনমুলুকে পুলিশকর্তার দায়িত্ব সামলেছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু কেউই তাঁর ধর্ম, জাতপাত নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেননি। কোনও দিন। আইনরক্ষা করে গিয়েছেন মাথা উঁচু করে।

প্যারিস থেকে উড়ে এসে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পা ছোঁয়াতেই সেই অবসর নেওয়া মার্কিন পুলিশকর্তা বুঝে গেলেন, তাঁর এত দিনের দেখা আমেরিকা একেবারেই বদলে গিয়েছে। তিনি পা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকায়। যেখানে তিনি নর্থ ক্যারোলিনা পুলিশের প্রাক্তন প্রধান নন। নন ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়া পুলিশের উপ-প্রধানও। মার্কিন নন। নন কারও স্বামী, কারও বাবা, কারও ছেলে। তিনি এক জন অভিবাসী। সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় আইডেন্টিটি, পরিচয়! আরে যেহেতু তাঁর নাম হাসান অ্যাডেন, তাই তিনি যত বছর ধরেই মার্কিন পুলিশবাহিনীতে চাকরি করুন না কেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকায় তিনি আপাদমস্তক সন্দেহভাজন! যাঁর ওপর বছরের পর বছর ধরে আইনরক্ষার ভার ছেড়ে দিয়েছিল নর্থ ক্যারোলিনা ও ভার্জিনিয়া প্রদেশের প্রশাসন, নি‌উইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে নামার পর একটা ঘরে আটকে রেখে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে সেই প্রাক্তন মার্কিন পুলিশকর্তারই দেহতল্লাশি করা হল। তল্লাশির নামে তাঁকে চূড়ান্ত হেনস্থা করা হল। প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার করে দেওয়া হল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা হল, প্রকাশ্যে, একগাদা লোকের সামনে। দিনকয়েক আগে। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দেশে! নিউইয়র্কের বিমানবন্দরে সেই অভূতপূর্ব ঘটনাটা ঘটালেন আমেরিকার কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশন অফিসাররা। ৫২ বছর বয়সী অ্যাডেন দীর্ঘ জেরা-তল্লাশির পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে অবশ্য কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশন অফিসের তরফে এটিকে ‘ব্যতিক্রমী’ ঘটনা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মার্কিন পুলিশে দীর্ঘ দিন চাকরি করেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই কারও কাছে তাঁর ঠিকোজি-কোষ্ঠী গোপন রাখা সম্ভব নয়। রাখেনওনি হাসান অ্যাডেন। চাকরিতে তাঁর প্রোমোশনও হয়েছিল, যেমন হয়। ইতালীয় মা আর সোমালীয় বাবার সন্তান হাসানের জন্ম হয়েছিল ইতালিতে। তাঁর বয়স যখন ১০ বছর, তখনই বাবা, মায়ের হাত ধরে চলে যান আমেরিকায়। সেখানেই স্কুল, কলেজ, চাকরি, বিয়ে, পারিবারিক জীবন, সন্তান প্রতিপালন- সব কিছু। জন্ম ইতালিতে হলেও সে দেশের নাগরিকত্ব রাখেননি। মার্কিন পাসপোর্ট বহু দিনের পুরনো। আর তা নিয়ে বহু বার গিয়েছেন এ দেশ, ও দেশে। ৪২ বছর ধরে মার্কিন নাগরিক হয়ে একের পর এক নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তার পর এই সে দিন তিনি মায়ের ৮০ তম জন্মদিনে তাঁর সঙ্গে থাকবেন বলে প্যারিস থেকে তড়িঘড়ি উড়ে এসে কেনেডি বিমানবন্দরে নেমে জানতে পারলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জমানায় তিনি আমেরিকায় অত্যন্ত সন্দেহভাজন। যেহেতু তাঁর নামের গোড়ায় রয়েছে ‘হাসান’!

ক্ষোভ-অসন্তোষ চেপে রাখেননি হাসান অ্যাডেন। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই অভিজ্ঞতা আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলেছে। যে দেশটা সবাইকে নিয়ে চলার জন্য মহত্ব অর্জন করেছিল, যে-দেশটাকে আমার দেশ বলে আমি গর্ব করতাম, সেই দেশটার ভবিষ্যতে যে কী রয়েছে, বুঝতে পারছি না! উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছি, দেশেই আছি তো? আছি কি নিজভূমেই? কে বলবে আমেরিকা স্বাধীন, মুক্তমনা, সাহসীদের দেশ!’’

আরও পড়ুন- সুখী দেশের তালিকায় এক নম্বরে নরওয়ে, ভারত ১২২!

ক্ষোভে ফুঁসছেন তিনি। ট্রাম্প জমানায় তাঁকেও ‘সন্ত্রাসবাদী’ ভাবা হচ্ছে, যেহেতু তাঁর নামের গোড়ায় রয়েছে ‘হাসান’! ‘হাসান’ হওয়াটাই যেন এখন সবচেয়ে বড় অপরাধ হালের আমেরিকায়!

অ্যাডেন লিখেছেন ফেসবুকে, ‘‘অথচ দিনকাল এমন ছিল না কিছু দিন আগেও। নতুন প্রশাসন আসার আগে আমি মাঝে-মধ্যেই হোয়াইট হাউসে যেতাম, বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিতে। জাতীয় পুলিশ নীতি সংস্কার নিয়ে আমি বহু পরামর্শ দিয়েছি তখনকার প্রশাসনকে। সেই আমাকেই যদি এমন ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়, তা হলে অন্যদের অবস্থা কী হবে? এই রকম অবৈধ প্রশাসনিক কাজকর্মের হাত থেকে তো কেউই রেহাই পাবেন না! আমাকে বলা হয়েছিল, ওই প্রশ্নগুলি যদি আমি ঠিক ভাবে উত্তর দিতে পারি, তা হলে আমাকে দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে। ভাবুন, আমার নিজের দেশে আমাকে ওই ভাবে ঢুকতে হবে!’’

৪২ বছর আমেরিকায় থাকার পর হাসতে ভুলে গিয়েছেন হাসান!

US US Airport Police Detained
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy