ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা সরাসরি অস্ত্র ধরবে কি না, সে বিষয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবারই এ কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে হোয়াইট হাউসের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছিল, ‘‘ইরানের সঙ্গে বোঝাপড়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমি সে পথে হাঁটব কি না, সে বিষয়ে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, দু’সপ্তাহ তো দূর, ট্রাম্পের সেই ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াল আমেরিকা।
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে ইরানে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি আমেরিকার। ট্রাম্প নিজে ট্রুথ সোশ্যালে দাবি করেছেন, ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছেন তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, দুর্ভেদ্য ফোরডো পরমাণুকেন্দ্রই ছিল তাঁদের মূল নিশানা। আর সেই পরমাণুকেন্দ্রে জোরালো হামলা চালানো হয়েছে। আর এটা যে তাঁদের দ্বারাই সম্ভব, সেটাও গর্বের সঙ্গে দাবি করেছেন ট্রাম্প। এই হামলা চালাতে কী কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা-ও উল্লেখ করেছেন। আর হামলার সেই মুহূর্তকে আমেরিকা এবং ইজ়রায়েলের ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলেও দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার এই হামলায় নানা মহলে প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করেছে, তা হলে ট্রাম্প যে দু’সপ্তাহ সময়ের কথা বলেছিলেন, সেটা কি কোনও ‘গিমিক’? দু’সপ্তাহের সময়ে চেয়েও তার আগেই কেন ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলায় নেমে পড়তে হল আমেরিকাকে, এই প্রশ্নও জোরালো হতে শুরু করেছে। তা হলে কি ট্রাম্প বুঝে গিয়েছেন, ধমকে চমকে ইরানকে পথে নিয়ে আসা যাবে না? তাই আর সময় নষ্ট না করেই সরাসরি হামলায় নেমে পড়লেন? বার বারই ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পরমাণু কর্মসূচি থেকে নিজেদের নিরস্ত রাখতে। কিন্তু ইরান সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সেটা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তারা আলোচনায় বসতে রাজি, এ কথাও জানায়। তার পরই সুইৎজ়ারল্যান্ডের জেনেভায় ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠকে বসতে সম্মত হয় ইরান। তেহরান স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, সমঝোতা নয়, আলোচনায় রাজি তারা। ইউরোপের দাবি ছিল, পরমাণু অস্ত্র বিসর্জন দিতেই হবে ইরানকে। ইরানও পাল্টা জানায়, ইজ়রায়েল হামলা বন্ধ না করলে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবে না তারা। ঘটনাচক্রে, সেই পরমাণু বৈঠক ‘ব্যর্থ’ হতেই শনিবার আরও আগ্রাসী হল ইজ়রায়েল!
ইরানের সঙ্গে ইজ়রায়েলের সংঘাত যখন চরমে, আন্তর্জাতিক মহলে একটাই আশঙ্কা ঘোরাফেরা করছিল, আমেরিকা কি এই সংঘাতে সরাসরি নিজেকে জড়াবে? ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়েও দু’দেশের এই সংঘাত থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই চলছিল আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে ইরানকে মোক্ষম জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি বার বার শোনা গেলেও সরাসরি সংঘাতে যাওয়ার বিষয়ে খুব বেশি কিছু ইঙ্গিত দেননি ট্রাম্প।
ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করে যদি কোনও ভাবে তাদের নতিস্বীকার করতে বাধ্য করা যায়, সেই রাস্তাতেই হাঁটছিল আমেরিকা। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই যে নতিস্বীকার করার মানুষ নন, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি এবং ইজ়রায়েলের মুহুর্মুহু হামলার মুখে পড়েও সেই বার্তাই দিচ্ছেন তিনি। ইরানকে বাগে আনতে না পেরে এ বার সরাসরি সংঘাত থেকে নিজেদের গা আর বাঁচিয়ে রাখতে পারল না আমেরিকা। ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’— এই রাস্তা নিয়েও যখন কাজ হচ্ছে না, শেষমেশ স্থানীয় সময় শনিবার রাতে ইরানে সরাসরি হামলা শুরু করল আমেরিকা।