ধ্বংসস্তূপ: ভেঙে পড়েছে ছাদ। মঙ্গলবার নোত্র দামের ভিতরে। রয়টার্স
বিষণ্ণ এক সোমবারের বিকেলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্যারিসের এক অরণ্যের ইতিহাস। ‘দ্য ফরেস্ট’— এই নামেই নোত্র দাম গির্জাকে ডাকতেন স্থানীয়েরা।
নোত্র দামের ওয়েবসাইট থেকে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫২ একরের ওক গাছের জঙ্গল কেটে সাফ করে বানানো হয়েছিল এই গির্জা। অন্দরসজ্জার মূল কাঠামো তৈরি করতে লেগেছিল অন্তত ১৩০০টি কাঠের গুঁড়ি। গুঁড়িগুলির প্রত্যেকটিতে সূক্ষ্ম কারুকাজ খোদাই করা। যে কারণে এই গির্জার নাম ‘দ্য ফরেস্ট’। জানা যায়, সুউচ্চ ওই কাঠামো তৈরিতে যে গাছগুলি ব্যবহার
করা হয়েছিল সেগুলির বয়স ছিল অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ বছর। অর্থাৎ ৮০০-৯০০ শতকে জন্ম গাছগুলির।
গির্জাটি একশো মিটার লম্বা। প্রায় দশ মিটার উঁচু। ‘নেভ’ বা মাঝের অংশের প্রস্থ সবচেয়ে বেশি। প্রায় ১৩ মিটার। গথিক রীতিতে তৈরি এই ধরনের গির্জার একটা বৈশিষ্ট হল, লম্বাটে গঠনের মাঝবরাবর একটি অংশ (ট্রানসেপ্ট) দু’দিকে বাহুর মতো বেরিয়ে থাকে। উপর থেকে দেখলে মনে হবে যেন একটা ক্রুশ। নোত্র দামের ওয়েবসাইট থেকে জানা গিয়েছে, মধ্যযুগীয় গির্জাটির বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা ভাবে তৈরি করে জোড়া হয়েছে। প্রথমে ভিত ও দেওয়াল। পরে ছাদটি আলাদা করে বানিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে। এই ছাদের নকশাই সবচেয়ে তাক লাগানো। গথিক রীতিতে তৈরি এই ছাদটি কাঠ দিয়ে কোনাকুনি বেশ খানিকটা উঁচু করা। কাঠগুলি আকাশের দিকে ৫৫ ডিগ্রি কোণে হেলানো। যার মোট ওজন প্রায় ২১০ টন। ছাদ শক্তপোক্ত করতেই ওকের গুঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল। সোমবারের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে এই অংশ। ফলে পুরো ছাদই ধসে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধসে যায় ছাদের শঙ্কু আকৃতির স্পায়ার অংশটি। ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দু’ধারের কয়্যার ও মাঝের নেভ অংশ। তবে গির্জার যে মিনার দুটি প্রায় ৬৯ মিটার লম্বা, সেই ‘বেল টাওয়ার’ দুটি বেঁচে গিয়েছে আগুনের হাত থেকে। প্যারিসের আইফেল টাওয়ার তৈরি হওয়ার আগে পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল প্যারিসের সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অন্য যে কোনও গথিক নির্মাণের তুলনায় লম্বা, চওড়া, সুউচ্চ নোত্র দাম স্থাপত্য দুনিয়ার বিস্ময়। চারটি তলায় তৈরি। বিশাল বাড়ির তিন তলায় কারুকাজ খচিত গোল ছাদ বা অকুলি। যা ভিতর থেকে দেখা যেত। তার উপরে অংশেই স্পায়ার। সদর থেকে বিস্তৃত মাঝখান পর্যন্ত নেভ অংশের
ছাদে পাখামেলা প্রজাপতির মতো নকশা কাটা। ওই নকশা অপেক্ষাকৃত পাতলা দেওয়ালের উপরে ছাদটাকে পোক্ত ভাবে ধরে রাখে। গির্জার দেওয়াল অনন্য নকশা ও রঙিন কাচে সাজানো। তবে বেশ কিছু রঙিন কাচ ও চূড়া পরবর্তী কালে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। কালগর্ভে হারিয়ে গিয়েছে অনেক কারুকাজ। ফরাসি বিপ্লবের সময়ে এই গির্জা খাবার রাখার ভাঁড়ার হিসেবে ব্যবহার করা হত। তখন কয়্যারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy