সুনয়না ডুমালা।
মাস ছয়েক আগের কথা। কানসাসের একটি বারে এক আততায়ীর গুলিতে খুন হয়েছিলেন স্বামী শ্রীনিবাস কুচিভোটলা। তদন্তে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, জাতিবিদ্বেষেই হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু সুনয়না তখনও জানতেন না, স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে-সঙ্গেই তাঁর ঘরবাড়ি, কর্ম সংস্থান সবই হারানোর উপক্রম হবে।
স্বামীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে ভারতে গিয়েছিলেন তরুণী। কিন্তু তার আগেই জেনে গিয়েছিলেন, আদৌ আমেরিকায় ফিরতে পারবেন কি না, ঠিক নেই। কারণ তাঁর অভিবাসন ব্যবস্থা বাতিলের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল তখনই। শেষমেশ যদিও পাশে পান কানসাসের রিপাবলিকান জনপ্রতিনিধি কেভিন ইয়োডারকে। খবরটা কানে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। সুনয়না ভারতে যাওয়ার পরপরই নিজের মতো করে বিষয়টা নিয়ে পদক্ষেপ করেন তিনি। কেভিনের সাহায্য ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে শেষমেশ এক বছরের ‘ওয়ার্কিং’ ভিসা পেয়েছেন সুনয়না। যে মার্কেটিং সংস্থায় চাকরি করতেন, সেখানে আপাতত কাজও চালিয়ে যেতে পারবেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইরমা-আতঙ্ক, ফ্লোরিডা ছাড়লেন ৫৬ লক্ষ মানুষ
সুনয়না ডুমালাও ভারতীয় নাগরিক। বছর দশেক হল মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা, সেই যখন তিনি মিনেসোটা কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন, সেই থেকে। ২০১২ সালে বিয়ে করেন টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শ্রীনিবাসকে। স্বামীর এইচ-১ ভিসায় গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদনও করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শ্রীনিবাসের মৃত্যুর সঙ্গে-সঙ্গেই গ্রিন কার্ডের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। সুনয়না এর পর স্থানীয় একটি সংবাদপত্রকে ইমেল করেন, ‘‘ওই ভয়ঙ্কর রাতটাতে শুধু আমার স্বামীর মৃত্যুই হয়নি, আমার অভিবাসীর অস্তিত্বটুকুও চুকে গিয়েছে।’’ মার্কিন মুলুকে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য এ দেশের বন্ধুবান্ধব, বিশেষ করে কেভিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুনয়না। কেভিন অবশ্য বলছেন, এখনই খুশি হওয়ার মতো কিছু হয়নি। সুনয়নাকে ভারতে ফেরত পাঠানোর গোটা প্রক্রিয়াটাই আটকাতে হবে। এ দেশে স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ‘ডাকা’ প্রকল্প (ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস) বাতিল করেছেন, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আট লক্ষ যুবক-যুবতীর ভবিষ্যৎ, ঠিক তখন তাঁরই দলের প্রতিনিধির এই পদক্ষেপে হইচই পড়ে গিয়েছে।
২০১২ সালে ডাকা প্রকল্পটি চালু করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আইনের ফাঁক গলে যে সব নাবালক (যাদের বয়স ১৬-র নীচে) বাবা-মায়ের সঙ্গে বা অন্য কোনও ভাবে মার্কিন মুলুকে এসে পড়েছে, তাদের সে দেশে বসবাস, পড়াশোনা ও ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন ওবামা। এমন সব বেআইনি অভিবাসী (ড্রিমার্স) যাঁরা আমেরিকায় বড় হওয়ার ‘স্বপ্ন’ দেখেছিলেন, তাঁরা জানেন না ঠিক কী অপেক্ষা করে আছে তাঁদের জন্য। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে মার্কিন কংগ্রেস।
কেভিনের দাবি, আইন মেনে মার্কিন মুলুকে আসা, ভারত-চিন কিংবা অন্যান্য দেশের সুশিক্ষিত অভিবাসীদের স্থায়ী-বাসিন্দার মর্যাদা দেওয়া হোক। তিনি টুইটও করেন, ‘‘ডাকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আমাদের ভগ্নপ্রায় অভিবাসন ব্যবস্থার অন্য একটা দিক আমি চিহ্নিত করলাম। অন্তত ১০ লক্ষ অভিবাসী আইনি পথে আমেরিকা এসেছেন। তাঁরাও স্বপ্ন দেখছেন। তাঁদের প্রতি অবিচার হোক চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy