Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আমরা শুধু ‘মিষ্টি সোনা’ নই, বলছেন লেবাননের মেয়েরা

শুধু কর ব্যবস্থা নয়, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে ঢেলে সাজানোর ডাক দিয়েই পথে নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। যাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ কমবয়সি মেয়েরা।

লেবাননে বিক্ষোভরতা মেয়ে।

লেবাননে বিক্ষোভরতা মেয়ে।

সংবাদ সংস্থা
বেরুট শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৯
Share: Save:

এই প্রথম স্বাধীনতা দিবসে দু’টি পৃথক মিছিল দেখল লেবানন। রাজধানী বেরুটে প্রথামাফিক সরকারি সামরিক কুচকাওয়াজ তো ছিলই, তবে তার থেকে অনেক বড় মিছিল করেছিলেন দেশের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা। শহরের ‘শহিদ স্কোয়ার’-এর সেই মিছিলে শুক্রবার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। সামরিক কুচকাওয়াজের আদবকায়দা ছিল না সেই মিছিলে। শুধু ছিল— মুষ্টিমেয় ‘ধনী ও অভিজাতের’ হাত থেকে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে মুক্ত করার ডাক।

এক লাফে আয়করের বিপুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৭ অক্টোবর থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে লেবাননে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই বিক্ষোভ অনেক বড় মাপের আন্দোলনের চেহারা নেয়। শুধু কর ব্যবস্থা নয়, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে ঢেলে সাজানোর ডাক দিয়েই পথে নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। যাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ কমবয়সি মেয়েরা। স্বাধীনতা দিবসের সমাবেশেও সামনের সারিতে ছিলেন দেশের তরুণীরাই।

এই বিক্ষোভরত মেয়েদের উদ্দেশে প্রতিবেশী সব রাষ্ট্র থেকে উড়ে আসতে শুরু করেছে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিক্ষোভরতাদের উদ্দেশে লাগাতার যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে। সেই সব সংবাদমাধ্যমের মধ্যে একদম সামনের সারিতেই রয়েছে সৌদি আরবের কয়েকটি দৈনিক। লেবাননের মহিলা আন্দোলনকারীদের ‘ক্লোজ় আপ’ দিয়ে সেই সব দৈনিকে খবরের শিরোনাম— ‘সব সুন্দরীরাই রাস্তায় নেমেছেন’ বা ‘শুধু সুন্দর নয়, বদমেজাজিও’। ছবির ক্যাপশনে ব্যবহার করা হয়েছে ‘মিষ্টি সোনা’, ‘নেকু-পুষু’ ইত্যাদি শব্দবন্ধ।

শুধু সংবাদমাধ্যমই নয়, পশ্চিম এশিয়ার ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা করেন এমন বহু পুরুষই লেবাননের মেয়েদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ চালিয়ে যাচ্ছেন। মিশরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ছেলে আলা মোবারক যেমন তাঁদের দেশে ২০১১-র গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন, ‘‘তখন যদি এই সব সুন্দরী বিপ্লবে অংশ নিতেন, তা হলে আমি আর আমার ভাইও বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দিতাম!’’ মিশরের ধনকুবের শিল্পপতি নাগিব সাওয়ারিসের আবার মন্তব্য, ‘‘সব সময়েই টিভিতে লেবাননের বিক্ষোভ দেখছি। শুধু স্ত্রী ঘরে ঢুকলেই চট করে চ্যানেল পাল্টে দিই।’’

সমাজতাত্ত্বিকেরা বলছেন, লেবাননের বিক্ষোভরত তরুণীদের এ ভাবে শুধু ‘মেয়ে’ তকমা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে এক দিকে যেমন আরব পুরুষের লিঙ্গবৈষম্যমূলক মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে, তেমনই বোঝা যাচ্ছে, লেবাননের মেয়েরা যে ভাবে ‘স্বাধীনতা’ উপভোগ করেন, তা নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পশ্চিম এশিয়া। হাজারে হাজারে মেয়েরা পথে নামছেন, ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গলা ফাটাচ্ছেন, এটাই মেনে নিতে পারছেন না পশ্চিম এশিয়ার পুরুষ। সেই অস্বস্তি থেকেই আন্দোলনের দিকটিকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু মেয়েদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে মন্তব্যে ব্যস্ত থেকেছেন তাঁরা।

অবশ্য অন্যান্য দেশের মহিলাদের পাশে পেয়েছেন লেবাননের মেয়েরা। বেরুটের বিক্ষোভকারীদের বার্তা দিয়ে মিশরের এক মহিলা টুইট করেছেন, ‘‘আমাদের দেশের ছেলেরা আপনাদের পোশাক দেখতে ব্যস্ত। আপনারা বিপ্লব চালিয়ে যান।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক সৌদি মহিলার মন্তব্য, ‘‘পর্ন ছবির বাইরে মেয়েদের কী রকম দেখতে, জানেই না সৌদি পুরুষ। আপনারা সেটাই তাদের দেখিয়ে দিলেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lebanon Women West Asia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE